প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল হতে অনুদান হিসেবে ২০ কোটি টাকার চেক বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ‘আইনজীবী প্রণোদনা তহবিল’ -এ হস্তান্তর করা হয়েছে।
আজ রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বার কাউন্সিল সচিবালয়ের অফিস কক্ষে সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে ২০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেন।
এ সময় বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বার কাউন্সিল সচিব সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার টাকা কী উপায়ে ব্যবহার করা হবে সেটি বার কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ঠিক করবেন। এর আগেও বার কাউন্সিল নিজস্ব তহবিল থেকে আইনজীবীদের কল্যাণে বিভিন্ন সময় আর্থিক সহযোগিতা করেছে। সে হিসেবে একটা প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া তো আছেই। আইনজীবীদের কল্যাণে এই টাকা কীভাবে খরচ করবেন এটা উনাদের স্বাধীনতা এ নিয়ে আমি কথা বলবো না।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বার কাউন্সিলের অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণে সদয় ছিলেন। এবার করোনা পরিস্থিতিতে আইনজীবীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েছেন। আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে ২০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন।
আইনজীবীদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন কাজের কথা তুলে ধরতে গিয়ে বার কাউন্সিল চেয়ারম্যান বলেন, নির্মণের পর থেকে গত চার দশকে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে উল্লেখযোগ্য সংস্কার সাধিত হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টিতে সুপ্রিম কোর্ট বারের দৃষ্টিনন্দন উন্নয়ন হয়েছে। ঢাকা আইনজীবী সমিতির নতুন ভবনও প্রধানমন্ত্রীর স্বদিচ্ছায় হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাহিরের বিভিন্ন জেলা বার ভবনের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে তিনি অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছেন।
আইনজীবীদের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ ও সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি আইনজীবীদেরও তিনি অংশ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। এজন্য উনাকে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন বলেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রথম অনুদান দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দ্বিতীয়বারের মত প্রণোদনা দিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আইনজীবীরা সমাজের অংশ এটি প্রধানমন্ত্রী অনুধাবন করেছেন এবং এই প্রণোদনার মাধ্যমে সেটি প্রমাণ করেছেন। এজন্য আইনজীবীদের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
এই অনুদান আইনমন্ত্রী, বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানসহ আইনজীবী নেতৃবৃন্দের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। এটি উপযুক্তভাবে সদ্ব্যবহার করা হবে বলেও উল্লেখ করেন সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান।
এ সময় সংক্ষিপ্ত আকারে বক্তব্য রাখেন বার কাউন্সিলের বার বার নির্বাচিত সদস্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান। এছাড়া চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বার কাউন্সিলের নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতিতে আইনজীবীদের জন্য ২০ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছর সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার কথা জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ অর্থ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মাধ্যমে সারা দেশের আইনজীবীদের দেয়া হবে।
সেদিন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি ঘোষণা দিতে পারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তিনি অত্যন্ত ম্যাগনানিমাস (মহানুভব) হয়েছেন যে, তিনি ২০ কোটি টাকা আইনজীবীদের জন্য প্রণোদনা দিয়েছেন এবং সেই প্রণোদনাটা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের মাধ্যমে দেয়া হবে।’
প্রণোদনার পুরো অর্থ বার কাউন্সিলের অ্যাকাউন্টে জমা হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই চেকটা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অ্যাকাউন্ট আছে; সেখানে যাবে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল একটা নীতিমালা ঠিক করবে, তারা কীভাবে সেটা সারা দেশের আইনজীবীদের দেবে।’
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে সরকার অর্থ বিতরণ করছে। এসব প্রণোদনা প্যাকেজ শেষ হওয়ার সময় ঠিক করা নেই। প্যাকেজগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। একই সঙ্গে যতদিন প্রয়োজন ততদিন প্রণোদনা থাকবে বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।
তারই ধারাবাহিকতায় আইনজীবীরা এ প্রণোদনা পেয়েছেন। যা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বার কাউন্সিলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।