মোহাম্মদ শিশির মনির : আইনজীবীদের বলা হয় officers of the court এবং Temple of Justice (ন্যায়ের দণ্ড)। বার এবং বেঞ্চ একই পাখির দুটি ডানা। একটি ছাড়া আরেকটি অচল। আইনজীবী ও বিচারকবৃন্দ concomitant side of the same coin (একই মুদ্রার এপিট-ওপিট)। আইনজীবীদের বলা হয় ‘learned’ বা ‘বিজ্ঞ’। অষ্টম সংশোধনী মামলার শুনানিতে সন্তুষ্ট হয়ে আমাদের আপিল বিভাগ মন্তব্য করেন ‘মামলার শুনানির সময় আমরা আবার অনুধাবন করলাম সত্যিই আইনজীবীরা ‘learned’ বা ‘বিজ্ঞ’। মামলার submission এ আপিল বিভাগ সন্তুষ্ট হয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জুনিয়র আইনজীবীদের টোকেন সম্মানি দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই আদেশ উৎসাহ ব্যঞ্জক। ভবিষ্যৎ আইনজীবীদের জন্য পাথেয়।
বর্তমানে আইনজীবীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মিশ্র ধারণা। অনেকেই বিরূপ মন্তব্য (in general) করেন। এই পরিস্থিতির জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী।এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ রাতারাতি সম্ভব নয়। দীর্ঘ সময় ধরে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা চালাতে পারলে অবশ্যই উত্তোরণ সম্ভব। এই ক্ষেত্রে নবীণ আইনজীবী বন্ধুগণ দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারেন। ভাল কাজের জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে পারেন। আপনাদের মধ্য থেকেই একদিন দেশের উচ্চ আদালতের বিচারক, রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা, সিনিয়র আইনজীবী গড়ে উঠবে ইনশাল্লাহ।
আমার আইন পেশার বয়স বেশিদিন না। অভিজ্ঞতাও যথেষ্ট নয়। প্রতিদিনই শিখছি। সিনিয়র/জুনিয়র/বিচারকদের কাছে থেকে শিখছি। পরিবেশ থেকে শিখছি। এই পেশায় শেষ বলতে কিছু নাই। আপনাদের উপদেশ দেয়ার ধৃষ্টতা আমার নাই। স্বল্প অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বিষয় আপনাদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরছি। ভুল-ত্রুটির জন্য অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
নিজেকে সব সময় আইনের ছাত্র মনে করা (এই Attitude খুবই দরকার)
আইন শেখার জন্য প্রয়োজন খোলা মন। কারণ জানার কোন শেষ নাই। অভিজ্ঞতার কোন অন্ত নাই। নিত্য নতুন বিষয়াদি শেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতে হবে। যেখানেই পাবেন যার কাছেই পাবেন আহরণ করবেন। দয়া করে ego’র কাছে হারবেন না। শেখার কোন বয়স নাই। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন করার মানসিকতা আইনপেশায় খুবই জরুরী বিষয়। এই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে অবশ্যই উপকার পারেন ইনশাল্লাহ।
সিনিয়রকে যথাযথভাবে সহায়তা করা
