বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০০১ একটি সাধারণ আলোচনা
শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান

অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট পদের পরিচয় ও একজন মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার: সংক্ষিপ্ত কর্মবৃত্ত

শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান: অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট বা অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট (Honorary Magistrate) একটি ঐতিহ্যবাহী পুরাতন পদ। এই পদটিকে জাস্টিস অব দি পিসও (Justice of the Peace) বলা হয়। জানা যায়, ১৭২৬ সালে এই পদের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বা মফস্বল এলাকার কল্যাণের জন্য এ পদটি সৃষ্টি হয়েছে। অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির হয়ে থাকে এবং তা নিয়োগপত্রে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত হয়।

বিচার প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতা যোগ্যতার উন্নতির মাধ্যমে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটরা ক্রমে ক্রমে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হন। অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটদের কোর্টকে অনারারি ফৌজদারি কোর্ট বা অনারারি কোর্ট বলা হয়। অনারারি কোর্টে ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা শ্রেণি অনুযায়ী একটি বা দুটি বেঞ্চ ও পুলিশ অফিসার এবং অন্যান্য কর্মচারী নিযুক্তসহ সরঞ্জামাদি প্রদান করা হয়।

অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটগণ সমাজে অত্যন্ত সম্মানীয়। তাঁরা ছোটখাট ও লঘু অপরাধের ফৌজদারি বিচারকার্য সম্পন্ন করেন। তাঁরা সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগ বা পুলিশের প্রদত্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বা অপরাধ সংঘটনে নিজেদের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কোনো অপরাধ আমলে নিতে পারেন।

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ (১৮৯৮ সালের ৫নং আইন) প্রণয়নের সময় এই আইনের ২২ থেকে ২৫ ধারায় এ সংক্রান্ত বিস্তারিত বিধান করা হয়।

পরবর্তীকালে দি ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯২৩ (১৯২৩ সনের ১২ নং আইন) দ্বারা ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর উক্ত বিধানের কিছুটা সংশোধন আনয়ন করা হলে উক্ত আইনের ২৩ ও ২৪ ধারা রদ করা হয়। বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয়তার বিবেচনায় প্রায় তিনশ বছরের এই পুরাতন পদটি ফৌজদারি কার্যবিধিতে এখনও বলবৎ রয়েছে।

আইনের প্রখ্যাত ভাষ্যকার গাজী শামছুর রহমান (১৯২১-১৯৯৮) তাঁর ‘ফৌজদারী কার্যবিধির ভাষ্য’ গ্রন্থে ফৌজদারি কার্যবিধির ২২ ও ২৫ ধারায় ব্যাখ্যায় অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট বা জাস্টিস অব দি পিস সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন। আইনের কমিশনের ‘আইন-শব্দকোষ’ গ্রন্থে এ পদটি সম্বন্ধে বলা হয়েছে :

জাস্টিস অব দি পিস একটি অতি পুরাতন পদ। সম্ভবত ১৭২৬ সালে এই পদের সৃষ্টি হয়। The Code of Criminal Procedure, 1898 ২৫ ধারা-অনুসারে সুপ্রীম কোর্টের প্রত্যেক বিচারক পদাধিকার বলে সমগ্র বাংলাদেশের জাস্টিস অফ দি পিস; দায়রা বিচারক ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ এবং মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটগণ পদাধিকার বলে তাঁহাদিগের অধিক্ষেত্রভুক্ত এলাকার জন্য জাস্টিস অব দি পিস থাকেন। ২২ ধারা-অনুসারে সরকারি গেজেটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিয়া বাংলাদেশের বাসিন্দা ও কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিক নহেন; এইরূপ যে-কোনো ব্যক্তিকে বিজ্ঞপ্তি উল্লিখিত কোনো স্থানীয় এলাকার জন্য জাস্টিস অব দি পিস বা অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করা যাইতে পারে। এইরূপ ক্ষেত্রে নিয়োগপত্রে তাঁহাদের কর্তব্য ও অধিকারের বর্ণনা দেওয়া হইয়া থাকে।
(উদ্ধৃত : আইন-শব্দকোষ : বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও অন্যান্য, আইন কমিশন, পৃ. ৬৮৬)

