নিখোঁজ ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণার প্রক্রিয়া
অ্যাডভোকেট মোঃ করমুল্লাহ্

সাকসেশন সার্টিফিকেট পাওয়ার প্রক্রিয়া

মোঃ করমুল্লাহ্ : সাকসেশন সার্টিফিকেট হচ্ছে মৃত ব্যক্তির ব্যাংকে জমানো টাকা, কোম্পানীর শেয়ার, ডিবেঞ্চার, রয়্যালটি সর্বোপরি মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকার প্রমাণ করার প্রমাণপত্র।

উত্তরাধিকারী আইন, ১৯২৫ এর ৩৭০-৩৮৯ ধারা সমূহে সাকসেশন সার্টিফিকেট এর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ধারাঃ ৩৭২(৩) “মৃত পাওনাদারের নিকট দেয় কোন দেনা বা দেনা সমূহ বিষয়ে কিংবা তার কোন অংশ বিষয়ে উক্ত সার্টিফিকেটের জন্য দরখাস্ত করা যাইবে।”

অনেক সময় দেখা যায়, কোন ব্যক্তি মারা গেছেন, মৃত্যুকালে কোন ব্যাংকে টাকা রেখে গেছেন। কিন্তু, কোন প্রকার নমিনী করে যাননি, আবার দেখা যায় কাউকে নমিনী করা হয়ে থাকলেও অন্য ওয়ারিশদের বাধার কারণে ব্যাংক কাউকে টাকা দিচ্ছেন না। সেই কারণে সাকশেসন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন দেখা দেয়।

আবার হয়ত এমনও হতে পারে যে, মৃত ব্যক্তি ঋণ রেখে গেছেন এই ঋণ কোন অংশীদার কত % পরিশোধ করবেন এজন্য সাকশেসন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।

আবার হয়ত দেখা যায়, কোন কোম্পানীতে শেয়ার রেখে গেছেন সেক্ষেত্রে কোন ওয়ারিশ কতটুকু শেয়ারের মালিক হবেন মর্মে সাকশেসন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।

নিম্নে ধারাবাহিকভাবে সাকসেশন সার্টিফিকেট এর মোকদ্দমা দায়েরের প্রক্রিয়া আলোচনা করা হলো-

সাকসেশন সার্টিফিকেট এর মোকদ্দমা দায়ের করতে হয় কোন আইনের কোন ধারা মোতাবেক?

সাকসেশন সার্টিফিকেট মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে উত্তরাধিকারী আইন, ১৯২৫ এর ৩৭৪ ধারা মোতাবেক। কিন্তু অত্র আইনের ৩৭২ ধারা মোতাবেক দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮ এর বিধান অনুযায়ী আরজি আকারে দাখিল করতে হবে।

সাকসেশন সার্টিফিকেট এর মোকদ্দমা কোন আদালতে দায়ের করতে হয়?

এই আইনে জেলা জজকে এখতিয়ার দেওয়া হয়ে থাকলেও জেলা জজ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় সাধারণত এ ক্ষমতা অন্য কোন আদালতকে প্রদান করে থাকেন। জেলা জজ তার একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করবেন সেটা হচ্ছে যুগ্ম জেলা জজ (ডেলিগেটেড জজ)।

সাকসেশন সার্টিফিকেট এর মোকদ্দমায় বাদী/বিবাদী কে হবেন?

এই মোকদ্দমার সকল ওয়ারিশ মিলে একত্রে করতে পারেন আবার কোন ওয়ারিশ যদি একত্রে দরখাস্ত না করেন তাহলে যারা একত্রে দরখাস্ত করতে ইচ্ছুক নন তাদের প্রতিপক্ষ করতে হয়।

সাকসেশন সার্টিফিকেট এর মোকদ্দমায় বিবাদী কর্তৃক আপত্তি দাখিলের সময়সীমা?

আদালত মৃত ব্যক্তির নিকট আত্মীয়দের নোটিশ প্রদান করে কারো কোন দাবি/আপত্তি আছে কিনা তা জেনে নিয়ে থাকেন। কারো কোন আপত্তি থাকলে এই সময় আপত্তি দাখিল করা যায়। কারো কোন আপত্তি না থাকলে আদালত আবেদনকারীর অনুকূলে সাকসেশন সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে। কারো কোন আপত্তি থাকলে দেড় মাস সময়ের মধ্যে আপত্তি দাখিল করা যায়।

কারো কোন আপত্তি না থাকলে অথবা আপত্তি থাকলে তা শুনানির পর আদলত আবেদনকারীর অনকুলে সাকসেশন সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে। সাধারণত সাকসেশন সার্টিফিকেট পেতে তিন-চার মাস সময় লাগে।

সাকসেশন সার্টিফিকেট এর মোকদ্দমার আরজিতে কি কি বিষয় উল্লেখ করতে হয়?

