তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সাইবার অপরাধ। এমতাবস্থায় নাগরিকদের ডিজিটাল সুরক্ষার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণীত হয়েছে। মূলত নাগরিকের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে ২০১৮ সালে আইনটি প্রণীত হয়। এ আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধ, অপরাধের দণ্ড এবং বিচার পদ্ধতি নিয়ে লিখেছেন ছগির আহমেদ।
★ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮
# ধারা-২(১)(ক); সাইবার আপীল ট্রাইব্যুনাল: “আপীল ট্রাইব্যুনাল” অর্থ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর ধারা ৮২ এর অধীনে গঠিত সাইবার আপীল ট্রাইব্যুনাল।
★ নোট: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর ধারা ৮২ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন চেয়ারম্যান ও দু’জন সদস্যের সমন্বয়ে সাইবার আপীল ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবে।
(ক) সাইবার আপীল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান: সুপ্রীম কোর্টের বিচারক ছিলেন বা আছেন বা অনুরূপ বিচারক হিসেবে নিয়োগ লাভের যোগ্য এমন একজন ব্যক্তি সরকার কর্তৃক চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন।
(খ) সাইবার আপীল ট্রাইব্যুনালের সদস্য: বিচার বিভাগে নিযুক্ত একজন জেলা জজ বা অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এবং তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন ব্যক্তি।
# ধারা-২(১)(ঙ); কম্পিউটার সিস্টেম: “কম্পিউটার সিস্টেম” অর্থ এক বা একাধিক কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসের মধ্যে আন্তঃসংযোগকৃত প্রক্রিয়া যা এককভাবে বা একে অপরের সাথে সংযুক্ত থেকে তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করতে সক্ষম।
# ধারা-২(১)(জ); সাইবার ট্রাইব্যুনাল: “সাইবার ট্রাইব্যুনাল” অর্থ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর ধারা ৬৮ এর অধীনে গঠিত সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
★নোট: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর ধারা ৬৮ অনুযায়ী সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা এক বা একাধিক সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক: সরকার সুপ্রীম কোর্টের সাথে পরামর্শ করে একজন দায়রা জজ বা একজন অতিরিক্ত দায়রা জজের সমন্বয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করবে। অনুরূপভাবে নিযুক্ত একজন বিচারক “বিচারক,সাইবার ট্রাইব্যুনাল” নামে অভিহিত হবেন।
# ধারা-২(১)(ঞ); ডিজিটাল ডিভাইস: “ডিজিটাল ডিভাইস” অর্থ কোনো ইলেকট্রনিক, ডিজিটাল, ম্যাগনেটিক, অপটিক্যাল বা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র বা সিস্টেম, যা কিনা ইলেকট্রনিক, ডিজিটাল, ম্যাগনেটিক বা অপটিক্যাল ইমপালস ব্যবহার করে যৌক্তিক, গাণিতিক এবং স্মৃতি কার্যক্রম সম্পন্ন করে।
# ধারা-২(১)(থ); বে-আইনী প্রবেশ: “বে-আইনী প্রবেশ” অর্থ কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বা অনুমতির শর্ত লঙ্ঘন করে কোনো কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস বা ডিজিটাল তথ্য ব্যবস্থায় প্রবেশ করাকে বুঝায়।
# ধারা-২(১)(ধ); মানহানি[Defamation]: “মানহানি” অর্থ ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী মানহানিকে বুঝায়। এই মানহানি সোশ্যাল মিডিয়াতেও হতে পারে আবার ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও হতে পারে।
★ মানহানি এমন এক ধরণের অপরাধ যা ফৌজদারী এবং দেওয়ানী উভয় প্রকার হতে পারে। ফৌজদারী আদালতে মানহানির মামলা হওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে সে কারাদণ্ডে বা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। অন্যদিকে দেওয়ানী আদালতে মানহানির মামলা হলে এবং সেই মামলায় বাদী জয়ী হলে আদালত বাদীর অনুকূলে বিবাদীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিবেন।
★ দন্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় মানহানির সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি মানহানির উদ্দেশ্যে শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান কল্পমূর্তির সাহায্যে কোন ব্যক্তি সম্পর্কে এমনভাবে নিন্দা প্রকাশ করে যে, সেই নিন্দা উক্ত ব্যক্তির সুনাম নষ্ট করে। তাহলে প্রথমোক্ত ব্যক্তি উক্ত ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে গণ্য হবে।
★ উদাহরণ: আবির একজন মৃত ব্যক্তি। শাহিন এসে আবিরের পরিবারের লোকের সামনে এসে আবির সম্পর্কে বলে যে, আবির জীবিত থাকাকালীন সময়ে আমার হাতের ঘড়িটি চুরি করেছিল। এখানে শাহিন আবিরের নামে মানহানি করেছে বলে বিবেচিত হবে। কারণ কোন কিছুর জন্য কোন মৃত লোকের পরিবার বা আত্নীয়ের সামনে ঐ মৃত ব্যক্তির নিন্দা করলে তা মানহানি হিসেবে গণ্য হবে।
