স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফিন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া সংক্রান্ত আইনের দুটি ধারার বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে করা এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
রুলে আইনের প্রাধান্য সংক্রান্ত ৩(২) ধারা এবং তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ জমা প্রদান সংক্রান্ত ৫ ধারা কেন বেআইনি ও সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র অর্থসচিব ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অর্থ বিভাগের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এম মনজুর আলম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, এ ধরনের অর্থ নেওয়ার ক্ষেত্রে সংবিধানে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান থাকলেও আইনে তা নেই। এ কারণে আইনটি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্র উল্লেখ করে তিনি জানান, সরকার বিপিসি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বিএসটিআইসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্বৃত্ত অর্থ বাবদ ৪০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। কিন্তু তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।
‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান’ শিরোনামে ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ওই আইন করা হয়।
আইনের ৩(২) এবং ৫ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম রিটটি করেন।
রিট আবেদনকারী অপর আইনজীবী এম মনজুর আলম বলেন, ‘ওইসব সংস্থা জুরিস্টিক পারসন (আইনানুগ ব্যক্তি)। তাদের মৌলিক অধিকারগুলো সংবিধানের ২৬, ৩১ ও ৪২ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। ২৬ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্য আইন বাতিল, ৩১ অনুচ্ছেদে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার ও ৪২ অনুচ্ছেদে সম্পত্তির অধিকার বিষয়ে বলা আছে। আর ৭ অনুচ্ছেদে সংবিধানের প্রাধান্য বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।’
তিনি বলেন, আইনের ৩(২) ধারা সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। ৫ ধারা হচ্ছে সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত ৪২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যে কারণে ধারা দুটি বাতিলযোগ্য।
আইনের ৩(২) ধারার ভাষ্য, ‘আইনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তফসিলভুক্ত সংস্থাসমূহের তহবিলে রক্ষিত উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানের ক্ষেত্রে আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন বা আইনের বিধান যদি এই আইনের বিধানের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে সেই আইন বা আইনের বিধান যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি অকার্যকর বলে গণ্য হবে।’
অপরদিকে ৫ ধারার ভাষ্য, ‘আইন প্রবর্তনের পর ধারা ৪-এ উল্লিখিত অর্থের অতিরিক্ত অর্থ অবিলম্বে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে এবং প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার তিনমাসের মধ্যে ওই অর্থবছরের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।’