অত্র আইনরে ৩৭২(১) ধারার বিধান অনুযায়ী, দেওয়ানি কার্যবিধি ১৯০৮ এ বর্ণিত পদ্ধতিতে দরখাস্তকারীর দ্বারা বা পক্ষে স্বাক্ষরিত এবং প্রত্যায়িত আরজির মাধ্যমে উক্ত সার্টিফিকেটের দরখাস্ত করিতে হইবে। দরখাস্তের জন্য বাদীর দ্বারা বা পক্ষে আরজি স্বাক্ষরিত এবং প্রত্যায়িত হইবে এবং উহাতে নিম্ন লিখিত বিবরণাদির উল্লেখ থাকিবে, যথা:

(ক) মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সময়,

(খ) মৃত্যুর সময়ে মৃত ব্যক্তির সাধারণ বাসস্থান এবং উক্ত বাসস্থান যে জজের নিকট দরখাস্ত করা হয় ঐ জজের স্থানীয় এখতিয়ারে না থাকিলে উক্ত সীমার মধ্যে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি,

(গ) মৃত ব্যক্তির পরিবার বা অন্যান্য নিকট আত্মীয় এবং তাহাদের নিজ নিজ বাসস্থান সমূহ,

(ঘ) আরজি দাখিলকারী যে অধিকার দাবী করেন,

(ঙ) সার্টিফিকেট মঞ্জুরে কিংবা উহা মঞ্জুর করা হইলে উহার বৈধতার ক্ষেত্রে ৩৭০ ধারা বা এই আইনের কোন বিধানাবলী বা অন্য কোন আইনে কোন প্রতিবন্ধকতার অনুপস্থিতি, এবং

(চ) দরখাস্তকৃত সার্টিফিকেট বিষয়ে দেনা এবং সিকিউরিটিজ।

সাকসেশন সার্টিফিকেট এর মোকদ্দমা দায়েরে প্রয়োজনীয় দলিলের বিবরণ

১. মৃত ব্যক্তির মৃত্যু সনদপত্র (Death Certificate)।

২. ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কমিশনার প্রদত্ত পরিচয়পত্র/নাগরিকত্বের সনদ।

৩. শেয়ার সার্টিফিকেট/ রয়্যালিটি প্রমাণপত্র/ ব্যাংক ব্যালেন্স বা জমার স্লিপ ইত্যাদি।

সাকসেশন সার্টিফিকেট এর মোকদ্দমার কোর্ট ফি কোন আইনের বিধান মোতাবেক নির্ধারিত হয় এবং কত টাকার কোর্ট ফি দিতে হয়?

কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে কোর্ট ফিস আইন, ১৮৭০ এর ১ম তফসিলের ১১ দফা মোতাবেক নিম্নলিখিত হারে ‌-

১) মোকদ্দমার মূল্য মান ২০ হাজার টাকার অধিক হয় কিন্তু এক লক্ষ টাকার অধিক নয় সেক্ষেত্রে ১% হারে কোর্ট ফি দিতে হবে। তবে ১-২০,০০০ টাকার মধ্যে কোন কোর্ট ফিস দিতে হবে না।

২) মোকদ্দমার মূল্যমান ১ লক্ষ টাকার অধিক হয় সেক্ষেত্রে হতে ২% হারে কোর্ট ফি দিতে হয়।

৩) +১৫% ভ্যাট।

কোর্ট ফিস আইন, ১৮৭০ এর ৩৫এ ধারায় ১৫% ভ্যাট এবং কোর্ট ফিস আইন, ১৮৭০ এর ১ম তফসিলের টেবল বি এর ২ দফা মোতাবেক সর্বোচ্চ ৪০,০০০টাকা=৪৬,০০০/-টাকা।

কোর্ট ফিস আইন, ১৮৭০ এর ১ম তফসিলের টেবল বি এর ১ দফায় ম্যানি স্যুট মোকদ্দমার কথা বলা হয়েছে এবং ২ দফায় অন্য সকল দেওয়ানী মোকদ্দমা কথা বলা হয়েছে।

উত্তরাধীকারী আইন, ১৯২৫ এর ৩৭২ ধারা+কোর্ট ফিস আইন, ১৮৭০ এর ১ম তফসিলের টেবল এ এর ১১ দফা বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় ১% অথবা ২% কোর্ট ফিস+এর উপর ১৫% ভ্যাট যা সর্বোচ্চ ৪৬,০০০টাকা।

সাকসেশন সার্টিফিকেট গ্রহণের তামাদীকাল

সাকসেশন সার্টিফিকেট এর আরজি দাখিলের কোন নির্দিষ্ট তামাদীকাল নেই।

সাকসেশন সার্টিফিকেট এর মোকদ্দমার আপিল/মোকদ্দমা প্রত্যাহারের বিধানাবলী

সাকসেশন সার্টিফিকেট এর মোকদ্দামার রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ পক্ষ কর্তৃক আপিল দায়ের করতে পারবেন উত্তরাধীকারী আইন, ১৯২৫ এর ৩৮৪ ধারা মোতাবেক শুধুমাত্র হাইকোর্ট বিভাগে এবং উক্ত মোকদ্দামার আরজি প্রত্যাহারের বিধান রয়েছে পারবেন উত্তরাধীকারী আইন, ১৯২৫ এর ৩৮৩ ধারায়।

লেখক: আইনজীবী, চট্টগ্রাম জজ আদালত।