চট্টগ্রামে প্রেমের বিরোধে যুবককে অ্যাসিড নিক্ষেপের মামলায় এক শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই মামলায় আসামির স্ত্রী খালাস পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালত রোববার (২৭ ফেব্রুয়ার) এ রায় দেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া সুমিত ধর জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন। তিনি কপবাজার জেলার চকরিয়া থানার হারবাং ধরপাড়া মাস্টার বাড়ির দেবব্রত দাশের ছেলে। জামিনের পর তারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
মামলায় খালাস পাওয়া অপর আসামি সুমিতের স্ত্রী মৌমিতা দত্ত এ্যানী।
চট্টগ্রাম মহানগর অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট নোমান চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, আসামিরা জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন। দণ্ডিত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়েছে।
মামলার বাদী বাবুল চন্দ্র দে বলেন, মামলার আসামি মৌমিতার জন্য অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। তাকেই খালাস দিয়েছে আদালত। আমরা এ রায় মেনে নিতে পারছি না। আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা গেছে, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করা মৌমিতা ও সুমিত পরিবারের অজ্ঞাতে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিয়ে করে আলাদাভাবে বসবাস শুরু করেছিলেন।
স্নাতক পাস তমাল ছিলেন মৌমিতার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। সেই সুবাদে বিয়ের কিছুদিন পর মৌমিতা আবার গোপনে তমালের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তারা বিভিন্ন স্থানে দেখাসাক্ষাৎও করেন।
এক বছর পর তমাল মৌমিতার সঙ্গে সুমিতের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর মৌমিতাকে একটি রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে যান তমাল। সেখানে মৌমিতা সুমিতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করে এবং তাদের কোর্ট ম্যারেজ হয়েছে বলেও জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মৌমিতাকে চড় মারেন তমাল।
এ ঘটনার মাসখানেক পর প্রজাপতির ডানা নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বন্ধু হওয়ার আমন্ত্রণ পান তমাল। নিয়মিত কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাকে ওই আইডি থেকে তমালকে দেখা করার অনুরোধ করা হয়।
সাক্ষাতের জন্য গেলে সুমিত তার মুখে এসিড ছুড়ে মারে। এসিডে আক্রান্ত হয়ে তমালের দুই চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া তার মুখমণ্ডলও বিকৃত হয়ে গেছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সুমিতের স্ত্রীর মৌমিতা দত্ত এ্যানির সঙ্গে তমালের প্রেমের সর্ম্পক ছিল। ফেসবুকে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেননি এ্যানির স্বামী সুমিত। অন্যদিকে এ্যানিও বিয়ের কথা গোপন করে প্রেম চালিয়ে যেতে থাকেন।
এমতাবস্থায় ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তমাল চন্দ্র দে’র সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে সুমিত ধরের পরিচয় হয়। একই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় গণি বেকারি থেকে রহমতগঞ্জ এলাকার কুসুমকুমারী স্কুলে যাওয়ার পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তমাল চন্দ্র দে’র মুখমণ্ডলে অ্যাসিড ছোড়া হয়।
অ্যাসিডে তার মুখমণ্ডল ও চোখ ঝলসে যায়। স্থানীয়রা তমালকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তমালের অ্যাসিডদগ্ধ মুখমণ্ডল ও চোখের অবস্থা মারাত্মক হওয়ায় ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় তমাল চন্দ্র দে’র বাবা বাবুল চন্দ্র দে সুমিত দাশ ও তার স্ত্রী মৌমিতা দত্ত এ্যানির নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলা করেন।
২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করে আদালত। এ মামলায় ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জনের সাক্ষী নেওয়া হয়। এরপর আদালত উপরোক্ত রায় ঘোষণা করেন।