প্রসঙ্গ : আইন পেশার ইতিহাস ও আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা
অ্যাডভোকেট দীপজয় বড়ুয়া

প্রসঙ্গ প্রতারণা ও অপরাধামূলক বিশ্বাসভঙ্গ এবং আইনি প্রতিকার 

দীপজয় বড়ুয়া: বর্তমানে আমাদের সমাজে বহুল সংগঠিত অপরাধ হচ্ছে- প্রতারণা ও অপরাধামূলক বিশ্বাসভঙ্গ। ব্যক্তি বা যে কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বা প্রতিষ্ঠান যে কোন সময় যে কোন পরিবেশে প্রতারণা ও অপরাধামূলক বিশ্বাসভঙ্গ করতে পারে। বাংলাদেশের ফৌজদারী আদালতে প্রায়ই দন্ডবিধির ৪২০ ও ৪০৬ (প্রতারণা ও অপরাধামূলক বিশ্বাসভঙ্গ) ধারায় মামলা হয়ে থাকে। এই ধারা দু’টির একটি অজামিনযোগ্য এবং অন্যটি জামিনযোগ্য অপরাধ।

যে কোনো কারণে প্রতারণার শিকার হলে কিংবা চাকরির নামে কোনো প্রতারণার শিকার হলে আইনের আশ্রয় খুব সহজেই নিতে পারেন। আপনি দায়ী ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করতে পারেন।

প্রতারণার পাশাপাশি বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগও আনা যায়। ক্ষেত্রবিশেষ দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন। তবে আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে যথেষ্ট প্রমাণ থাকা লাগবে। যেমন কোনো লিখিত চুক্তি, কোনো রসিদ এসব। তাই এ দলিলগুলো সংরক্ষণ রাখা জরুরি।

বিয়ের নামে যদি কেউ প্রতারণামূলকভাবে সংসার করে, এ ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নেওয়া যাবে। দেশ-বিদেশে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার সময় টাকা লেনদেন-সংক্রান্ত চুক্তি ভঙ্গ করলেও প্রতারণার অভিযোগ আনা যাবে।

উদাহরণ

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে উঠবে। কথা ছিল সুকেশকে বৃত্তির ব্যবস্থা করে আমেরিকা পাঠাবে। চুক্তির শর্তানুযায়ী সুকেশের বাবার প্রতিষ্ঠানটিকে তিনটি সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধের কথা। যদি ব্যর্থ হয় তাহলে প্রদেয় টাকা কোনোরকম কর্তন ছাড়াই পরিশোধ করবেন বলে স্বীকার করে দুই পক্ষই স্বাক্ষর করেন। শেষ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি বৃত্তির ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়।

সু্কেশের বাবা তাঁর দেওয়া টাকা ফেরত চান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের প্রধান বলেন, ‘আমরা চুক্তিতে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছি। কত দিনের মধ্যে ফেরত দেব তা কিন্তু উল্লেখ নেই। তাঁর মতে এটা হতে পারে ছয় মাস, এক বছর বা যে কোনো দিন। তাঁরা তো বলেননি পরিশোধিত পুরো টাকা তাঁরা এক কিস্তিতে পরিশোধ করবেন। তাই তাঁরা যখন যে টাকার ব্যবস্থা করবেন, সুকেশের বাবাকে তাই নিতে হবে। এ রকম ঘটনা আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে।

যদি এই রকম প্রতারণার শিকার কেউ হন তাহলে উক্ত প্রতারিত ব্যক্তি থানায় এজাহার দায়ের করে মামলা করতে পারেন অথবা আদালতে সরাসরি মামলা দায়ের করতে পারেন।

নিম্নে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

প্রতারণা কি এবং এর শাস্তি

সাধারণ অর্থে, কেউ যদি কারোও সাথে কোন বিষয়ে কোন ধরণের মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তা প্রতারণা হলেও আইনে প্রতারণার সংজ্ঞা কিছুটা ভিন্ন। প্রতারণার বিষয়টি বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪১৫ ধারায় সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-

“যদি কোন ব্যক্তি ছলনা করে বা অসাধুভাবে কোন ব্যক্তিকে অন্য কাউকে কোন সম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করে, কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে অনুরূপ প্রতারিত ব্যক্তিকে এরূপ কোন কার্য করতে বা বিরত থাকতে প্ররোচিত করে, যে কার্য সেই ব্যক্তি অনুরূপভাবে প্রতারিত না হলে করতো না বা উহা করা হতে বিরত থাকতো না এবং যে কাজ নিবৃত্তি উক্ত ব্যক্তির দেহ, মন, সুনাম বা সম্পত্তির ক্ষতি বা অনিষ্ট সাধন করে বা করার সম্ভাবনা রয়েছে, সে ছলনাকারী ব্যক্তি ‘প্রতারণা’ করে বলে গণ্য হবে।”