# ধারা-৪; আইনের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ: যদি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের বাহিরে এই আইনের আওতায় কোনো অপরাধ করেন যা বাংলাদেশে করলে এই আইনের অধীনে দন্ডযোগ্য হতো, তাহলে এই আইনের বিধান এমনভাবে প্রযোজ্য হবে যেন উক্ত অপরাধটি তিনি বাংলাদেশে করেছেন। [ধারা-৪(১)]
যদি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের বাহির থেকে বাংলাদেশে অবস্হিত কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে বাংলাদেশর ভিতরে এই আইনের অধীনে কোন অপরাধ করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের বিধান এমনভাবে প্রযোজ্য হবে যেন উক্ত অপরাধের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। [ধারা-৪(২)]
যদি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের ভিতর থেকে বাংলাদেশের বাহিরে এই আইনের অধীনে কোন অপরাধ করেন, তাহলে এই আইনের বিধান এমনভাবে প্রযোজ্য হবে যেন উক্ত অপরাধের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। [ধারা-৪(৩)]
নোট: ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৩ ও ৪ ধারা + তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এর ৪ ধারা +২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪ ধারা একসাথে মিলিয়ে পড়তে হবে। এই ধারাগুলোতে আইনের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে।
★১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৩ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাহিরে যে সকল নাগরিক অবস্থান করেন, তাদের ক্ষেত্রে ও দন্ডবিধি সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। তারা বাংলাদেশের বাহিরে যদি এমন কাজ করেন যা কিনা বাংলাদেশে অপরাধ বলে বিবেচিত হয়, এক্ষেত্রে এই ধরনের অপরাধের জন্য তাদেরকে শাস্তি প্রদান করা যাবে।
★ উদাহরণ: আসিফ বাংলাদেশের একজন নাগরিক। সে আয়ারল্যান্ডে আরেক বাংলাদেশী নাগরিক আবিরের স্ত্রীর সাথে আবিরের সম্মতি ছাড়া যৌন সঙ্গম করে। যা বাংলাদেশের ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী ব্যভিচার [Adultery] হিসেবে বিবেচিত হবে। উক্ত অপরাধ আয়ারল্যান্ডে সংঘটিত হলেও আসিফ ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী শাস্তি পাবেন। তবে ইউরোপ বাসীদের জন্য কিন্তু এটা কোনো অপরাধ নয়।
★ ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৪ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আদালত বাংলাদেশের বাহিরে জলে, স্থলে এবং আকাশ পথে সংঘটিত অপরাধের বিচার করতে পারবে। বর্তমান ধারা বাংলাদেশের আদালতকে এই ক্ষমতা দিয়েছে।
বাংলাদেশের বাহিরে কোনো জাহাজ বা বিমানে অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। উক্ত জাহাজ বা বিমান যদি বাংলাদেশে নিবন্ধিত হয়ে থাকে তবে তার উপর সংঘটিত অপরাধের বিচার বাংলাদেশের আদালত করতে পারবে। কারণ বাংলাদেশে নিবন্ধিত জাহাজ বা বিমান বাংলাদেশের পতাকা বহন করে।
# ধারা-১২; জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল: এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি National Digital Security Council গঠন করা হবে। এই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী।
# ধারা-১৭; গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বে-আইনী প্রবেশ ইত্যাদির দন্ড: যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে- (ক) বে-আইনী প্রবেশ করেন বা (খ) বে-আইনী প্রবেশের মাধ্যমে উহার ক্ষতিসাধন বা বিনষ্ট বা অকার্যকর করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কাজ একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। [ধারা-১৭(১)]
★ যদি কোন ব্যক্তি উপ-ধারা(১) এর দফা (ক) এর অধীন কোন অপরাধ করেন, তাহলে তার শাস্তি হবে অনধিক ৭ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড।
যদি কোন ব্যক্তি উপ-ধারা(১) এর দফা (খ) এর অধীন কোন অপরাধ করেন, তাহলে তার শাস্তি হবে অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড। [ধারা-১৭(২)]
★ যদি কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর উল্লেখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনরায় সংঘটন করেন, তাহলে তার শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড। [ধারা-১৭(৩)]
# ধারা-২১; মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা বা প্রচারণার দন্ড।
★ যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা তাতে মদদ প্রদান করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কাজ একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। [ধারা-২১(১)]
★ যদি কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীনে কোন অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১০(দশ) বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-২১(২)]
★ যদি কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীনে কোন অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনরায় সংঘটন করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অনধিক ৩ কোটি টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-২১(৩)]