সিনিয়রকে সহায়তা করা একটি শিল্প (Art)। এই শিল্প আয়ত্ত করতে পারলে সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক গভীর হয়ে উঠে। এমনকি পিতা-পুত্রের মত সম্পর্কের গভীরতা তৈরি হয়। যেমন ধরুন একটি মামলার ফাইল আপনাকে দিলে আপনি draft করে সিনিয়রকে দেখাবেন। সিনিয়র যত ব্যস্তই থাকেন না কেন আপনি অবশ্যই ফাইনাল করার আগে সিনিয়রের অনুমতি নিবেন। কোর্ট selection এর বিষয়ে সিনিয়রের সাথে আলোচনা করবেন। মামলা জমা দেয়ার আগে পেইজ নম্বরগুলো ভালভাবে check করে দিবেন। কোন্ কোর্টে কোন relief পাওয়া যায় তা জানার চেষ্টা করবেন। মামলা লিস্টে আসলে সিনিয়রকে আগেই জানাবেন। কখন হতে পারে সেই বিষয়ে ধারণা দিবেন। পিটিশনের উপরে সুন্দর করে নোট নিবেন। যেন সিনিয়র এক নজরে সব বুঝতে পারেন। অবশ্যই flag mark ব্যবহার করবেন। সুনির্দিষ্ট লাইনের নীচে হাই লাইটার দিয়ে মার্ক করবেন। মামলা শুনানির আগেই প্রয়োজনীয় আইন বা সিদ্ধান্তের ৫ কপি ফটোকপি করবেন। দুই কপি দুইজন মাননীয় বিচারপতি, এক কপি রাষ্ট্রপক্ষ, এক কপি সিনিয়র আর আরেক কপি আপনার।
আইন বা সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয় অংশ সিনিয়রকে আগেই পড়াবেন। মনে রাখতে হবে আপনার কিন্তু পুরো আইন বা সিদ্ধান্ত পড়া থাকতে হবে। কারণ শুনানির সময় যে কোন প্রশ্ন উঠতে পারে। তখন যেন আপনি সিনিয়রকে সহযোগিতা করতে পারেন। মনে রাখবেন যথাযথভাবে সহায়তা (assist) করতে পারলে জুনিয়র হিসেবে আপনার নাম জজ সাহেবরা জেনে যাবেন। তখন আপনার নাম হবে able junior. এই প্রাপ্তি বিরাট বিষয়। সিনিয়র যখন Dias এ দাঁড়িয়ে কথা বলবেন আপনি তখন গভীর মনোযোগ দিয়ে কথোপকথন শুনবেন। প্রয়োজনে নোট নিবেন। সিনিয়র ইশারা দেয়ার সাথে সাথে যেন পাশে গিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন। এই প্রক্রিয়া আপনাকে সম্মানিত করবে। জুনিয়র হয়েও সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন। সবাই আপনাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখবে।
সব সময় update থাকার চেষ্টা করা (Research করা)
আইন একটি vast ( বিস্তৃত) বিষয়। নানান দিক ও বিভাগ নিয়ে প্রতিনিয়ত নজির সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের ভিতরে বা বাইরে নানান আলোচনা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সিদ্ধান্ত হচ্ছে। এই সকল বিষয়ে up to date থাকার চেষ্টা করতে হবে। ব্যক্তিগত নোট maintain করা উচিত। প্রয়োজনে মোবাইল বা কম্পিউটারে সফটওয়ার এর মাধ্যমে quick reference তৈরি করে রাখেন। কোর্টে বসে সাথে সাথে reference বের করার system করে নিতে পারেন। এই পদ্ধতিতে সিনিয়রকে সাহায্য করা আরও সহজ হয়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে নিয়মিত মাসিক law report গুলো পড়তে হবে। যেমন DLR, BLC, ALR, LCLR ইত্যাদি। সুপ্রীম কোর্টের ওয়েবসাইটে নিয়মিত চোখ রাখা জরুরী। ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের ওয়েবসাইট বেশ rich (ধনী)। সাথে সাথে live law subscribe করতে পারেন।
দেখুন, প্রতিনিয়ত নজিরসমূহ পরিবর্তন হয়। অতীতের ব্যাখ্যা নতুন করে হাজির হয়। পক্ষে বিপক্ষে নতুন নতুন argument আসে। এই বিষয় গুলো সম্পর্কে অবশ্যই সম্যক ধারণা থাকতে হবে। অন্যথায় আপনি যে reference দিবেন তা আপনার বিপরীত পক্ষ উড়িয়ে দিবে। কারণ আপনার দেয়া সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে উল্টে গেছে এটা আপনার জানা ছিল না। এই জন্য প্রয়োজন up to date information. অন্যথায় লজ্জা পাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না। জজ সাহেব আপনাকে ভাল চোখে দেখবেন না। সিনিয়রও বিব্রত বোধ করবেন।