উদাহরণ- ১

সুকান্ত একজন স্বর্ণকার। সে কোন একটি পিতলের গয়নাকে সোনার প্রলেপ দিয়া উক্ত গয়নাকে সোনার গয়না হিসেবে সুকেশের কাছে বিক্রি করে দেয়। সে সম্পূর্ণরূপে জেনে-বুঝে সুকেশের সাথে কাজটি করে।

এখানে সুকান্ত গিল্টি করা পিতলের গয়নাটি সোনার গয়না হিসেবে সুকেশের কাছে বিক্রি করার সাথে সাথে প্রতারণার অপরাধ হয়েছে। সুকান্ত এই জাতীয় অপরাধ এই ধারার অধীনে বিচার্য্য।

উদাহরণ- ২

অনন্ত সিভিল সার্ভিসে আছে বলে মিথ্যা ভান করে ইচ্ছাকৃতভাবে রাশেদকে বঞ্চনা করে এবং তাকে ধারে সম্পত্তি দিতে রাশেদকে অসাধুভাবে প্ররোচিত করে। অথচ এই সম্পত্তির মূল্য প্রদানের ইচ্ছা তার নাই। অনন্ত প্রতারণা করেছে। এ ধরণের অপরাধ এই ধারার অধীনে বিচার্য্য।

অসৎ পন্থায় কোন কিছু গোপন করলে সেটাও প্রতারণা হিসেবে গণ্য হতে পারে যা এই ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আদালতের রায়

[30 DLR 227 Anowar Ali Vs. The State] “সম্পত্তি অর্পণ যদি অসৎ প্রলুব্ধকরণের সম্পত্তি না হয় তবে প্রতারণার অপরাধ হবে না।”

[36 DLR 14(AD) Nasiruddin Mahmud Vs. Momtazuddin] মামলায় বলা হয়েছে যে, “দন্ডবিধির ৪১৫ ধারার প্রয়োজন এই যে, ঠকাবার উদ্দেশ্যে কাজ করা।”

[38 DLR 105 Sheikh Obaidul Houque Vs. Razure Rahman] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “৪১৫ ধারায় প্রদত্ত সংজ্ঞার ভাষা থেকে অত্র ধারায় দুইটি অংশ পাওয়া যায়। প্রথম অংশে বলা হয়েছে যে, প্রতারিত ব্যক্তি কোন সম্পত্তি অর্পণে অবশ্যই প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধুভাবে প্রলুব্ধ হলে এবং দ্বিতীয় অংশে এমন এক ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে যে প্রতারিত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সম্পত্তি অর্পণে প্রলুব্ধ করবেন। সুতরাং প্রতারণা গঠিত হতে গেলে অবশ্যই সম্পত্তি অর্পণে প্রবঞ্চনা এবং অসৎভাবে প্রবৃত্তকরণ থাকতে হবে। প্রাপ্তমালের টাকা পরিশোধের নিমিত্তে প্রদত্ত অগ্রিম তারিখের চেক যদি অসম্মতিতে হয় তবে তাহা শুধু দেওয়ানী দায়িত্বের সৃষ্টি করে। তাই চেক উহাকে প্রতারণা বলা যায় না।”

দন্ডবিধির ৪১৫ ধারা অনুসারে প্রতারণামূলক কার্য সম্পাদনের জন্য নিম্নলিখিত উপাদানগুলি থাকতে হবে। যথা-

১. অপরাধী কর্তৃক কোন ব্যক্তিকে ফাঁকি দেয়া বা ছলনার আশ্রয় নিয়া প্রতারণ করেছে
২. অপরাধী ঐভাবে তাকে প্ররোচিত করেছিল;
৩. উক্ত প্ররোচনা প্রতারণামূলক ছিল এবং
৪. উক্ত লোক প্ররোচিত হয়ে সম্পত্তি প্রদান করেছিলেন বা সংরক্ষণ করতে সম্মত হয়েছিল।

প্রতারণার-শাস্তি

প্রতারণার নানা প্রকার আছে। যেমন, ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে প্রতারণা, জালিয়াতি করে প্রতারণা, পরিচয় গোপন করে প্রতারণা, বিয়ের ব্যাপারে প্রতারণা ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রতারণার জন্য পৃথক পৃথক শাস্তির বিধান আছে।

সাধারণ প্রতারণা দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪১৭ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য। দন্ডবিধির ৪১৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি দন্ডবিধির ৪১৫ ধারা অনুসারে প্রতারণা করে, তাহলে সে ব্যক্তি দন্ডবিধির ৪১৭ ধারা অনুসারে ১ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।

