ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে করা জরিমানার অর্থ সঠিকভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে কি না, জরিমানার অর্থের ওপর নিরীক্ষা (অডিট) হচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখা ও আইনের বিধান অনুসারে নিরীক্ষা করার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জেলা প্রশাসক ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি তদারক করতে বলেছেন আদালত।
মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শরীয়তপুরে করা এক মামলায় বিচারিক আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দুই আসামির আপিল শুনানি শেষে সোমবার (২০ জুন) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেন।
ওই দুই আসামি হলেন- শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক অফিস সহকারী মো. ইমাম উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী কমলা আক্তার।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিভিন্ন ধারায় ইমাম উদ্দিনের ২৮ বছর ও কমলা আক্তারের ৫ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। হাইকোর্ট কমলার আপিল মঞ্জুর করে ও ইমামের আপিল খারিজ করে রায় দিয়েছেন।
আদালতে আপিলকারীদের পক্ষে আইনজীবী তাপস কান্তি বল শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুন নেছা।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন বলেন, দেশে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার টাকা ঠিকমতো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে তদারক করতে হবে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে এসেছে। কারণ, জরিমানার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে না। জরিমানার টাকার নিরীক্ষা করতে হবে বলেও পর্যবেক্ষণে এসেছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ভুয়া চালানের মাধ্যমে ইমাম উদ্দিন অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু কিছু টাকা জমাও দিয়েছেন। এরপরও তাঁর কাছে রাষ্ট্রের ৮৯ লাখ টাকা পাওনা আছে। হাইকোর্ট ইমামের সাজা বহাল রেখে ওই টাকা জমা দিতে বলেছেন। আর কমলাকে খালাস দিয়েছেন।
এদিকে ইমাম ও কমলার আইনজীবী তাপস কান্তি বল বলেন, ২০১৭ সাল থেকে ইমাম কারাগারে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। কমলা জামিনে আছেন। তাঁর আপিল হাইকোর্ট মঞ্জুর করেছেন। তিনি এ মামলায় খালাস পেলেন।
আইনজীবী সূত্রের তথ্যমতে, ২০১৫ সালের ১৮ জুন ইমাম-কমলা দম্পতির বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের পালং মডেল থানায় মামলাটি করেন শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা।
মামলায় অপরাধ সংঘটনের সময় ২০১০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ২৬ মে পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়। তখন ইমাম উদ্দিন ভ্রাম্যমাণ আদালতে বেঞ্চ সহকারীর দায়িত্ব পালন করতেন।
ওই সময় শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৮৫৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। সেখানে ৩ হাজার ৫৯৫টি মামলায় জরিমানা ও দণ্ড হিসেবে আদায় করা হয় ১ কোটি ৫ লাখ ৩০ হাজার ৫৫০ টাকা। ওই অর্থ শরীয়তপুরের সোনালী ব্যাংক শাখায় জমা দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন ইমাম।
তবে ইমাম টাকা জমা না দিয়ে শরীয়তপুর সোনালী ব্যাংক শাখার নামে ৭৫৪টি ভুয়া চালান তৈরি করেন এবং টাকা জমা দেখিয়ে ১ কোটি ৮০ হাজার ৪০০ টাকা আত্মসাৎ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। তখন একই কার্যালয়ে কর্মরত ইমামের স্ত্রী কমলার বিরুদ্ধে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়।
তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি ইমাম ও কমলার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ওই মামলায় ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রায় দেন ফরিদপুরের বিশেষ জজ আদালত। রায়ে বিভিন্ন ধারায় ইমামকে ২৮ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। আদালতের রায় অনুযায়ী, সব সাজা একসঙ্গে চলবে। সে হিসাবে ইমামকে ১০ বছর কারাভোগ করতে হবে।
রায়ে কমলাকে আলাদা ধারায় আট বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। বলা হয়, সাজা একসঙ্গে চলবে। সে হাসেবে কমলার কারাভোগের সময় দাঁড়ায় পাঁচ বছর। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে হাইকোর্ট ইমাম ও কমলা পৃথক আপিল করেন।