মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : অর্ধ লক্ষ ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় আদালতে চার্জশীট উপস্থাপন করতে বিলম্ব হওয়ায় এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার এর নীচে নয়, এমন পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করে দায়ী কর্মকর্তাদের বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এ আদেশ দেন। আদেশের বিষয়ে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপারের কাছে আদেশটি প্রেরণ করেছেন বিচারক।
কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক এলাহী শাহজাহান নুরী ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর ভোর ৬ টা ৫৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়নের চকরিয়া-বাঁশখালী সড়কের হরিণাফাড়ি নুইন্যা-মুইন্যা ব্রীজের কাছে পেকুয়া থানা পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে একটি প্রাইভেট কার ও ২টি মটর সাইকেলসহ ৭ জন আরোহীকে আটক করে। পরে আটককৃতদের হেফাজত হতে ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় পেকুয়া থানার ইন্সপেক্টর শেখ মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেট ৩৬(১) সারণীর ৩৮/৪১ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার পেকুয়া থানা মামলা নম্বর : ৫/২০২১ ইংরেজি এবং জিআর মামলা নম্বর : ১৪৫/২০২১ ইংরেজি (পেকুয়া)।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা, পেকুয়া থানার এসআই মোঃ মোজাম্মেল হোসেন আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ৭ জন আসামীকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত করে চার্জশীট (অভিযোগ পত্র) তৈরি করেন এবং পেকুয়া থানার তৎকালীন ওসি চার্জশীটটি আদালতে অগ্রবর্তী করেন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, পেকুয়া থানা কর্তৃপক্ষ চার্জশীটটি অগ্রবর্তী করার ৭ মাস ১৪ দিন পর বিগত ১৪ আগস্ট উক্ত চার্জশীট (অভিযোগপত্র) টি সংশ্লিষ্ট আমলী আদালতে বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হয়।
বিচারক মামলার নথি পর্যালোচনায় আরো দেখতে পান, তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) কর্তৃক তদন্ত কার্য সমাপ্ত করে চার্জশীট (অভিযোগ পত্র) স্বাক্ষর হওয়া সত্ত্বেও উক্ত অভিযোগপত্রটি আদালতে প্রেরিত না হওয়ায় কিংবা আদালতে সঠিক সময়ে উপস্থাপিত না হওয়ায়-দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির জন্য অত্র মামলার ধার্য্য তারিখসমূহ মুলতবী রাখা হয়।
বিচারক আদেশে বলেন, অভিযোগপত্র স্বাক্ষর হওয়া এবং থানার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অগ্রবর্তী হওয়ার পরও উক্ত অভিযোগপত্র আদালতে প্রেরণ না করা কিংবা আদালতে সংশ্লিষ্ট বিচারকের সম্মুখে পর্যালোচনার জন্য উপস্থাপিত না হওয়ার কোন সুযোগ নেই। বর্ণিত চার্জশীটটি আদালতে প্রেরণ করা অথবা আদালতে উপস্থাপন করার একমাত্র দায় দায়িত্ব প্রসিকিউশন পক্ষের। এই ধরণের কর্মকান্ড দ্বারা অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়া এবং আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেওয়ার বিষয়টি বিলম্বিত হলে স্বভাবতই তার সুবিধা আসামীপক্ষ পেতে পারে।
প্রসিকিউশন পক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত), সংশ্লিষ্ট কোর্ট ইন্সপেক্টর, তদন্তকারী কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জি.আর.ও উক্ত বিলম্বের দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেন না।
এ অবস্থায়, বর্ণিত চার্জশীট (অভিযোগপত্র) আদালতে সঠিক সময়ে প্রেরণ না করা কিংবা উপস্থাপিত না হওয়ার ক্ষেত্রে প্রসিকিউশন পক্ষের কোন্ কোন্ ব্যক্তি বা কারা জড়িত তৎমর্মে আদালতের আদেশ প্রাপ্তির ৭ কার্য দিবসের মধ্যে সহকারী পুলিশ সুপারের নীচে নন, এমন পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করার জন্য কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী আদেশ দিয়েছেন।
আদালতের আদেশের কপি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এর কাছে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসাথে আদেশের কপি কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চকরিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার, পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ, কক্সবাজারের কোর্ট ইন্সপেক্টর, সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এর কাছেও প্রেরণ করতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছেন।