গ্রেফতারকৃত আসামি মো. আলী আজগর মানিক
গ্রেফতারকৃত আসামি মো. আলী আজগর মানিক

কথিত টিভি চ্যানেল-পত্রিকা খুলে সাংবাদিক কার্ড বিক্রি, মালিক গ্রেফতার

কথিত তিনটি টিভি চ্যানেল ও একটি দৈনিক পত্রিকার মালিক নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, প্রতারণা, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১০টি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিদ্দেশ্বরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল তাকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামির নাম মো. আলী আজগর মানিক (৪৮)। তার বাড়ি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে।

র‍্যাব-৪ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী এ ধরনের অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি স্বাক্ষরজ্ঞানহীন অথচ তিনি একটি, দু’টি নয় বরং ৩ টি টেলিভিশন চ্যানেলের চেয়ারম্যান। যেগুলোর নাম যথাক্রমে- সিটিজি ক্রাইম টিভি, সিটিজি টিভি ও বার্তা টিভিসহ আই বার্তা নামে একটি দৈনিক পত্রিকারও সম্পাদক তিনি। উদ্দেশ্য ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে সাংবাদিক কার্ড বিক্রি করা।

র‍্যাব সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে উত্থান হওয়া এই প্রতারক নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, প্রতারণা, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১০ টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী। আলী আজগর মানিক একের পর এক অপরাধ ঘটিয়ে চট্টগ্রামে টিকতে না পেরে গত ২ বছর ধরে পালিয়ে ঢাকার অবস্থান করছেন। পলাতক অবস্থায়ই সম্পূর্ণ ভুয়া ও অনুমোদনহীন ৩টি টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনুমোদনহীন নামসর্বস্ব একটি ভুয়া দৈনিক পত্রিকাসহ ৪টি মিডিয়ায় সাংবাদিক বানানোর নামে সারাদেশের অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমানের মোটা অংকের অর্থ। মূলত এটিই তার প্রধান আয়ের উৎস।

আলী আজগর মানিকের অপরাধের কৌশল বিষয়ে র‍্যাব জানায়, টিভি চ্যানেল ও ভুয়া দৈনিক পত্রিকা খুলে মিডিয়ার জন্য সাংবাদিক বানানোর কথা বলে প্রথমে বিজ্ঞাপন দেয়। এতে বিভিন্ন বেকার ও নীরিহ লোকজন তার বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হয় এবং তার সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। পরবর্তীতে আলী আজগর মানিক তাদের জানায় যে সাংবাদিক হতে হলে প্রথমে তাকে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ৪/৫ হাজার টাকা পাঠাতে হবে।

র‍্যাব আরও জানান, সে কখনো সরাসরি কারো সাথে দেখা করতো না এবং তার অফিস ও বাসার ঠিকানা কাউকে দিতো না। তার কথা বিভিন্ন লোকজন সরল মনে বিশ্বাস করে সাংবাদিক হওয়ার আশায় তাকে ৪/৫ হাজার টাকা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পাঠিয়ে দিতো। টাকা পাওয়ার পর ধৃত আসামী আলী আজগর মানিক উক্ত ব্যক্তিদের সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখতো না। এভাবে সে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণার উদ্দেশে অসংখ্যা বেকার ও নিরিহ লোকজনকে সাংবাদিক বানানোর কথা বলে তাদের নিকট হতে বিপুল পরিমানের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তা আত্মসাৎ করে আসছে।

এছাড়া ধৃত আসামী আলী আজগর মানিক চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাধারণ লোকজন, বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সমাজের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নামে ভুয়া এবং বানোয়াট সংবাদ প্রচারের ভয়-ভীতি প্রদান করে তাদের নিকট হতে বিভিন্ন মোটা অংকের টাকা চাঁদা হিসেবে দাবী করে তা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করে আসছে বলেও র‍্যাব জানিয়েছে।

র‍্যাবের তথ্য অনুযায়ী, আসামী আলী আজগর মানিকের বিভিন্ন নারীদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। তাছাড়া সে একাধিক বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ ছিল। যে মেয়েকে তার পছন্দ হতো তাকেই সে বিভিন্ন ভাবে কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্তক্ত করে। তার কুপ্রস্তাবে কোন মেয়ে রাজি না হলে সে তাদের নামে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আপত্তিকর কথা লিখে এবং বিভিন্ন সময় তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিত মর্মে ধৃত আসামী স্বীকার করে।

এই পর্যন্ত আসামী আলী আজগর মানিক বিভিন্ন লোকজনদের নিকট হতে প্রতারণা মূলক ভাবে অনুমানিক ৪/৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করেছে বলে র‍্যাব জানতে পেরেছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।