রংপুরের হারাগাছে পুলিশের হাতে আটকের পর এক ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একজন জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার থাকবেন। এ কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
আজ বুধবার (৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
আদালতের আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
তিনি জানান, ‘রংপুরের হারাগাছ এলাকায় পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ আজ মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ, রংপুর; জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি এবং একজন অতিরিক্ত কমিশনারের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ।’
এর আগে গত ৩ নভেম্বর আদালতে ওই ব্যক্তির সুরতহাল ও ভিসেরা রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হয়। শুনানিকালে পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তাজুলের কাছে ৫ গ্রাম হেরোইন পাওয়া গিয়েছিল। তার মৃত্যুর ঘটনায় মরদেহের সুরতহাল রিপোর্টে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে তাজুল ইসলাম (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগের ঘটনাটি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
বিষয়টি আমলে নিয়ে রংপুরের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত ঘটনা এবং এ ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আদালতকে জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্তকে বলা হয়।
ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা ও ওই ঘটনায় গ্রহীত পদক্ষেপ বিষয়ে পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্তের ইমেইলে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
ঘটনার বিবরণ
গত ১ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছে পুলিশের বিরুদ্ধে তাজুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হারাগাছের নতুন বাজার বছি বানিয়ার তেপতি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাজুল ইসলাম উপজেলার হারাগাছ নয়াটারী দালালহাট গ্রামের বাসিন্দা।
জানা গেছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নয়া বাজার বছি বানিয়ার তেপতি থেকে তাজুল ইসলামকে মাদকসহ আটক করে পুলিশ। এ সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ তাকে ‘মারধর করলে’ ঘটনাস্থলেই মারা যান তাজুল ইসলাম।
পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানা ঘেরাও করেন। বিক্ষুব্ধ জনতা ইটপাকটেল ছুড়ে মারার পাশাপাশি পুলিশের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।