ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং এরা সমাজের জঞ্জাল স্বরূপ, এদের কর্মকাণ্ড সমাজের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে এক রায়ে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানায় ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় এক আসামির জামিন আবেদনের আদেশে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এমন মন্তব্য করেন। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর দেওয়া আদেশের ১২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
রায়ে আদালত বলেন, ইয়াবাসহ সকল প্রকার মাদকদ্রব্য ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি অসংখ্য স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নিরাপরাধ তরুণ-তরুণী তথা ছেলে মেয়ের মৃত্যুর কারণ। অসংখ্য নিরাপরাধ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীসহ সকল প্রকার মাদকে আসক্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে ধাবিত হচ্ছে।
হাইকোর্ট আদেশে উল্লেখ করেন, ‘ইয়াবাসহ সকল প্রকার মাদক দ্রব্য ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এরা সমাজের জঞ্জাল স্বরূপ। এদের কর্মকাণ্ড সমাজের জন্য মারাত্মক হুমকি। সুতরাং এদের জামিনের বিষয়ে অসংখ্য স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীসহ সমাজ এবং রাষ্ট্রের বিষয়টি সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিতে হবে। আদালত কখনোই ইয়াবাসহ সকল প্রকার মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে যাবে না। আদালত কখনোই সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা ব্যক্তির পক্ষে যেতে পারে না। আদালত কখনোই অসংখ্য নিরাপরাধ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের মৃত্যুর কারণ সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের পক্ষে যাবে না।’
জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে আদালতের ক্ষমতা এবং বিবেচনা আদালতের সহজাত। তবে এর ব্যবহারে আদালতকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে কৃত অপরাধের বা অপরাধসমূহের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে ক্ষমতা ও বিচক্ষণতা ব্যবহার করতে হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
মামলার বিবরণী
২০২১ সালের ৫ জুন গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানাধীন দক্ষিণবাগ সাকিনাস্থ আব্দুল মার্কেটের আবুল স্টোরের সামনে পাকার মাথা রাস্তার উপর থেকে সোহেল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে ১০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
এরপর সোহেলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। একই বছরের ২৬ জুলাই তদন্ত কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার এসআই সাইফুল ইসলাম আদালতে আইনের ধারা ৩৬(১) এর ১০(ক) অনুযায়ী সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
ইয়াবাসহ আটক আসামির জামিন আবেদন গত ৭ সেপ্টেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং ২১ অক্টোবর জেলা জজ আদালত নামঞ্জুর করেন। এরপর হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামি।
গত ২৪ নভেম্বর দ্বৈত বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়ে রুল জারি করেন। তবে দ্বৈত বেঞ্চের অপর বিচারপতি রুল ইস্যু করে জামিন আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন।
অন্তর্বর্তী জামিন বিষয়ে দ্বিধা বিভক্ত আদেশের প্রেক্ষিতে আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়। পরে প্রধান বিচারপতি জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চে পাঠান।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।