# ধারা-২৩; ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণা:
★ যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কাজ একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। [ধারা-২৩(১)]
★ যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীনে কোন অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-২৩(২)]
★ যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীনে কোন অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনরায় সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ৭ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-২৩(৩)]
★ এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,”ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণা” অর্থ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে বা অনুমতি ছাড়া কোনো কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোন তথ্য পরিবর্তন করা, মুছে ফেলা, নতুন কোন তথ্যের সংযোগ বা বিকৃতি ঘটানোর মাধ্যমে ইহার মূল্য বা উপযোগিতা কমিয়ে ফেলা, তার নিজের বা অন্য কোনো ব্যক্তির কোনো সুবিধা প্রাপ্তির বা ক্ষতি করার চেষ্টা করা বা ছলনার আশ্রয় গ্রহণ করা।
# ধারা-২৪; পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ: যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম,কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, কোনো ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম বা ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে-
(ক) প্রতারণা করার বা ঠকাবার উদ্দেশ্যে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচয় ধারণ করেন বা অন্য কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত কোনো তথ্য নিজের বলে প্রদর্শন করেন বা
(খ) উদ্দেশ্যমূলকভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তা নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যে নিজের বলে ধারণ করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কাজ একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। [ধারা-২৪(১)]
★ যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীনে কোন অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-২৪(২)]
★ যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীনে কোন অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনরায় সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ৭ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-২৪(৩)]
# ধারা-২৮; ওয়েবসাইট বা কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো তথ্য প্রকাশ, সম্প্রচার ইত্যাদি।
★ যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার বা উস্কানি দেয়ার অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কাজ একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। [ধারা-২৮(১)]
★ যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীনে কোন অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-২৮(২)]
★ যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীনে কোন অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনরায় সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ২০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-২৮(৩)]
# ধারা-২৯; মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার ইত্যাদি
★ যদি কোন ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে দন্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তার জন্য তিনি অনধিক ৩ বছর কারাদন্ডে বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-২৯(১)]
★যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লেখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনরায় সংঘটন করেন,তাহলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৫ বছর কারাদন্ডে বা অনধিক ১০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।[ধারা-২৯(২)]
# ধারা-৩১; আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ইত্যাদির অপরাধ ও দন্ড
★ যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণী বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটানোর চেষ্টা করে,তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কাজ একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। [ধারা-৩১(১)]
★ যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীনে কোন অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ৭ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-৩১(২)]
★ যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীনে কোন অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনরায় সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-৩১(৩)]