কোর্টের কাছে সব সময় সৎ ও বিনয়ী থাকবেন
আগেই বলছি শেখার কোন শেষ নাই। ভুল হতেই পারে। আপনি সব জানেন এটা ভাবার কোন কারণ নাই। সেজন্য কোন কিছুতে ভুল হলে সাথে সাথে sincere apology করবেন। ভদ্রতা-নম্রতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। না জেনে কখনও argue করবেন না। প্রয়োজনে সময় নিবেন। অন্যান্যদের সাথে কথা বলবেন। ঠিক সময় উপযুক্ত আইন নিয়ে হাজির হবেন। জজ সাহেব বা অপর পক্ষ যাই বলুক না কেন কখনও উত্তেজিত হবেন না। আগে বুঝবেন। তারপর প্রতিটি point ধরে ধরে বিনয়ের সাথে উত্তর দিবেন। কখনও কখনও অনেক বড় সিনিয়রের বিপরীতে মামলা করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে সিনিয়রের ধমকও খেতে হতে পারে। এই ধমক ঠান্ডা মাথায় হজম করতে হবে। পরিস্থিতি যাই হোক আইনি প্রশ্নে অবশ্যই বিনয়ের সাথে সঠিক submission রাখতে হবে। ভয় পাবেন না। বিনয়ী হবেন। এভাবেই একজন জুনিয়র সিনিয়র হওয়ার পথে ধীরে ধীরে হাটে।
Mention লাইনের শৃঙ্খলা ও পারস্পরিক interaction
মেনশন লাইন আচরণ শেখার জন্য উত্তম সময়। সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক designated সিনিয়র ছাড়া বাকি সবার status তাত্ত্বিকভাবে একই। তবুও যারা দীর্ঘদিন থেকে এই অঙ্গনে আছেন তাঁরা সামনে দাঁড়াবেন/ যাবেন এটা সবাই মেনে নিয়েছে। আপনার সিনিয়র বা আপনার বন্ধুর সিনিয়র সামনে যাক সেটা আপনিও চাইবেন। কিন্তু আপনি কখনও এই কাজ করবেন না। প্রয়োজনে অন্যের জন্য জায়গা ছেড়ে দিবেন। একদিন আপনার জন্যও অন্যরা জায়গা ছেড়ে দিবে। তবে সময় লাগবে। তাড়াহুড়ো করার কিছু নাই। আশ-পাশ দেখে সতর্কভাবে দাঁড়াবেন। পরিচিত হবেন। সালাম/আদাব দিবেন বা নিবেন। রুম নম্বর জানবেন। এইভাবে কিছুদিনের মধ্যে আপনার চেহারা সবাই জেনে যাবে। চিনে যাবে। তখন পরিস্থিতি আরও সহজ হবে। আপাতত ত্যাগ করবেন। এই মানসিকতা খুবই জরুরী। লাইনের মাঝে কোনদিন ঢুকবেন না। কেউ না কেউ এটা খেয়াল করবে। আপনাকে বেয়াদব মনে করবে। মামলা লিস্টে থাকলে লিস্ট ছাড়া কোনদিন মেনশন করতে যাবেন না। হলুদ সার্চ লিস্ট কিন্তু মূল লিস্ট না। বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। আশাকরি জজ সাহেবরা আপনাকে appreciate করবেন।
দল-মত নির্বিশেষে সকলের প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবেন
এই অঙ্গনে আপনার মূল পরিচয় একজন আইনজীবী। আইনজীবী হিসেবে সিনিয়রদের সম্মান করা আপনার দায়িত্ব। সেজন্য আসা যাওয়ার পথে সিনিয়রদের সালাম/আদাব দিবেন। চোখে চোখে তাকাবেন। দেখবেন সিনিয়ররা আপনাকে সহজেই accept করে নিবে। এক্ষেত্রে কে কোন দলের? কোন মতের? কোথায় বাড়ী? কোন চেম্বারের? তা মোটেও বিবেচনা করবেন না। আপনার কাজ সিনিয়রদের সম্মান করা। দল-মত নির্ধারণ করা আপনার কাজ না।
নিয়মিত Court Proceedings খেয়াল করবেন
