চট্টগ্রামে আদালত এলাকায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) কর্তৃক প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য পার্কিং নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের নামে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে সমিতির সাবেক সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রতন কুমার রায় জনস্বার্থে মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এ নোটিশ প্রেরণ করেন।
নোটিশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, চট্টগ্রাম জোনের পিডব্লিওডি -এর প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী এবং জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়েছে।
আজ বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) নোটিশ প্রেরণকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট রতন কুমার রায় ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নোটিশে যা বলা হয়
১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা আইনজীবী সমিতি চট্টগ্রাম ডিসট্রিক্ট বার অ্যাসোসিয়েশন। বর্তমানে এই বারে ৭ হাজার সদস্য আইনজীবী এবং ৬ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবী রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই আইনজীবী সমিতির মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ও সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
ব্রিটিশ সরকার তৎকালীন জমিদার আখিল চন্দ্র সেনের কাছ থেকে কোর্ট বিল্ডিং স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে। এরপর ১৮৯২ সালে কোর্ট হিলে আইনজীবী ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৮৯৮ সালে সম্পন্ন হয় নির্মাণকাজ। পাহাড়ে নির্মিত এই ভবনের স্থাপত্য শৈলী ও নান্দনিক সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। কিন্তু আশেপাশে অন্য অনেক সরকারি ভবন সহ নানা স্থাপনা নির্মিত হওয়ায় আদালত এলাকার জায়গা ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে। এখন খুব কম জায়গাই অবশিষ্ট রয়েছে।
কিন্তু জেলা প্রশাসক প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য পার্কিং নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের নামে বাগান ও শিকলযুক্ত পাথর দিয়ে সামনের ওই অবশিষ্ট স্বল্প জায়গাটুকুতেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এতে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণের চলাচলে বিঘ্ন তৈরি হয়ে। ফলে আদালত এলাকার সড়কে দিনভর তীব্র যানজটের কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিচারপ্রার্থী, বিচারক ও আইনজীবীদের। এছাড়া ঐতিহাসিক আদালত ভবনের স্থাপত্য শৈলী ও নান্দনিক সৌন্দর্য দেখতে আসা দর্শনার্থীদের চলাচলেও বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক কর্তৃক চলাচলের একমুখী রাস্তা সরু করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি জনগণের অবাধ চলাফেরার সাংবিধানিক অধিকার পরিপন্থী। আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বহুবার মৌখিক ও লিখিতভাবে প্রতিবন্ধকতা অপসারণে অনুরোধ করা হলেও বিষয়টি আমলে নেয়নি জেলা প্রশাসন।
এমতাবস্থায় নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও সাধারণ জনগণের অবাধ চলাচলের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা এবং আদালত ভবনের নাম মুছে ফেলার অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।