ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার ও অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর ফোনালাপের ফাঁসের ঘটনায় রিপোর্ট দাখিলের সময় বেড়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ৩১ জানুয়ারির মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালত বলেছেন, এটাই শেষ সময়। এরপর রিপোর্ট দাখিলের জন্য কোনো সময় দেওয়া হবে না।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া রাসেল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। আর ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুশফিক উদ্দিন বখতিয়ার।
রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া রাসেল ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শুনানিতে অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, দীর্ঘদিন হয়ে গেছে আদালতের আদেশ সত্ত্বেও ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনো দাখিল করা হয়নি। উনি অধ্যক্ষ পদে থাকা অবস্থায় তদন্ত হলে তা ঠিকমত হবে না। উনার বিপক্ষে কেউ রিপোর্ট দেবে না। তাই রিপোর্ট দাখিলের আগ পর্যন্ত কামরুন নাহারকে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার আদেশ প্রার্থনা করছি। আর সরকারের প্রতি নির্দেশনা দিন যেন দ্রুত রিপোর্ট দাখিল করে।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার এই রিটের গ্রহণ যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, এই রিট গ্রহণযোগ্য নয়।
এ পর্যায়ে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের আইনজীবী মুশফিক উদ্দিন বখতিয়ার আদালতকে বলেন, রিট তো চলে না প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে একটা সিন্ডিকেটও আছে। কামরুন নাহার একজন বিসিএস ক্যাডার। তিনি একটি কলেজের অধ্যক্ষ পদে দায়িত্বে ছিলেন। তিনি এখানে থাকতে চান না। তাকে সরকারের পক্ষ থেকে জোর করে ভিকারুননিসায় আনা হয়েছে।
এ পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, তিনি এমন কোনো লোক না যে তাকে ছাড়া ভিকারুননিসা চলবে না। এসব কথা কোর্টে এসে বলবেন না। এরপর আদালত ৩১ জানুয়ারি এই রিট মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
এর আগে যা হয়েছে
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার ও অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
তদন্ত রিপোর্ট দাখিলে রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ৯ আগস্ট শুনানিতে আদালত বলেছেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার ফোনালাপে যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, সত্যি হয়ে থাকলে অবশ্যই নিন্দনীয়। এটা অপ্রত্যাশিত। তার মুখ থেকে এ ধরনের ভাষা আশা করা যায় না।
রিটের প্রেক্ষাপট
তার আগে ৮ জুলাই ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও অভিভাবক ফোরামের নেতার ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে অধ্যক্ষ কামরুন নাহারকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই ছাত্রীর অভিভাবক মোহাম্মদ মোরশেদ আলম রিট দায়ের করেন। রিটে শিক্ষা সচিব ও শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও গর্ভনিং বডির সভাপতিকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া রাসেল সে সময় গণমাধ্যমকে বলেন, ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ কামরুন নাহার অডিওতে যেসব কথা বলেছেন, তাতে তিনি ওই কলেজের অধ্যক্ষ পদে থাকার নৈতিক অবস্থান হারিয়েছেন। কারণ তিনি অধ্যক্ষ পদে বহাল থাকলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর এর প্রভাব পড়বে।