বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সম্পাদক পদে ভোট গণনা নিয়ে নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে আটকে থাকা সব পদের ফলাফল ঘোষণার জটিলতা কাটাতে সাবেক সভাপতি-সম্পাদকদের সাথে বসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষে বুধবার (৩০ মার্চ) কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি ১৩ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি মো. জালাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভা পরিচালনা করেন সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। সভায় কার্যনির্বাহী কমিটির আরেক সহ-সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ, দুই সহ-সম্পাদক ও সাতজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ৭ দিনের মধ্যে সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকগণ একত্রে বসে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করবেন বলে সভা থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমিতির কার্যকরি কমিটির সকল সদস্যের স্বাক্ষর নিয়ে তা সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকবৃন্দের কাছে প্রেরণ করা হবে। সমিতির সহ-সভাপতিদ্বয় সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বৈঠকের সময় ও স্থান নির্ধারণ করবেন।
প্রসঙ্গত, ত্রিমুখী জটিলতার কারণে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভোটগ্রহণের ১৫ দিন পার হলেও নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল এখনো জানা যায়নি।
প্রথমত, সম্পাদক পদ নিয়ে সরকারপন্থীদের (সাদা প্যানেল) ভোট পুন:গণনার দাবি। দ্বিতীয়ত, তাদের এই দাবির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহবায়কের পদত্যাগ। তৃতীয়ত, সরকারপন্থীদের দাবি অনুযায়ী সমস্যা সমাধানে নতুন আহ্বায়ককে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের আপত্তি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের জন্য এমন পরিস্থিতিকে নজিরবিহীন ও বিব্রতকর আখ্যা দিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনবিদেরা বলছেন, এ সমস্যার দ্রুত সুরাহা হওয়া উচিৎ।
সাদা প্যানেল সমর্থিত আইনজীবীরা সম্পাদক পদের ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট পুন:গননার দাবিতে এখনো অনড় রয়েছেন। ভোটের পর প্রায় প্রতিটি কর্মদিবসে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সরকারপন্থী আইনজীবীরা অবস্থান ও সমাবেশ করছেন।
অন্যদিকে নীল প্যানেলের আইনজীবীরা বলছেন, ভোটে তাদের সম্পাদক প্রার্থী এগিয়ে আছেন। পুনরায় ভোট গণনায় কোনো বিধান নেই এবং এর প্রয়োজনও নেই।
উল্লেখ্য, গত ১৫ ও ১৬ মার্চ উৎসবমুখর পরিবেশে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২২-২০২৩ মেয়াদের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। সমিতির অডিটোরিয়ামে একযোগে ৫২টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৮ হাজার ৬২৩ জন। তবে দুইদিন ব্যাপী নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ৫ হাজার ৯৯১ জন আইনজীবী।
প্রতিবছরের মতো এবারও সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির মোট ১৪টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে সম্পাদকীয় ৭টি ও সদস্য পদ রয়েছে ৭টি। এবারের নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে ৩৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচনী সাব-কমিটি (নির্বাচন কমিশন) নির্বাচন পরিচালনা করেন।
কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি, সহ-সভাপতির দুটি এবং সদস্যের তিনটি পদসহ মোট ছয়টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত (সাদা প্যানেল) প্রার্থীরা ভোটের অনানুষ্ঠানিক যোগফলে এগিয়ে ছিলেন। আর সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সহ-সম্পাদকের দুটি এবং সদস্যের চারটি পদসহ মোট আটটি পদে এগিয়ে ছিলেন বিএনপি সমর্থিত (নীল প্যানেল) প্রার্থীরা।