এই বয়সে আপনার কাছে জটিল মামলা আসার কথা নয়। আপনার সিনিয়র আপনাকে কখনও কখনও জটিল মামলার ফাইল দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি সৌভাগ্যবান। কিন্তু কোর্টে অনেক জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। কেউ না কেউ করবে। আপনি সেটি follow করবেন। নোট নিবেন। না বুঝলে চেম্বারে গিয়ে সিনিয়রের সাথে আলোচনা করবেন। বই পড়বেন। পরের দিন আবার follow করবেন। তখন নিজের কাছেও ভাল লাগবে। নিজের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাবেন। আলোচিত বিষয়গুলো সব সময় follow করার চেষ্টা করবেন। এর মাধ্যমে কে কীভাবে argument করে তা বুঝতে পারবেন। নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা পাবেন।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় পরবেন
যাই আছে তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে ব্যবহার করবেন। আপনার নতুন নতুন জামা নাও থাকতে পারে। এটা দোষের কিছু না। আপনার যা আছে তা সুন্দরভাবে ব্যবহার করবেন। সাদা শার্ট, বেন্ড, কলার যেন পরিষ্কার থাকে। ইস্ত্রি করা থাকে। কোটের বোতাম লাগিয়ে চলাফেরা করবেন। গাউনকে পবিত্র পোশাক মনে করতে হবে। এর মাধ্যমে আপনি মানুষের কল্যাণ করার সুযোগ পাবেন। অবশ্যই জুতা নিয়মিত পরিস্কার করবেন। মোজা থেকে যেন গন্ধ বের না হয় খেয়াল করবেন। অনেক সময় দৌড়াদৌড়ির কারণে ঘেমে যেতে পারেন। সাথে সাথে হাত মুখ ধুয়ে ফিটফাট হয়ে যাবেন। মাথার চুল/দাড়ি সুন্দরভাবে পরিপাটি করে রাখবেন। বিচরপতিরা এগুলো গভীরভাবে খেয়াল করেন।
মামলা রিসিভ করে নিজে খাটাখাটি করে করবেন
আপনারা হয়ত জানবেন যে, অনেকেই মামলা রিসিভ করে কিন্তু নিজে করে না। অন্যকে দিয়ে করায়। টাকার ভাগ ঠিকই পায়। মনে রাখবেন এই পথে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে দালাল হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে যাবেন। আর আইনজীবী হতে পারবেন না। বিনা পরিশ্রমে টাকা আয় করার পদ্ধতির দিকে কখনও যাবেন না। আপনার কাছে মামলা আসলে আপনি না পারলে সিনিয়রদের কাছে যাবেন। নিজে সাথে থাকবেন। পড়বেন। শিখবেন। তারপর সিনিয়রকে দিয়ে করাবেন। অন্যথায় আপনার নিজের কোন উন্নতি হবে না। শিখতে পারবেন না। যে বা যারা কমিশনের পথ বেছে নেয় তারা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। সব সময় ভয় পায়। argument করতে পারে না। শুধু system এর কথা ভাবে। আর নেটওয়ার্ক খুঁজে। খবরদার এই পথ ধ্বংসের পথ। এই পথ নিষিদ্ধ পথ। আপনার পথ এটা নয়।
রাজনৈতিক আস্থা বিশ্বাস বা সম্পৃক্ততা
দেখুন ব্যক্তি হিসেবে আপনার দলগত/আদর্শগত অবস্থান থাকতেই পারে। আমি এতে দোষের কিছু দেখি না। এখন আপনার পরিচয় আইনজীবী। আপনি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকবেন। সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলার শক্তি সঞ্চয় করবেন। রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কখনও ব্যবহৃত হবেন না। কাউকে সেই সুযোগ দিবেন না। এই নীতি মেনে চললে আপনি আপনার আদর্শের জন্য বড় কিছু করতে পারবেন। অন্যথায় আপনি লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারেন। এই আঙিনায় জ্ঞান-মেধা-যুক্তি দিয়ে নিজেকে তুলে ধরবেন। শারীরিক শক্তি প্রদর্শন করে জবরদস্তি করা আপনার কাজ নয়। এই বিষয়টি অবশ্যই সচেতনতার সাথে খেয়াল করবেন। আশাকরি সময়ের ব্যবধানে আপনি আপনার জন্য-আপনার আদর্শের জন্য-দেশের জন্য ভাল কিছু করতে পারবেন। অন্যথায় অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
