প্রধান বিচারপতির নির্দেশে বগুড়ার সেই বিচারককে প্রত্যাহার
বিচারক (প্রতীকী ছবি)

জামিনে থাকা আসামিকে কারাগারে প্রেরণ: নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন বিচারক

উচ্চ আদালতের দেওয়া জামিন থাকা সত্ত্বেও আসামিকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যতে নিজ দায়িত্বের প্রতি সতর্ক থাকবেন বলে অঙ্গীকার করে অব্যাহতি পেয়েছেন জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু।

বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার (২০ জুন) হাজির হয়ে তিনি মৌখিকভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট তা মঞ্জুর করে তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

হাইকোর্টের দেওয়া জামিন সত্ত্বেও ‘জামিন আবেদন না মঞ্জুর করা হলো’ বলে দেওয়া আদেশ ‘অসতর্কতাবশত’ ও ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ উল্লেখ করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন এই বিচারক। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে নিজ দায়িত্বের প্রতি সতর্ক থাকবেন বলে অঙ্গীকার করেন তিনি।

শুনানির সময় ওই বিচারকের উদ্দেশ্যে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন বলেন, আমরা তো জামিন আদেশটি বাংলা ভাষায় লিখেছি। বিদেশি ভাষা ব্যবহার করিনি। আপনি কি এই আদেশের মর্মাথ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। হাইকোর্ট যখন জামিন মঞ্জুর করেছেন তখন আপনি কোন এখতিয়ারে সেই জামিন বাতিল করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী জানা যায়, ৫০ ডলারের ৩০টি জালনোট পাওয়ায় জাকিরুলের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর জামালপুর থানায় মামলা করে পুলিশ। এই মামলায় নিম্ন আদালতে বিফল হয়ে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন জাকিরুল। শুনানি শেষে গত বছরের ১০ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল দিয়ে জাকিরুলকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।

পরে মামলাটি বিচারের জন্য জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলি হয়। মামলার ধার্য তারিখে গত ২৪ মে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হন জাকিরুল।

হাইকোর্টের দেওয়া জামিন চলমান রাখার আবেদন করেন এই আসামি। সেদিন জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আসামির জামিন আবেদন ‘নামঞ্জুর করা হলো’ বলে আদেশ দেন।

এই বিষয় হাইকোর্টের নজরে আনা হলে ৬ জুন হাইকোর্ট ওই বিচারককে কারণ দর্শাতে ২০ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।

হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়, আসামির (জাকিরুল) করা ফৌজদারি বিবিধ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসামি–দরখাস্তকারীকে (জাকিরুল) অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন। সেখানে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কীভাবে আসামি–দরখাস্তকারীর জামিন নামঞ্জুর করতে পারেন?

হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে সোমবার সকালে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু আদালত হাজির হয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। তাঁর ভাষ্য, অসতর্কতাবশত আসামি মো. জাকিরুলের জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি উচ্চ আদালতের আদেশের বিষয়বস্তু গভীরভাবে মনোযোগের সঙ্গে পর্যালোচনা করে পরবর্তী আদেশ দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি।

আদালতে মো. জাকিরুলের পক্ষে আইনজীবী মো. সারোয়ার আলম চৌধুরী ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল হাশেম শুনানিতে ছিলেন।

পরে আইনজীবী মো. সারোয়ার আলম চৌধুরী বলেন, জাকিরুলের জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের আদেশের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠান। এই বিষয় নজরে আনা হলে ৬ জুন হাইকোর্ট বিচারককে কারণ দর্শানোর আদেশ দেন। এই আদেশের পর সংশ্লিষ্ট বিচারক জামিন নামঞ্জুরের আদেশ প্রত্যাহার করে নেন। এরপর জাকিরুল ১৫ জুন কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।