দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল না করার মামলায় কর্নেল (অব.) মো. শহিদ উদ্দিন খানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মাত্র চার কার্যদিবসে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত মো. শহিদ উদ্দিন পলাতক থাকায় রায় ঘোষণার পর আসামির বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
দুদকের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর রফিকুল হক বেনু।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে দকের আরেক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জানান, গত ৮ আগস্ট চার্জগঠনের মাধ্যমে মামলার বিচার শুরু হয়। এরপর গত ২৩ আগস্ট এবং ৭ সেপ্টেম্বর ২ কার্যদিবসে ৬ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত। এরপর মঙ্গলবার যুক্তিতর্ক শেষ রায় ঘোষণা করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর বারিধারায় শহিদ উদ্দিন খানের পরিবারের সদস্যদের নামে ১টি ফ্ল্যাট এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ২টি বাড়ি আছে। যার মূল্য কম-বেশি মোট ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তাছাড়া তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ব্যাংকে ১২টি একাউন্ট রয়েছে।
স্ত্রী-কন্যার নামে ঢাকায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রচ্ছায়া লিমিটেডের ১০০ টাকা মূল্যের ৫ লাখ শেয়ার (মোট ৫ কোটি টাকার শেয়ার) এবং কুমিল্লায় কোটি টাকা মূল্যের বন্দীশাহী কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। লন্ডনেও তাদের নামে জুমানা ইনভেস্টমেন্টস অ্যান্ড প্রপার্টিজ লি. নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সাইপ্রাসেও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
তার সহোদর ভাই মোহাম্মাদ আলী খানের নামে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ব্যাংকে ৩০ লাখ ৩৯ হাজার দিরহাম জমা ছিল, যা জুমানা ইনভেস্টমেন্টস অ্যান্ড প্রপার্টিজ লিমিটেডে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা যায় যে, কর্নেল শহিদ উদ্দিন খানের নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে-বিদেশে কম-বেশি ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করাসহ বিদেশে তাদের নামে ১২টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে।
যা, একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অস্বাভাবিক। অর্থাৎ তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। সে কারণে তাকে ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ ইস্যু করা হয়।
কিন্তু আসামি সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি দুদকের উপ-পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ মামলাটি করেন। মামলায় একই কর্মকর্তা তদন্ত করে গত বছর ১৪ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন।
এর আগে ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর অস্ত্র আইনের মামলায় কর্ণেল শহিদ উদ্দিন খান, তার স্ত্রী মিসেস ফারজানা আনজুম খানসহ চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর একই বছর ২০ ডিসেম্বর আয়কর ফাঁকির মামলায় কর্নেল (অব.) শহীদ উদ্দিন খানের ৯ বছরের কারাদণ্ড হয়।