আদালতের রায়

[7 BCR(AD) 128 Abdul Mannan Vs. The State] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, “দলিলের স্বল্পমূল্য উল্লেখ করার কারণে ইহা বলা যায় না যে, প্রতারণামূলকভাবে অতিরিক্ত জমি দলিলের অন্তর্ভূক্ত করেছে।”

অন্যদিকে, প্রতারণাকারী ব্যক্তির কাজ থেকে যদি কোন সম্পত্তির বিতরণ বা বিন্যাস বা কোন মূল্যবান সুরক্ষার পরিবর্তন বা ধ্বংস ঘটে থাকে তবে, দন্ডবিধির ৪২০ ধারার অধীনে অপরাধটি দন্ডনীয়। দন্ডবিধির ৪২০ ধারা অনুযায়ী সে ব্যক্তি ৭ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে।

আদালতের রায়

[45 DLR 102] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “প্রথম কোন লোক ঋণ গ্রহণের জন্য অসৎ উপায়ে অন্য লোককে প্রলুব্ধ করে যে, সে উহা ফেরত দিবে যদি উহা ফেরত দিবার উদ্দেশ্য তার নাই, তখন ইহা দন্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বর্ণিত সংজ্ঞানুসারে প্রতারণা হবে যা দন্ডবিধির ৪২০ ধারায় দণ্ডণীয়।”

[27 DLR 175(SC) Akamuddin VS. The State] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “অসৎ গোপনীয়তা দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারার অর্থানুসারে চাতুরী। এই ধরণের চাতুরী প্রতারনার একটি উপাদান।”

[38 DLR 8 Yaqub vs. Kalu] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “দণ্ডবিধির ৪২০ ধারার অধীন সাজা প্রদানের সময় কারাদণ্ডের আদেশ অবশ্যই প্রদান করতে হবে। কারণ আইনের বিধানানুসারে উহা বাধ্যতামূলক। অত্র ধারার অধীন কেবল অর্থদণ্ডের আদেশ প্রদান করা হলে তা বে-আইনী।”

অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ

দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা কাজে লিখিত বা মৌখিকভাবে চুক্তিতে আবদ্ধ হই। ব্যবসা-বাণিজ্য, সম্পত্তি হস্তান্তর, দান, বিনিময়, সম্পত্তি বিক্রি এমনকি বিয়েতেও চুক্তি সম্পাদন করতে হয়। কারণ চুক্তিই আইনত গ্রহণযোগ্য। ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের ২(জ) ধারায় চুক্তির সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য সম্মতিকে চুক্তি বলে। চুক্তি লিখিত বা মৌখিক উভয় রকমই হতে পারে। আদালত প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে। সে ক্ষেত্রে মামলা পরিচালনার ব্যয়ও অভিযুক্তের কাছ থেকে আদালত আদায় করে দিতে পারে। তবে লিখিত চুক্তি হওয়াটাই ভালো। কারণ মৌখিক চুক্তি প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য।

একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, ভূমিসংক্রান্ত চুক্তি করলে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। তা না হলে আইনে আপনি সহযোগিতা পাবেন না। সর্বোপরি চুক্তি করার সময় চুক্তির খসড়াটা ভালো করে দেখ নিন, খুঁটিনাটি দিক যাচাই করে নিলে প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আর যদি কেউ আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করে থাকে, আমানতের খেয়ানত করে থাকে, অঙ্গীকার পালন না করে, বিশ্বাস ভেঙে চম্পট দেয় তাহলে আপনি সেই বিশ্বাসভঙ্গের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন।

অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ হলো- “অসাধু অপব্যবহার” বা অন্যের সম্পত্তি “নিজস্ব ব্যবহারের জন্য রূপান্তর”, যা ইংলিশ ল’ এর Embezzlement বা আত্মসাৎ করার অপরাধের মতো। দন্ডবিধির ৪০৫ ধারায় অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।

উক্ত ধারায় বলা হয়েছে যে-

যদি কোন ব্যক্তি কোনভাবে কোন সম্পত্তির বা সম্পত্তি পরিচালনার ভার পেয়ে অসাধুভাবে সেই সম্পত্তি আত্মসাৎ করে বা নিজের ব্যবহারে প্রয়োগ করে কিংবা সেই দায়িত্ব আইনে যেভাবে পালন করা উচিৎ সেভাবে পালন না করে সেই সম্পত্তি অসাধুভাবে উক্ত সম্পত্তি ব্যবহার করে বা বিলি ব্যবস্থা করে কিংবা স্বেচ্ছায় বা ইচ্ছাপূর্বক অপর কোন ব্যক্তিকে এরূপ করতে দেয়, তাহলে সে ব্যক্তি Breach of Trust বা অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের অপরাধ করেছে বলে বিবেচিত হবে।

