অপরাধ সংঘটনকালে সহযোগী ভূমিকায় থাকা আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে আইনি পরিভাষা হচ্ছে ‘সাধারণ অভিপ্রায়’ এবং ‘সাধারণ উদ্দেশ্য’। বিষয় দু’টি নিয়ে লিখেছেন দীপজয় বড়ুয়া।
Common intention বা সাধারণ অভিপ্রায়
দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩৪ ধারায় Common intention বা সাধারণ অভিপ্রায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইংরেজি Common intention এর অর্থ হল সাধারণ অভিপ্রায়। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে, যখন কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক সকলের একই অভিপ্রায় পূরণকল্পে অপরাধমূলক কার্য সম্পাদিত হয়, তখন অনুরূপ ব্যক্তিগণের প্রত্যেকেই উক্ত কার্যের জন্য এইরূপে দায়ী হবেন যেন উক্ত কার্য উক্ত ব্যক্তি কর্তৃক সম্পাদিত হয়েছিল। কোনো অপরাধ একই অভিপ্রায়ে বা একই অভিপ্রায় পূরণকল্পে করলে অভিপ্রায়ের সাথে যুক্ত সবাই উক্ত অপরাধের জন্য দোষী।
একটি ছোট উদাহরণ দিয়ে বললে, ক, খ এবং গ একত্রে ঘ কে আক্রমণ করে। এক্ষেত্রে ক ও খ, ঘ কে মারপিট করে মারাত্নক জখম করে এবং এতে ঘ এর মৃত্যু হয়। কিন্তু গ, ঘ কে আঘাত করেনি। যদিও গ, ঘ কে আঘাত করেনি তথাপি গ, ঘ কে আঘাত করার অপরাধে অর্থাৎ ক, খ এর ন্যায় একই অপরাধে অপরাধী হবে। এখানে AIR 1925 PC 1 বরেন্দ্র কুমার ঘোষ বনাম সম্রাট মামলার সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে “অপরাধের যৌথ দায়িত্ব“ নীতিটি প্রতিষ্ঠিত।
Common object বা সাধারণ উদ্দেশ্য
দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৪৯ ধারায় Common object বা সাধারণ উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইংরেজি Common object এর অর্থ সাধারণ উদ্দেশ্য। মূলত বেআইনি সমাবেশ সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যে বা যারা বেআইনি সমাবেশের সদস্য হন তারাই দণ্ডবিধি অনুসারে অপরাধী হন। দণ্ডবিধির ১৪৯ ধারায় বলা হয়েছে, সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অনুষ্ঠিত অপরাধের জন্য বেআইনি সমাবেশের প্রত্যেক সদস্যই দোষী বলে গণ্য হবেন।
যদি ৬ জন ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র সহকারে একটি বাড়িতে প্রবেশ করে এবং এদের মধ্যে দুইজন বাড়ির মালিককে মাটিতে চেপে ধরে রাখে, একজন চাপাতি দিয়ে আঘাত করে এবং একজন গলায় চুরি চালায়, এতে বাড়ির মালিকের মৃত্যু হয়। অন্য দুইজন বাড়ি পাহাড়া দেয়। এখানে ৬ (ছয়) জনই ১৪৯ ধারা অনুযায়ী উক্ত অপরাধে অপরাধী হবে।
35 DLR 334 মামলার রায়ে দেখা যায় যে, “সাধারণ উদ্দেশ্যে বলতে তদ্রুপ উদ্দেশ্য বুঝায় যা পূরণ করতে সমাবেশের সকল সদস্য সমবেত হয়েছিল এবং একই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবে বলে তারা সকলে জানত।”
7 DLR (WP) LAHORE 220 মামলার রায়ে বলা হয়েছে, ”যেক্ষেত্রে বেআইনি সমাবেশের সাধারণ উদ্দেশ্য কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো সেক্ষেত্রে বেআইনি সমাবেশের সকল সদস্যই নর হত্যার জন্য দায়ী।”
লেখক: আইনজীবী; জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।