জেল সুপার পরিচয় দিয়ে আইনজীবীদের মোবাইলে কল দিয়ে প্রতারণার চেষ্টা করছে নতুন এক চক্র। আইনজীবীদের কল করে বলা হচ্ছে- জেলে তাঁর কোন মক্কেল আছে কিনা, জেলখানায় তাঁর মক্কেল মারামারি করেছে। তাকে অন্য দূরের জেলখানায় পাঠানো হবে। পরিবারকে যেন তাঁর (কথিত জেল সুপার) নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়৷
উদ্দেশ্য বিচারপ্রার্থীর নিরীহ পরিবার থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। ডিজিটাল এই প্রতারণা সম্পর্কে আইনজীবীরা বলছেন, এটি প্রতারণার নতুন ফাঁদ। এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। একই সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁরা।
কক্সবাজারের অনেক আইনজীবী এ ধরণের ফোন কল পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের আইনজীবীদের কেউ কেউ এ চক্রের কল পেয়েছেন বলে জানিয়েছে। এমনকি জেল সুপার পরিচয়ে কল করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদেরও।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদকও এমন কল পেয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, আমাকেও কল করেছে। বারের সাধারণ সম্পাদককে অবগত করেছি। উনি জেল সুপারকে বিষয়টি জানাবেন বলেছেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জজ আদালতের আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু জানিয়েছেন, আমাকে কল করা হয়েছিল। কল করে বলা হয়- আমি জেল সুপার মিজানুর রহমান বলছি, ফোন দিয়ে জানতে চাইলো, জেলে আমার কোন মক্কেল আছে কিনা? আরো কিছু!
মাহবুবুল আলম টিপু বলেন, মনে হল নতুন প্রতারণা! সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ রইলো।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেসমিন সুলতানা উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের কেউ কেউ এমন কল পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সাধারণ কল করে জানতে চাওয়া হয় জেলে তাঁর কোন মক্কেল আছে কিনা। আরো বলবে আপনার ক্লায়েন্ট জেল খানায় মারামারি করেছে। তাকে অন্য দূরের জেলখানায় পাঠানো হবে।পরিবার কে আমার নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলেন।
কথিত জেল সুপারের কল পাওয়া সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে জানান, গত সপ্তাহে আমিও এই ধরণের ফোন পেয়েছি। অপরপ্রান্ত থেকে জিজ্ঞাসা করা হয় আমার কোন মক্কেল কারাগারে আছে কিনা। জবাবে আমি জানাই অনেক মক্কেলই আছেন, কোন মক্কেল সেটা সুনির্দিষ্ট করে জানাতে বলি।
অ্যাডভোকেট আবু সিদ্দিক বলেন, নাম-পরিচয় ছাড়াই আমাকে জানানো হয় আমার এক মক্কেল কারাগারে অসদাচরণ করেছে। তাকে শেরপুর কারাগারে বদলি করে দেওয়া হবে। তবে বন্দীর পরিবার যোগাযোগ করলে কিছু একটা ব্যবস্থা হতে পারে।
এই আইনজীবী আরো বলেন, আমি শুরু থেকেই বুঝতে পারছিলাম ওই ব্যক্তি প্রতারক। কারণ গত ৩-৪ বছর ধরেই একটি চক্র এই ধরণের প্রতারণামূলক কাজ করে যাচ্ছে। ইদানীং বিষয়টি ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবু সিদ্দিক ওসমানী বলেন, এ বিষয়ে বিচার বিভাগ, আইনজীবী সমিতি, জেলা প্রশাসন ও জেল সুপারের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন, অন্যথায় এই প্রক্রিয়ায় বিচারপ্রার্থীদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম বলেন, আমাকেও ফোন দিয়েছিল। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকলেই প্রায় একই নম্বর (01300807511) থেকে কল পাচ্ছেন। ফলে এটি একক কোন ব্যক্তি নাকি একাধিক ব্যক্তির সমন্বিত চক্র তা বলা মুশকিল। কারো কারো ধারণা একজনের কাছে বিভিন্ন অঞ্চলের আইনজীবীদের ফোন নম্বর থাকা স্বাভাবিক নয়।
এছাড়া একই নম্বর থেকে কল করার মানে হচ্ছে যিনি কল করছেন নম্বরটি তার নয়। খুব সম্ভবত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্লোন করা নম্বর কিংবা অবৈধ উপায়ে সংগৃহীত কোন নম্বর। আবার পরিচয়ও ব্যবহার করা হচ্ছে একাধিক। কখনো কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, কখনো কক্সবাজার, কিংবা কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের জেল সুপারের পরিচয় ব্যবহার করছেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাভোকেট ইকবালুর রশীদ আমিন (সোহেল) -এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে জানান, সমিতির কোন সদস্যের লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে মৌখিকভাবে অনেকের কাছ থেকে অবগত হওয়ার পর কার্যকরি কমিটিতে আলোচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইতোমধ্যে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে জেল সুপারকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের লিখিত আকারে এ বিষয়ে জানানো হবে বলেও মন্তব্য করেন সমিতির সভাপতি।
জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাভোকেট তাওহীদুল আনোয়ার বিষয়টি নিয়ে সমিতি কনসার্ন উল্লেখ করে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে বলেন, আইনজীবীদের নিয়ে, আইনজীবীদের জন্যই এই সমিতি। ফলে আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে সমিতির সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। সেজন্য বার লিখিত অভিযোগ না পাওয়া সত্ত্বেও স্বউদ্যোগে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।