# ধারা-৩২; সরকারী গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধ ও দন্ড
★ যদি কোন ব্যক্তি Official Secrets Act,1923 এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ২৫ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-৩২(১)]
★ যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীনে কোন অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনরায় সংঘটন করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-৩২(২)]
# ধারা-৩৪; হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ ও দন্ড
★ যদি কোনো ব্যক্তি হ্যাকিং করেন,তাহলে এটা একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তার জন্য তিনি অনধিক ১৪ বছরের কারাদন্ডে বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-৩৪(১)]
★ যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীনে কোন অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনরায় সংঘটন করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ কোটি টাকা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। [ধারা-৩৪(২)]
★ বর্তমান ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,”হ্যাকিং” অর্থ কম্পিউটার তথ্য ভান্ডারের কোন তথ্য বিনাশ, বাতিল, পরিবর্তন বা ইহার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাসকরণ বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিসাধন। নিজ মালিকানা বা দখলবিহীন কোনো কম্পিউটার, সার্ভার,কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশের মাধ্যমে ইহার ক্ষতিসাধন ও “হ্যাকিং” এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
# ধারা-৪০; তদন্তের সময়সীমা [Time limit for investigation]:
★ তদন্তকারী অফিসার কোনো অপরাধ তদন্তের দায়িত্ব প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করবেন। উক্ত সময় সীমার মধ্যে তদন্তকারী অফিসার তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে তার নিয়ন্ত্রনকারী অফিসারের অনুমোদন সাপেক্ষে তদন্তের সময়সীমা আরো অতিরিক্ত ১৫ দিন বাড়াতে পারবেন।
এই সময়ের মধ্যে তদন্তকারী অফিসার তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে এর কারণ লিপিবদ্ধ করে বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করবেন। অতঃপর ট্রাইব্যুনালের অনুমতিক্রমে তদন্তকারী অফিসার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।
# ধারা-৪২; পরোয়ানার মাধ্যমে তল্লাশী ও জব্দ:
★ এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা কোনো কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত বিষয়ে এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে বা কোনো অপরাধ সংক্রান্ত প্রমাণ কোথাও বা কারো কাছে সংরক্ষিত আছে মনে করলে “পুলিশ কর্মকর্তা” Cyber Tribunal, Chief Judicial Magistrate বা Chief Metropolitan Magistrate এর নিকট থেকে “তল্লাশী পরোয়ানা” [Search Warrant] লাভ করতে পারবে।
# ধারা-৪৮; অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ ইত্যাদি [Cognizance of Offence etc.]:
★ Cyber Tribunal শুধুমাত্র একজন পুলিশ কর্মকর্তার ” লিখিত রিপোর্ট” এর উপর ভিত্তি করে কোনো মামলা আমলে নিতে পারবে।[ধারা-৪৮(১)]
★ সাইবার ট্রাইব্যুনাল এই আইনের অধীনে বিচারকালে “দায়রা আদালতের বিচার পদ্ধতি যতদূর সামঞ্জস্য অনুসরণ করবে [ধারা-৪৮(২)]
# ধারা-৪৯; অপরাধের বিচার ও আপীল:
★ এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের বিচার শুধুমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনাল করতে পারবে। [ধারা-৪৯(১)]
★ কোনো ব্যক্তি সাইবার ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সংক্ষুব্ধ [Aggrieved] হলে তিনি সাইবার আপীল ট্রাইব্যুনালে আপীল দায়ের করতে পারবেন। [ধারা-৪৯(২)]
# ধারা-৫২; মামলা নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত সময়সীমা:
★ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এই আইনের অধীনে কোনো মামলার অভিযোগ গঠনের তারিখ হতে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করবেন। [ধারা-৫২(১)]
★ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক উপ-ধারা (১) এর অধীনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো মামলা নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হলে, তিনি এর কারণ লিপিবদ্ধ করে উক্ত সময়সীমা সর্বোচ্চ ৯০ কার্যদিবস বৃদ্ধি করতে পারবেন। [ধারা-৫২(২)]
★ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক উপ-ধারা (১) এর অধীনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো মামলা নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হলে, তিনি এর কারণ লিপিবদ্ধ করে বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্ট বিভাগকে অবহিত করে মামলার কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখতে পারবেন। [ধারা-৫২(৩)]
লেখক: সহকারী জজ; জেলা ও দায়রা জজ আদালত, শরীয়তপুর।