সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে তিন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। বিদেশ থেকে ফিরে এসে কর্মকর্তাদের অর্থ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যবিহীন বিদেশ সফর এবং জনগণের করের টাকা অপচয় রোধে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের বিচারপতি বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেন। রায় প্রদানকারী দুই বিচারপতির স্বাক্ষরের পর বুধবার (১ ডিসেম্বর) ১৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, অতিরিক্ত সচিব এবং তার নিচের পদের কর্মকর্তাদের সব অফিসিয়াল সফরে দেশের বাইরে যেতে শুধু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নয়, আবশ্যিকভাবে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমতিও নিতে হবে। ফিরে আসার পর সফরের বিস্তারিত তথ্য সংবলিত একটি প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিতে হবে। এই তিন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়া ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তার অফিসিয়াল সফর অ্যালাউ করা যাবে না। রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় রোধে এটির প্রয়োজন রয়েছে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
মামলার প্রেক্ষাপট
২০১৫ সালে বিআইডব্লিউটিসি ৬ কোটি টাকার ফগ লাইট কিনতে আমেরিকায় যান প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, পরিচালক জ্ঞান রঞ্জন শীল, জিএম ক্যাপ্টেন শওকত সরদার ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পংকজ কুমার পাল। তাদের মধ্যে প্রকৌশলী ছিলেন মাত্র একজন। তারা ৬ কোটি টাকা দিয়ে ১০টি ফগ লাইট কেনেন, কিন্তু সেগুলো ছিল নিম্নমানের। এছাড়া দেশে ফিরে গ্রীষ্মকালেই তারা ফগ লাইট পরীক্ষা করেন।
মাওয়া এবং আরিচা ফেরিঘাটে ফগ লাইট পরীক্ষার পর দেখা যায়, ৭ হাজার ওয়াটের ফগ লাইট কাজ করছে মাত্র তিন হাজার ওয়াটের সমান। কিন্তু এর মধ্যে টাকা তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জনি করপোরেশন। তবে অনিয়ম ধরা পড়ায় আটকে দেওয়া হয় ব্যাংক গ্যারান্টির টাকা। ২০১৬ সালে ব্যাংক গ্যারান্টির ২৮ লাখ টাকা উদ্ধারে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ফগ লাইট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জনি করপোরেশন। সেই রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর তা খারিজ করে এই রায় দেন হাইকোর্ট।
আদালতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাইফুর রশিদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান।