দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই বিধিবদ্ধ সংস্থার সার্বিক কর্মকাণ্ড তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।
একাদশ জাতীয় সংসদের সপ্তদশ অধিবেশনের শুরুর দিনে সোমবার (২৮ মার্চ) অনির্ধারিত আলোচনায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেছেন, “দুদক দুর্নীতিবাজদের আড়াল করতেই উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করেছে।” এ সময় দুদকের কর্মকাণ্ডকে খতিয়ে দেখতে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের অনুরোধ করেন তিনি।
সংসদ সদস্য মেনন বলেন, “বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। কিন্তু আমাদের দেশে দুর্নীতি চরম চ্যালেঞ্জ হিসাবে সামনে এসেছে। লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলছে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন, এটা সন্দেহ নাই।”
দুর্নীতি দমন ও অনুসন্ধানের জন্য দুর্নীতি দমন অধিদপ্তরকে ‘মর্যাদা দিয়ে’ দুর্নীতি দমন কমিশনে উন্নীত করার ইতিহাস তুলে ধরে রাশেদ খান মেনন বলেন, “সেই দুদক যখন সংবিধানবিরোধী কাজ করে, অথবা তার দুর্নীতিকে আড়াল করার জন্য অথবা তার কার্যক্রমের মধ্যে কোনো দুর্নীতিবাজকে আড়াল করার জন্য, যখন সংবিধানের বিধানের বিরুদ্ধে যায়; তখন আমাদের উৎকণ্ঠা হয়।”
শরীফকে ৫৪ এর (ক) ধারায় চাকরিচ্যুত করার প্রসঙ্গ টেনে মেনন বলেন, “কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই তাকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করা হয়েছে। অথচ এই ধারাটি নিয়ে হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে সংবিধানবিরোধী। দুদক অবশ্য আপিল করেছে।
“কিন্তু যে বিষয়টি বিচারধীন, সেই বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে তাকে বরখাস্ত করা হল। এর পরিণামে দুদকের কর্মকর্তারা সারাদেশে মানববন্ধন ও অ্যাসোসিয়েশন করল। এতে দুদকের ভাবমূর্তি প্রচণ্ডভাবে ক্ষুণ্ন হল। কিন্তু দুদক এই ব্যাপারে গা করলেন না।”
আওয়ামী লীগের জোট শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, “শরীফ উদ্দিনের চাকরিতে পুর্নবহালের জন্য দরখাস্ত করল, সেটাও মানলো না। সে এখন হাই কোর্টে গেল। বিচারধীন বিষয়ে কথা বলব না। কিন্তু কী কারণে একজন কর্মকর্তাকে, যাকে দুই দিন আগে অতি উত্তম কর্মচারী বলেছেন, তাকে এক কলমের খোঁচায় চাকরিচ্যুত করলেন। কারণ সে এমন কিছু বিষয়ে তদন্ত করছিল, যার ভিত্তিতে যে বিষয়গুলো এসেছিল, যা জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে শরীফ উদ্দিনের করা তদন্তের প্রসঙ্গ তুলে ধরে মেনন বলেন, “এসব কারণে যদি তাকে বরখাস্ত করা হয়, তাহলে নিশ্চয় বরখাস্ত করার পেছনে ‘শক্ত হাত’ রয়েছে। তাকে বরখাস্তের পরে বিষয়গুলোর পুনঃতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে দুদক।”
তিনি বলেন, “আমি জানতে চাই, আসলে কেন এটার পুনঃতদন্ত হবে? যেখানে মামলা হয়ে গেছে, কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে; এটা কোন স্বার্থে? কোন জায়গা থেকে? আমার কথা হল- সংসদ জানতে চায়, যেখানে মামলা হয়ে গেছে, মামলায় কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন কেন এটা পুনঃতদন্ত হবে? কোন স্বার্থে হঠাৎ করে এই পুনঃতদন্ত?”
মেনন বলেন, “দুদক যখন এই ধরনের অসাংবিধানিক, অনৈতিক কার্যক্রম… বিষয়টি সংসদের খতিয়ে দেখা দরকার।”
এ বিষয়ে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর স্বাক্ষর করা এক প্রজ্ঞাপনে কমিশনের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের আদেশ জারি হয়।
পরদিন ওই আদেশ প্রত্যাহার এবং ৫৪(২) বিধি বাতিলের দাবিতে দুদক সচিবকে স্মারকলিপি দেন কমিশনের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ সংস্থাটির অন্যান্য দপ্তরে মানববন্ধন হয়।
শরীফ দাবি করেন, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ‘প্রভাবশালীদের রোষে পড়ে’ তাকে চাকরি হারাতে হয়েছে।
পরে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন ২০ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, শরীফ উদ্দিনকে ‘শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে’ বিধি অনুযায়ী চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন চাকরি বিধিমালা-২০০৮ এর ৪৮ বিধির আওতায় অপসারণ আদেশ পুনঃনিরীক্ষণ করতে কমিশনে আবেদন করেন শরীফ। চাকরি ফেরত চেয়ে তিনি উচ্চ আদালতেও আবেদন করেছেন।