ব্রাহ্মণবাড়িয়া জগত বাজারের ব্যবসায়ী জহিরুল হক হত্যা মামলায় ১৩ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। জহিরুল জেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
আজ রোববার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বসু মিয়া, কবির মিয়া, মোখলেস, সাচ্চু মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, শহিবুর রহমান শুক্কি, লিয়াকত আলী, ইউনুছ মিয়া, রহমত উল্লাহ ওরফে ফারিয়াজ মিয়া, শিথিল আহমেদ ওরফে ফাহিম আহমেদ, সাইফুল, পাবেল ও আলী মিয়া।
এছাড়া এ মামলায় আরও আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। অনাদায়ে তাদের আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নুরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, রাসেল, মাজু মিয়া, গোলাপ মিয়া, সোহেল মিয়া, শাহজাহান ও বোরহান ওরফে রুহান।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে ১৬ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন। পলাতক রয়েছেন পাঁচ আসামি। তারা হলেন রহমত উল্লাহ ওরফে ফারিয়াজ মিয়া, শিথিল আহমেদ ওরফে ফাহিম আহমেদ, সাইফুল, পাবেল এবং আলী মিয়া। পলাতক পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণ
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জহিরুল হক হত্যার ঘটনাটি খুবই নৃশংস। যেখানে সামান্য ঘটনা নিয়ে খুবই উত্তেজিত হয়ে একপক্ষ অন্য পক্ষকে খুন ও জখমের মতো ঘটনা ঘটায়। এই মামলায় পরিকল্পনা মোতাবেক আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল হককে বসু মিয়া গং কর্তৃক ভিকটিমকে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্রের দ্বারা দুই হাতে গলা চেপে ধরলে গলা দিয়ে রক্ত বমি হয়, বাম উরুতে সামনে রগ কাটা জখম, বাম উরুতে পেছনে কাটা জখম, কোমড়ের পিছনে জখম, বাম হাঁটুর নিচে রগ কাটা জখম, মুখের ডান চোয়ালে ছিদ্র জখম, মাথার পেছনে থেঁতলানো জখম, বুকে পিঠে কোমড়ে পিটিয়ে জখম, বাম চোয়ালের উপরে গুরুতর থেঁতলানো কালচে জখম, তলপেটে পা দিয়ে মুড়িয়ে জখমসহ কিলিয়ে, উষ্টিয়ে, লাথিয়ে পুরো শরীরে আঘাত করে, বুক থেকে পেট পর্যন্ত খোলা লম্বা কাটা মারাত্মক রক্তাক্ত গ্রিভিয়াস জখম করে খুন করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এ কারণে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়াই সমীচীন বলে মনে করেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য
২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া উত্তর পৌরতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে জহিরুল হক নিজ গ্রাম পয়াগে ফিরছিলেন। পথে আসামি বসু মিয়া, হাবিবুর রহমান, শহিবুর রহমান ওরফে শুক্কি, কবির মিয়া, সাচ্চু মিয়া, মোখলেছ মিয়া, রুহান ওরফে বোরহান, শিথীল আহমেদ ওরফে ফাহিম আহমেদ, রহমত উল্লাহ ফারিয়াজসহ অন্য আসামিরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলের পাশে অবস্থান করছিলেন।
জহিরুল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুটি মোটরসাইকেলযোগে আসামিরা তার সিএনজি ব্যারিকেড দিয়ে আটকান। এসময় সিএনজিতে থাকা জহিরুলকে তারা আক্রমণ করে মারাত্মক জখম করেন। আসামিরা সিএনজিচালক গোলাপ মিয়াকেও আঘাত করেন।
ঘটনার সময় অন্যদিক থেকে আসা আরেকটি সিএনজিচালককে গোলাপ মিয়া বিষয়টি জানালে তিনি মোটরসাইকেল দুটি ধাওয়া করেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া উত্তর পৌরতলা সিএনজি স্ট্যান্ডে থাকা লোকজনের সহায়তায় মোটরসাইকেল দুটিসহ আসামি শিথিল ও ফারিয়াজকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়।
জহিরুল হক ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই কবির হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২১ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।