হবিগঞ্জে মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগলী) এক নারীর অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও যৌন হয়রানীর ঘটনা তদন্তপূর্বক আসামিদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
স্থানীয় গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদ আমলে নিয়ে আজ রোববার (২৬ জুন) হবিগঞ্জের লাখাই আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন এ আদেশ দেন।
আদেশে এ ঘটনা সরেজমিনে তদন্তপূর্বক আগামী ৩১ জুলাই এর মধ্যে লাখাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে “লাখাইয়ে পাশবিক লালসার শিকার হয়ে পাগলীর ৪ সন্তান, দেখার কেউ নেই” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, লাখাই উপজেলার বুল্লা বাজার এ বছরের পর বছর পাশবিক লালসার শিকার হয়ে এক পাগলীর গর্ভে ৩ সন্তান জন্ম নিয়েছে। আবারো সন্তানসম্ভবা হয়েছে ওই পাগলী। রাতের অন্ধকারে এক শ্রেণির পশুপ্রবৃত্তির লোক পাগলীর অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে ধর্ষন করে যাচ্ছে অবাধে। বছরের পর বছর ধরে সন্তান জন্ম দিলেও দায়িত্ব নেয়নি কেউ। বাজারের উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন ধারণ করছে পাগলী ও তার সন্তানেরা। এ যেন আধুনিক যুগে বন্য প্রাণীর গল্প। সম্পূর্ণ পশু পাখির মত বেওয়ারিশ ভাবে জীবন যাপন করছে পাগলীর পরিবার।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, তাজন বেগম নামের ওই পাগলী লাখাই উপজেলার পূর্ব বুল্লা গ্রামের বাসিন্দা আক্রম আলীর কন্যা। বছর কয়েক আগে তার বিয়েও হয়েছিলো। স্বামীর সংসারে দুই ছেলেও হয় তার। হঠাৎই স্বামীর মৃত্যু হলে ধীরে ধীরে বিভিন্ন কারণে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তার। তার পিত্রালয় লাখাই উপজেলার পূর্ব বুল্লা গ্রামে চলে আসে সে। এক পর্যায়ে স্থানীয় বুল্লা বাজারে আশ্রয় নেয়। গত কয়েক বছর ধরে এ বাজারে থাকাকালীন সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়।
সংবাদ বিশ্লেষণ করে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়, বছরের পর বছর এক শ্রেনির লোক ওই ভিকটিম প্রতিবন্ধীকে (পাগলী) শারিরিকভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে বার বার গর্ভ ধারনের মত ঘটনার জন্ম দিচ্ছেন। এই ধরণের ভিকটিমকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও যৌন হয়রানী বিদ্যমান প্রচলিত আইন অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া ভূমিষ্ঠ হওয়া ০৩ শিশু সন্তানকে স্বাভাবিক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা ও পিতৃ পরিচয় নির্ধারণ অতীব জরুরী মর্মে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়।
জনস্বার্থে ও ন্যায় বিচারের উদ্দেশ্যে এ ঘটনার অপরাধ উদ্ঘাটন, আসামীদের চিহ্নিতকরণ, সংবাদে প্রকাশিত ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত, ভিকটিম ও বাচ্চাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও সন্দেহাভাজন ব্যক্তিদের বিষয়ে ডিএনএ পরীক্ষাসহ বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন বলেও আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়।
এজন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১)(সি) ধারায় প্রকাশিত সংবাদটি আমলে নিয়ে লাখাই থানার ওসিকে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ পূর্বক ও সরেজমিনে তদন্তপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী ৩১ জুলাই এর মধ্যে দাখিলের প্রদান করেন বিচারক। একইসঙ্গে তদন্তকালীন সময়ে অপরাধ উৎঘাটন ও আসামী সনাক্ত করা সম্ভব হলে নিয়মিত মামলা রুজুর নির্দেশ প্রদান করেন।