উল্লেখ্য, অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট কি কি দায়িত্ব প্রতিপালন করেন এবং তাঁর অধিকার ও ক্ষমতা কি, সেসব বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধিতে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো বিধান নেই। বিশেষ আইন দ্বারা তাদের দায়িত্ব এবং অধিকার নির্ণীত হয়ে থাকে। এ কারণে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট পদধারী ব্যক্তির নিয়োগপত্রে তাঁদের কর্তব্য এবং অধিকারের বর্ণনা দেয়া হয়। পাক-ভারত উপমহাদেশে বেশ ক’জন খ্যাতিমান ব্যক্তি এ পদ লাভ করেছেন।

তাঁরা সবাই জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দক্ষতায় অনন্য ছিলেন। অবিভক্ত বাংলায় বেশ ক’জন স্থানীয় এলিট, জনপ্রতিনিধি, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিক অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তাঁরা ক্ষমতানুযায়ী শ্রেণিভেদে এজাহার গ্রহণ, সরাসরি বিচার, অন্য বিচারকের নিকট রেকর্ড দেওয়ার ক্ষমতা, অভিযোগ গ্রহণের সময় হতে সোপর্দ করার ক্ষমতা লাভ করতেন।

অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটরা এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। স্থানীয় পর্যায়ে এই অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটগণ আইনাঙ্গনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের এই অবদানের উপর গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। তাঁদেরকে বর্তমানের বিচার ব্যবস্থার সামনে আনা হলে এবং এ পদটি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবহৃত হলে দেশের অভ্যন্তরে ঝুলে থাকা লক্ষ লক্ষ মামলার জট কমাতে সহায়ক হবে।

সমকালে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচার প্রক্রিয়াকে কোনোভাবে অস্বীকার যায় না। এ প্রেক্ষিতে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট বা জাস্টিস অব দি পিসদের জীবন ও কর্মের গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁরা দেশের জাতীয় ইতিহাসের অংশ। বর্তমান প্রজন্ম বা তাদের প্রজন্মান্তরের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এসব অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটদের সম্বন্ধে ধারণা, পরিচিতি না জানলে ক্ষতি তাদেরই।

এদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে এ রকম একজন অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার (১৯০৫-১৯৮৫)। তিনি ছিলেন একাধারে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী, সমাজসেবী ও সাহিত্যিক। মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার বিশ শতকের চল্লিশের দশকে বৃহত্তর জামালপুরের বর্তমান শেরপুর জেলাসহ বকশিগঞ্জ উপজেলার অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। এদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন নেপথ্যে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষ করে বর্তমান জামালপুর ও শেরপুর জেলার ইতিহাস এবং ঐতিহ্যে তাঁর নাম প্রাতঃস্মরণীয়।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে এ অঞ্চলের বর্তমান প্রজন্মের কাছে তিনি এখন প্রায় বিস্মৃত। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না; বিশ শতকের আশির দশক পর্যন্ত তিনি এই অঞ্চলের নানাবিধ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বীজ বপন করেন। যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।

এ অঞ্চলের অনগ্রসর মানুষকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। এই হিসেবে তিনি জাতীয় ইতিহাসের অংশ। তাঁদেরই নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই এক সময়ের অবহেলিত এবং অনুন্নত বৃহত্তর জামালপুর মহকুমা এখন শেরপুর ও জামালপুর দুটি সমৃদ্ধ জেলায় পরিণত হয়েছে। এ প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার-এর জীবন ও কর্মের সংক্ষিপ্ত আলোচনার প্রয়াস করেছি।

জানা য়ায়, মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার ১৯০৫ সালে বর্তমান বকশিগঞ্জ উপজেলার নিলক্ষিয়ার তৎকালীন পাতিলাদহ পরগনার সম্ভ্রান্ত মুসলিম জোতদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে বকশিগঞ্জ ছিল দেওয়ানগঞ্জ থানার একটি গ্রাম। ১৯৩৭ সালে দেওয়ানগঞ্জ থানার অন্তর্ভুক্ত বকশিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা হয়। পরে ১৯৮২ সালে বকশিগঞ্জ থানা, তারপরে ১৯৮৩ সালে উপজেলা করা হয়।

মির্জা আশরাফ উদ্দিনের পিতার নাম মির্জা আসাদ উদ্দিন হায়দার ও মাতার নাম তৈবুন নেসা। এ সম্বন্ধে ‘জামালপুরের গণইতিবৃত্ত (১৯৫৪) গ্রন্থে রয়েছে :