উদাহরণ

জয়ের দখলে থাকা কোন সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় জয়ের সম্মতি ব্যতীতই অসীম সম্পুর্ণরূপে জেনে-বুঝে সম্পত্তিটি নিজের ব্যবহারে এনে ভোগ দখল করে অথবা নিজের সম্পত্তি হিসেবে বিক্রি করে দেয়। সে জয়ের বিশ্বাসের সুযোগেই কাজটি করে।

এখানে অসীম সম্পত্তিটি নিজের ব্যবহারে এনে ভোগ দখল করার অথবা নিজের সম্পত্তি হিসেবে বিক্রি করার সাথে সাথে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের অপরাধ করেছে। ফলে, জয়ের এরূপ অপরাধ এই ধারার অধীনে বিচার্য্য।

অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ গঠনের জন্য নিম্নোক্ত উপাদান প্রয়োজন। যথা

১. অপরাধীকে কোন সম্পত্তি পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা কোন জিম্মা পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হতে হবে।
২. উক্ত ব্যক্তি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিটি অসাধুভাবে আত্নসাৎ করে অথবা নিজের ব্যবহারে প্রয়োগ করতে হবে।
৩. সম্পত্তি পরিচালনার জন্য যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল, উক্ত ব্যক্তি কর্তৃক উহার বরখেলাপ হবে।
৪. একইভাবে আইনানুগ চুক্তি বরখেলাপ করে উক্ত সম্পত্তি অসাধুভাবে ব্যবহার করেছিল।
৫. আসামী অসাধুভাবে বিলি ব্যবস্থা করা অথবা ইচ্ছাপূর্বক অন্য কোন ব্যক্তিকে তা করতে দেওয়া।
৬. প্রাপ্ত দায়িত্ব যেভাবে আইনত করা উচিৎ সেভাবে পালন করেনি।
৭. উক্ত সম্পত্তি কোন ব্যক্তিকে অসাধুভাবে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিল।

আদালতের রায়

[39 DLR Musa Bin samser vs. Ansarul] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “অংশীদার কারবার বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং হিসাবের টাকা গ্রহণ না করা পর্যন্ত উহার কোন অংশ কোন অংশীদারের একচেটিয়া অধিকার সৃষ্টি করে না। তবে বিশেষ চুক্তির দ্বারা যদি কোন সম্পত্তি কোন অংশীদারের নিকট রাখা হয় এবং তিনি উহা আত্মসাৎ করেন তবে দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারার অধীন তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হবে।

[45 DLR 705] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “বিশ্বাস স্থাপন করে টাকা প্রদান প্রমাণিত হলে উক্ত টাকা পরবর্তীকালে ফেরত দিলেও আসামীকে টাকা আত্নসাতের অভিযোগ হতে রেহাই দেয়া যায় না।”

অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তি

দন্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোনও ব্যক্তি অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে, সে ব্যক্তি ৩ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে।

যদি কোনো অফিসের কর্মচারী বিশ্বাসভঙ্গ করেন তাহলে দন্ডবিধির ৪০৮ ধারা অনুযায়ী সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। আর ৪০৯ ধারায় সরকারি কর্মচারী কিংবা ব্যাংকার, ব্যবসায়ী বা এজেন্টের এ অপরাধের সাজা যাবজ্জীবন বা ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডসহ অর্থদন্ড।

আদালতের রায়

[39 DLR 393] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “বাদীকে অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন বা সম্পত্তির উপর আধিপত্য প্রমাণ করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ যে লোকের উক্ত সম্পত্তির উপর আধিপত্য থাকে বা যার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা হয় সে নিজের বা অন্যের লাভের জন্য উহা আত্মসাৎ করে।”

[1 BLD 302 Tazimuddin Vs. The State] মামলার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, “কারাদণ্ড ব্যতীত কেবল অর্থদন্ডের আদেশ প্রদান করা হলে দন্ডবিধির ৪০৯ ধারার অধীন উহা বৈধ হবে না। এরূপ ক্ষেত্রে কেসটি রিমান্ডে দেওয়াই শ্রেয়।”

পরিশেষে বলা যায় যে, যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণার স্বীকার হন তাহলে উক্ত প্রতারিত ব্যক্তি থানায় এজাহার দায়ের করে মামলা করতে পারেন অথবা আদালতে সরাসরি মামলা দায়ের করতে পারেন। এ মামলা করতে হয় সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। বিজ্ঞ আদালত বাদীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে মামলার গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে সরাসরি মামলাটি আমলে নিতে পারে অথবা কোনো প্রাথমিক তদন্তের জন্য ব্যক্তি বা সংস্থাকে আদেশ দিতে পারে। আবার সরাসরি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য থানাকেও নির্দেশ দিতে পারে।

লেখক: আইনজীবী; জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।