গার্ড অব অনার ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন, ক্ষমা চাইলেন ইউএনও
সুপ্রিম কোর্ট

গার্ড অব অনার ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন, ক্ষমা চাইলেন ইউএনও

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব শিকদারকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা গার্ড অব অনার ছাড়া দাফনের ঘটনায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. মোরশেদা খাতুন।

আজ মঙ্গলবার (৭ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চে দাখিল করা এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

হাইকোর্টের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

দাখিলকৃত প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ইউএনও মোছা. মোরশেদা খাতুন বলেছেন, অনিচ্ছাকৃত ও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এ ভুল হয়েছে। এ জন্য ক্ষমা প্রার্থী তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তিনি জানান, এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আদালত তখন আদেশ দেবেন।

এর আগে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালককে (ডিজি) বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন।

একইসঙ্গে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।

তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট

গত ৩১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব শিকদারকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া দাফনের ঘটনা তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব শিকদারের কবরস্থানে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রানা সিকদারের পক্ষে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এ রিট দায়ের করেন।

রিটে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব শিকদারকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ‘গার্ড অব অনার’ ছাড়া দাফনের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। এসময় আদালত বলেন, গার্ড অব অনার ছাড়া দাফন করে মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করা হয়েছে। এটা সহ্য করা যায় না।

একই সঙ্গে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব শিকদারকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া দাফনের ঘটনা তদন্তে ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রুল জারি করেন আদালত।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ জানুয়ারি রাতে বাজিতপুর পৌরসভার দক্ষিণ রাবারকান্দির বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব শিকদার মারা যান। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর পুলিশ উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এ জন্য মুক্তিযোদ্ধাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া যায়নি। পরে ২৯ জানুয়ারি বিকালে স্থানীয় রাবারকান্দি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তবে তার জানাজায় গার্ড অব অনার না দেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও উত্তেজনার ঘটনা ঘটেছে।