মির্জ্জা আসাদ উদ্দিন হায়দার, ঢাকার প্রাচীনতম মোগল জমিদার মির্জ্জা জানে নাজনীন হায়দার সাহেবের বংশধর এবং হাজারাদি (বর্তমান ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ অংশ বিশেষ) পরগনার জমিদার পরিবারের সন্তান। মির্জ্জা আসাদ উদ্দীন হায়দার সাহেব নিলক্ষিয়ার যোতদার শেখ জয়েনুল আবেদীন সাহেবের কন্যাকে বিবাহ করেন। এই বিবাহের ফলে মির্জ্জা আশরাফ উদ্দীন হায়দার সাহেব জন্মগ্রহণ করেন। … এই মির্জাগণ বহুপূর্ব্বে মধ্য এশিয়ার মঙ্গোলিয়ার অন্তর্গত সমরকন্দ নগরীর অধিবাসী ছিলেন। বাবরের ভারত বিজয়ের সময় ইহারা ভারতে আসেন এবং শের সাহেবের সহিত যুদ্ধে বাবরের ভাগ্য বিপর্যয়ের সময় ইহারা পারস্যের সিরাজ নগরে গিয়ে বাস করিতে থাকেন। ইহার পর ভারতে আবার মোগল স¤্রাজ্য কায়েম হইলে ইহারা পুনরায় ভারতে আসেন এবং বাংলার নওয়াব আলিবর্দি খানের বিশেষ আনুকূল্য লাভ করিয়া ঢাকায় বাস করিতে থাকেন। ইহার পর রাজানুগ্রহে তপে হাজরাদি পরগনায় জমিদারী প্রাপ্ত হইয়া তথায় চলিয়া আসেন।
[উদ্ধৃতি : জামালপুরের গণইতিবৃত্ত : গোলাম মোহাম্মদ (প্রথম প্রকাশ : ১৯৫৪) আমেনা প্রেস, জামালপুর, পৃ. ১৮-১৯]

শিশুকালে মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দারের মা ইন্তেকাল করেন। তিনি তাঁর নানীর আদর স্নেহে লালিত পালিত হন। আশরাফ উদ্দিন হায়দার পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর ১৯১৩ সালে ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তি করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানে তিনি কয়েক বছর পড়াশোনা করেন। এ সময় মহাত্মা গান্ধীর (১৮৬৯-১৯৪৮) ডাকে অবিভক্ত বাংলাসহ সারা ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। এই আন্দোলনের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে বঙ্গভঙ্গের (১৯০৫) সময়ও ভারতবর্ষের এ রকম মূর্তি ধারণ করেনি।

দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বৃহত্তর জামালপুরেও গান্ধীজি বাদীর ধারা ছড়িয়ে পড়ে। মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা না দিয়েই গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনে নেমে পড়েন। পরবর্তীকালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের (১৮৭০-১৯২৫) সঙ্গে ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদীর একজন খাটি সংগ্রামী কর্মী হিসেবে নিজেকে তৈরি করেন। এ সময় তিনি ভারতের বিভিন্ন স্থানে মিটিং মিছিলে নেতৃত্ব দেন।

এ কারণে তিনি কিছুটা দেরিতে ১৯৩৯ সালে বর্তমান শেরপুর জেলার গোবিন্দকুমার (জি. কে.) পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন [(তথ্যসূত্র : বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা : জামালপুর : শামসুজ্জামান খান (প্রধান সম্পাদক), প্রথম প্রকাশ : ২০১৩, বাংলা একাডেমি, পৃ. ৭৫]।

তবে পারিবারিক একটি সূত্রে জানা যায়, তিনি ১৯৩৯ সালে বকশিগঞ্জের রুপজাহান (আর. জে.) পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে মেট্রিক পাশ করেন। অতঃপর তিনি ১৯৪১ সালে বর্তমানে সরকারি আনন্দমোহন (এম. এম.) কলেজ থেকে আই. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে এ কলেজে বি. এ. ক্লাসে ভর্তি হন কিন্তু লেখাপড়া সম্পন্ন না করেই দেশের ডাকে এ অঞ্চলের জাতীয়তাবাদী প্রগতিশীল রাজনীতিসহ নানা জনহিতকর কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে যুক্ত করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বপর্যন্ত বৃহত্তর জামালপুরের বকশিগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, শেরপুর (তখন থানা) অঞ্চলে অনেক জনসেবামূলক কাজ করেন। জনহিতকর কাজের জন্য ব্রিট্রিশ রাজ সরকার তাঁকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখত। এ সময় ব্রিটিশ সরকার তাঁকে অঞ্চলের জন্য অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট বা জাস্টিস অফ দি পিস নিযুক্ত করে। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে প্রথম শ্রেণির অনারারি ম্যাজিস্টেট নিযুক্ত প্রশংসিত ও সম্মানিত করেছিল। চল্লিশ দশকের পুরো সময় তাঁর বেঞ্চকোর্টে তিনি স্থানীয় ছোটখাট অনেক ফৌজদারি মামলার সুষ্ঠু বিচার করে নিষ্পত্তি করেন।

