অধস্তন আদালতের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে (seize) নেওয়া সংক্রান্ত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চের বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর রায়টি প্রকাশিত হয়েছে। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মুহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। বুধবার (২৪ নভেম্বর) ৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইতে প্রকাশ করা হয়।
রায়ে বলা হয়,
স্থগিতাদেশ থাকার পরও অসৎ উদ্দেশ্য ধর্ষণ মামলার আসামি আসলাম শিকদারকে জামিন দিয়েছিলেন বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার। তাই সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ মোতাবেক, ফৌজদারি মামলায় তার বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাই এখন থেকে তিনি আর দেশের কোনও আদালতে ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না।
মামলার ঘটনা পর্যালোচনার শেষে রায়ের একটি অংশে মোছা. কামরুন্নাহার কোনও ফৌজদারি মামলা পরিচালনার জন্য উপযুক্ত নন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, স্থগিতাদেশ থাকার পরও ধর্ষণ মামলার এক আসামিকে জামিন দেওয়ায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর সাবেক বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার। এ ঘটনায় তাঁকে তলব করেন আপিল বিভাগ।
গত ২২ নভেম্বর তলব আদেশে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। পাশাপাশি তিনি এ বিষয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে তার বিষয়ে রুদ্ধদ্বার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিচারকক্ষ থেকে বেঞ্চ অফিসার, আইনজীবীসহ সকলকে বের করে দেয়া হয়। এমনকি ভার্চুয়াল কোর্টের জুম আইডিও পরিবর্তন করে দেয়া হয়। থাকতে দেওয়া হয়নি কোন গণমাধ্যম কর্মীকেও।
শুনানি শেষে তাঁর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেন (সিজ) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা সিজ করার আদেশ দেন।
যে মামলার জন্য বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হল
এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলার সাবেক প্রোগ্রাম প্রডিউসার আসলাম শিকদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মামলা করা হয়। ওইদিনই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর ২০১৯ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৫ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আসলামের জামিন স্থগিত করেন।
চেম্বার আদালতে জামিন স্থগিত থাকার পরও গত বছরের ২ মার্চ আসামি আসলামকে জামিন দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক কামরুন্নাহার। এরপর ১২ মার্চ এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বিচারক কামরুন্নাহারকে তলব করেন আপিল বিভাগ।
প্রসঙ্গত, গত ১১ নভেম্বর রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করেন তিনি। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক পুলিশের উদ্দেশে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নিতে ‘পরামর্শ’ দেন। তাঁর দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ প্রেক্ষিতে তাঁর বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে তাঁকে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।