আইনজীবী সহকারী (Clerk)
আইনজীবী সহকারীর কাজ তাকেই করতে দিবেন। এটা আপনার কাজ নয়। তাদের প্রতি উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবেন। তারাও আপনাকে সহযোগিতা করবে। তার সম্মানি তাকে বুঝিয়ে দিবেন। ভাল সহকারী ছাড়া বড় আইনজীবী হতে পারবেন না। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শর্ট-কাট পথ অবলম্বন করবেন না
আপনার চারপাশে অনেক কিছু দেখতে পাবেন। গাড়ী-বাড়ী-ঘুরাঘুরি-পোষাকের ছড়াছড়ি। খবরদার সেদিকে মনোযোগ দিবেন না। হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাবে কেউ কেউ। দেখেও না দেখার ভান করবেন। এগুলো শর্ট কাট পথ। এই পথে হাঁটলে আপনি শেষ। তিলে তিলে নিজেকে পুরিয়ে খাঁটি প্রমাণ করবেন। হঠাৎ লঙ্কা পারি দেয়ার চিন্তাও করবেন না। নিজেকে পুরিয়ে খাঁটিত্ব প্রমাণ করতে পারলে সেটাই হবে দীর্ঘস্থায়ী। অন্যথায় লোভের বশবর্তি হয়ে এ কুল ও কুল সব কুল যাবে।
চেম্বার practice ছাড়া আইনজীবী হওয়া সম্ভব না
আইন পেশা কোন চাকরি না। এর কোন সময়সীমা নাই। সারাদিন কোর্টে কাজ করে আবার রাতে চেম্বারে কাজ করতে হবে। শিখতে হবে। সিনিয়রের গলায় গলায় থাকতে হবে। অনেক সময় রাত হয়ে যাবে তবুও বিরক্ত হবেন না। ভাববেন আপনার জন্য এটাই blessings. রাত শেষ হয়ে সকালও হয়ে যেতে পারে। তখন চেম্বারেই ঘুমিয়ে যাবেন। সকালে উঠে চেম্বার থেকেই কোর্টে চলে যাবেন। কোন বিরক্তি বোধ করবেন না। রাতে ঘুম না হলেও কোন কোর্টে বসে একটু জিমিয়ে নিবেন। এই অভ্যাস গড়ে তুলবেন।
এত গুণের সমন্বয় আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলবে
উপরে যত বর্ণনা দিলাম সেগুলো মেনে চলা কঠিন কাজ। সাধনার কাজ। পরিশ্রমের কাজ। কিছু দিন মানতে পারলেও সব সময় মানা বড়ই কঠিন। তবুও এটাই একমাত্র পথ। যদি পারেন আমি নিশ্চিত আপনি অনেক দূর যেতে পারবেন। আংশিক পারলেও আপনাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।
শেষকথা
এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যিনি বেড়ে উঠবেন তার এই পেশার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা তৈরি হবে। আইনের শাসনের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন। নিজে আইন মানবেন; অন্যকে আইন মানতে সাহায্য করবেন। বাজিকরদের মোটেও পছন্দ করবেন না। যারা বিচারক হবেন তারা আইনের বিচারকেই প্রাধান্য দিবেন। আইনের বাইরে হাওয়া বুঝে বিচার করবেন না। যারা রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা হবেন তারা অযথা oppose করবেন না। আইন অনুযায়ী হলে মেনে নিবেন। বেআইনি হলে অবশ্যই বাধা দিবেন। আইনের নতুন ব্যাখ্যা না জানলে জানার চেষ্টা করবেন। এই প্রক্রিয়ায় আপনারা প্রত্যেকে একেকটি উজ্জল নক্ষত্রে পরিণত হতে পারেন। দেশ ও জাতির বিরাট খেদমত করতে পারবেন। আপনার নিজস্ব আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্যও active ভূমিকা রাখতে পারবেন। ব্যক্তি হিসেবে আপনি, আপনার পরিবার, আপনার আদর্শ, আপনার দেশ আপনাকে নিয়ে গর্ববোধ করবে ইনশাল্লাহ।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।