তিনি সমকালে গঠিত ইউনিয়ন বোর্ড (বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ), স্পেশাল ঋণ শালিসি বোর্ডসহ বিভিন্ন সংগঠনের গুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সমকালীন জাতীয় রাজনীতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক (১৮৭৩-১৯৬২), হোসেন শহিদ সোহ্রাওয়ার্দীসহ সমকালের অনেক নেতৃবর্গের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও পরিচয় ছিল।
(তথ্যসূত্র : Sebahotnews.org/2019; Accessed ১৫ জুন ২০১৯)

মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার বাংলাদেশ আমলেও সত্তর দশকে দ্বিতীয় বার জামালপুরের প্রথম শ্রেণির অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হয়েছিলেন। এই দায়িত্ব তিনি দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (১৯২০-১৯৭৫) সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও যোগাযোগ ছিল। বঙ্গবন্ধু জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, শেরপুরে এলে তাঁর খবর রাখতেন।

আশরাফ উদ্দিন হায়দার এ অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বেশ কটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বকশিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী নিলক্ষিয়া রূপজাহান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ, জাামালপুর হাইস্কুল এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও তিনি নিলক্ষিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামালপুরের দেউরপাড়া চন্দ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় প্রধান উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন। (তথ্যসূত্র : প্রাগুক্ত)

একজন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবেও তিনি এ অঞ্চলে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি বেশকটি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও পরিচালনা ও প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি এ অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা নিরাপত্তা রক্ষার জন্য গ্রাম-প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করেন।
প্রখ্যাত কামেল পুরুষ হযরত শাহজালাল (র.)-এর পুণ্যভূমি জামালপুরের মাটি- অথচ তাঁর নামে কোনো মৌজা, গ্রামহাট-বাজার বা কোনো স্থাপনার নাম ছিল না। মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার জামালপুর শহরের রেল স্টেশনের নাম সিংহজানী জংশন থেকে জামালপুর টাউন জংশন নাম পরিবর্তনের কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। ফলে ১৯৫৪ সালের ১৪ই আগস্ট এক সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জামালপুর টাউন জংশন নামকরণ করা হয়। (তথ্যসূত্র : প্রাগুক্ত)

এ অঞ্চলে সংবাদপত্র প্রকাশ ও সাংবাদিকতায় তাঁর ভূমিকা অনন্য। তিনি এ অঞ্চলের সাংবাদিকতার উন্মেষকালে সাংবাদিকতা করেছেন এবং তওফিক নামে ১৯৫০ সালে সাপ্তাহিক সংবাদপত্রের প্রকাশক-সম্পাদক-মুদ্রকের ভূমিকা পালন করেছেন।

তাঁর প্রতিষ্ঠিত মুদ্রণালয়ের নাম ছিল আমেনা প্রেস। এ প্রেস থেকে গোলাম মোহাম্মদের প্রণীত ‘জামালপুরের গণইতিবৃত্ত’সহ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত ও মুদ্রিত হয়েছিল। মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার সাহিত্যিক হিসেবেও সমকালে সুধীমহলে পরিচিত ছিলেন। তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থ : ‘আসামের জঙ্গলে’ ও উপন্যাস ‘মায়ার ভিটা’ বিখ্যাত। আসামরে জঙ্গলে গ্রন্থটি একটি ভ্রমণ কাহিনি।

তিনি ১৯৫৩ সালে জামালপুরে আয়োজিত একটি সাহিত্য সম্মেলনের অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৭ সালে মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার সম্পাদনা করেন ‘ঝিনাই’ নামের আরও একটি পত্রিকা (তথ্যসূত্র : ‘রজত জয়ন্তী : জামালপুর জেলা’ স্মরণিকা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ২০০৩, পৃ. ৪৭)

এ অঞ্চলের কৃষকদের তিনি সমবায় কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ব্যবসায় ও কৃষির সাথে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক ছিল। দরিদ্র জনসাধারণকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করতে তাঁর প্রচেষ্টা ছিল নিরন্তর। তাঁকে এখনকার সমবায় আন্দোলনের পুরোধা বলা যায়।

তিনি ১৯৫৫ সালে জামালপুর সেন্টাল-কো-অপারেটিভ ব্যাংক (ব্রিটিশ আমল থেকে বিবর্তিত হয় বর্তমানে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি.) প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন। উল্লেখ্য, সমকালে বিভিন্ন অঞ্চলে কো-অপারেটিভ ব্যাংকগুলো বর্তমানে ব্যাংক অর্থে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ছিল না। কতগুলো গ্রামে নিয়ে রেজিস্টার্ড সোসাইটির অর্থ এসব কো-অপারেটিভ ব্যাংকে জমা থাকতো। এখান থেকে কৃষকগণ টাকা উত্তোলন ও জমা রাখতে পারতেন। (তথ্যসূত্র : Sebahotnews.org/2019; Accessed ১৫ জুন ২০১৯)

মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার বৃহত্তর জামালপুর অঞ্চলে সমবায় গঠনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি ১৯৫৯ সালে দি জামালপুর কো-অপারেটিভ ইলেক্ট্রিভ সাপ্লাই সোসাইটি লি. প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা পালন করেন।
সমকালে মহকুমা ও থানাগুলোতে খুবই সামান্য পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিতরণের ব্যবস্থা ছিল। একাজগুলো কয়েকটি কোম্পানির মাধ্যমে হতো। ১৯৫৯ সালে সরকার ওয়াটার অ্যান্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ সময় মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়ধার এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ উক্ত সোসাইটির মাধ্যমে অবদান রাখেন। এছাড়া তিনি শহরে পানি সরবরাহের জন্য ওয়াটার ওয়ার্কস নির্মাণ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। (তথ্যসূত্র : প্রাগুক্ত)

তিনি ১৯৬৫ সালে জামালপুর সাব ডিভিশন কো-অপারেটিভ মালটি পারপাস সোসাইটি লি. ও ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান কো-অপারেটিভ ইউনিয়ন লি. (বর্তমানে বিবর্তিত হয়ে সমবায় অধিদপ্তর) এ দুটি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। (তথ্যসূত্র : প্রাগুক্ত)

মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার এ অঞ্চলে দৃষ্টিহীন মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য অন্ধ সমিতি গঠন করে অবদান রাখেন। তিনি ১৯৬২ সালে জামালপুরে অন্ধ-কল্যাণ সমিতি প্রতিষ্ঠা করে বিনা পয়সায় চক্ষু চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেন। তিনি এখানে কলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার টি. আহমেদের নেতৃত্বে চক্ষু অপারেশনে মেডিক্যাল ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। (তথ্যসূত্র : প্রাগুক্ত)

মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার ১৯৬০ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জামালপুর পৌরসভার (স্থাপিত ১৮৬৯) নির্বাচিত ভাইস-চেয়ারম্যান (বর্তমানে মেয়র) ছিলেন। এ সময় পাবলিক হল, পাবলিক লাইব্রেরি, স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন।

মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার জামালপুরের চন্দ্রায় ১৯৫৭ সালে সুপ্রাচীন বিরাটকার হরিশচন্দ্রের দিঘি ক্রয় করে তা খনন ও সংস্কারের মাধ্যমে মৎস চাষ জনপ্রিয় করেন। এছাড়া বকশিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কুরখা ও ভরসা বিল দুটি সংস্কার করে কৃষি শস্যের চাষের উন্নতিতে অবদান রাখেন। মোটকথা, সারাজীবন ধরে জনদরদি ভূমিকায় অবস্থান করেছিলেন।

অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার-এর কীর্তিকথা এ অঞ্চলের প্রবীণদের মুখে এখনও শোনা যায় এবং স্থানীয় ইতিহাসের বিভিন্ন পুস্তকে লিপিবদ্ধ রয়েছে। মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দারের অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে জামালপুর হাইস্কুলের অডিটোরিয়ামটি তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তবুও তাঁর স্মৃতিকে জাগরুক রাখার জন্য জামালপুর শহরের প্রধান একটি রাস্তার নামকরণ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ ও পৌরসভার প্রধান নির্বাহীগণ উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। তা নাহলে সময়ের স্রোতে এ কীর্তি ব্যক্তির নাম, স্মৃতিচিহ্ন হারিয়ে যাবে। নতুন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের সন্তানেরা এ ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে পারবে না। ফলে জাতি ক্ষতিগ্রস্থ হবে, জাতীয় জীবন বাধাগ্রস্ত হবে।

উল্লেখ্য, বাংলা একাডেমির লোকজ-সংস্কৃতি গ্রন্থমালা : জামালপুর গ্রন্থে মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দারের নামে একটি ভুক্তি আছে এবং সেখানে তার সামান্য ইতিহাস উল্লেখ করা হয়েছে।

মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার ১৯৮৫ সালের ১০ই জুন ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি এক কন্যা ও দুইপুত্র সন্তান রেখে যান।

তাঁর পুত্র-কন্যা-পৌত্ররাও কীর্তিমান। তাঁর মামাতো ভাই আজিজুর রহমান নান্না মিয়া অবিভক্ত বাংলার আইন সভার সদস্য (এমএলসি) ছিলেন। তাঁর কন্যা কানিজ ফাতেমার সঙ্গে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিচারপতি আবুল ফজল মোহাম্মদ আহসান উদ্দিন চৌধুরীর (১৯১৫-২০০১) বিবাহ হয়। মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার পুত্র-কন্যাদের উচ্চ শিক্ষা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর কন্যা আঞ্জুমান আরা জামান ছিলেন ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ডিগ্রিধারী। পূর্বপাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশের পৃথিকৃৎ দন্ত চিকিৎসক সার্জন ফখরুজ্জামানের (এফ জামান) সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়।
(তথ্যসূত্র : আমার দেশ আমার জীবন : সৈয়দ আব্দুস সাত্তার, পৃ. ১৮)।

তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র ডাক্তার মির্জা আলী হায়দার বাংলাদেশের প্রখ্যাত দন্ত চিকিৎসক। তিনি ছিলেন দন্ত চিকিৎসক সমাজের অতিপ্রিয় মুখ এবং ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজের ডিএমসিআর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি। তিনি ২০১৭ সালের ২২শে মার্চ ইন্তেকাল করেন।

মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দারের কনিষ্ঠ পুত্র মির্জা হোসাইন হায়দার বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের বিচারক। তিনি কর্মক্ষেত্রে ছিলেন অনন্য বিচারক। বিচারপতি জীবনে তিনি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলার ঐতিহাসিক এবং সময়োপযোগী রায় দিয়েছেন।

তিনি হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন ১৯৮১ সালে। তিনি খ্যাতনামা আইনজীবী খন্দকার মাহবুব উদ্দিনের সঙ্গে জুনিয়র হয়ে কাজ করার দুর্লভ সুযোগ লাভ করেন।
(তথ্যসূত্র : বকশিগঞ্জের ইতিকথা ও লোকসংস্কৃতি, পৃ. ৮৬-৮৭)।

বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দারের পরিবারের বৈশিষ্ট্য খুব কম পরিবারেই দেখা যায়। পাক ভারত উপমহাদেশে এরকম অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটদের জীবন ও কর্মের ওপর গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।

বর্তমানে বাংলাদেশে মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দারের মতো প্রগতিশীল চিন্তাধারাটি বিলুপ্ত হতে বসেছে। এসব অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচার প্রক্রিয়া দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

এরকম বেশ কজন অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট এদেশে রয়েছেন- যাঁদের কর্ম ও চিন্তাধারা দেশের জাতীয় ইতিহাসের অংশ। যাঁরা নিজ নিজ অঞ্চলে নেতাজি-গান্ধীজী-চিত্তরাঞ্জদাশের আদর্শে অটল থেকে কাজ করে গেছেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

তাঁদের নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলে এক সময়ের অবহেলিত ও অনুন্নত দেশ এখন সমৃদ্ধ এবং উন্নত বাংলাদেশের পথে অগ্রসরমান। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দারের জীবন, কর্ম ও চিন্তাধারা এবং তাঁর মতো দেশে বিস্মৃত প্রায় অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট বা জাস্টিস অব দি পিসরা বিচার বিভাগের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

(এ লেখাটি তৈরিতে বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার স্যারের কয়েকটি তথ্য প্রদানে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।)

লেখক : গবেষক