পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের চর ইমারশন খালের ওপর বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার অভিযোগ স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন পটুয়াখালীর একটি আদালত।
একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ আমলে নিয়ে গত মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) স্বপ্রণোদিত হয়ে গলাচিপা আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মামুনুর রহমান এই আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের স্টেনোগ্রাফার মোঃ কাইউম আকন্দ এই আদেশের সত্যতা স্বীকার করে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে বলেন, এই অপরাধের সাথে কারা জড়িত তা সুনির্দিষ্টভাবে তদন্ত করে আদালত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে রাঙ্গাবালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে গত ১১ সেপ্টেম্বরে ‘খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের চর ইমারশন খালের দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটার। এ খালের অন্তত ১০টি স্থানে বাঁধ দিয়ে দখল করে স্থানীয় কয়েকজন মাছ চাষ করছেন। বাঁধ দেওয়ার কারণে খালে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
মাছ চাষের কারণে শুকনো মৌসুমে খালের পানি সেচকাজে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। আর বৃষ্টি হলেই খালের দুই পাড়ের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে খালপাড়ের বাসিন্দারা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
এলাকার কৃষক কালাম চৌকিদার বলেন, বৃষ্টি হলেই পানি সরতে পারে না, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে খেত পানিতে ডুবে ফসল অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে।
একসময়ের খরস্রোতা এই খালে এভাবে বাঁধ দেওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও শুকনো মৌসুমে তরমুজ চাষে মিষ্টি পানির অভাব দূর করতে বাঁধ কেটে খাল দখলমুক্ত করে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করার জন্য চর ইমারশন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা কৃষি বিভাগের আবেদন জানিয়েছেন।
বৃষ্টি হলেই পানি সরতে পারে না, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে খেত পানিতে ডুবে ফসল অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে।
কৃষক মো. মাসুম বলেন, আমন আবাদের সময় অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার ফলে চাষাবাদ ব্যাহত হয়। বিষয়টি কৃষি বিভাগে জানালে তারা দখলদারদের দখলে থাকা জলকপাট খুলে পানি নামিয়েছিল। কিন্তু এভাবে চাষাবাদ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। সামনে তরমুজের মৌসুম। তখন মিষ্টি পানির প্রয়োজন হবে। দখলদারেরা খালের পানি ব্যবহার করতে বাধা দেন।
উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের চর ইমারশন গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালটি দক্ষিণে আগুনমুখা নদীতে মিশেছে। তবে সেখানে একটি জলকপাট থাকলেও তা অকেজো। চর ইমারশন মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানের বিএস দাগ নম্বর ৭০২ ও ৬৭১ এই খালের আয়তন ৮ দশমিক ২৭ একর।
গত শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) দেখা যায়, খালটির উত্তর অংশে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং দক্ষিণে আগুনমুখা নদী। তবে খালের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে পুকুর তৈরি করা হয়েছে। এতে পানিপ্রবাহ বন্ধ আছে। মনে হচ্ছে এটি খাল নয়, যেন বড় বড় পুকুর। এসব পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ দেশি প্রজাতির মাছ চাষ করা হচ্ছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন বলেন, খালটি তার আওতায় রয়েছে। খালের দুই পাড়ে অন্তত ৮০ একর ফসলি খেত আছে। খালে অন্তত ১০টি বাঁধ আছে। খালের সব বাঁধ অপসারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হবে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, খালটির দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটার এবং প্রস্থে কোথাও ৪০ ফুট, কোথায় ৬০ ফুট। একসময় এই খাল দিয়ে বড় বড় নৌকা চলাচল করত। ব্যবসায়ীরা মালামাল নৌকায় নিয়ে আসতেন। বাঁধ দিয়ে বড় বড় পুকুর করে খালটির দুই পাড়ের কিছু বাসিন্দা মাছ চাষ শুরু করেছেন। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চর ইমারশন সরকারি খালটি কিছু ব্যক্তির দখলে চলে গেছে।
খালে বাঁধ দেওয়ার অভিযোগ আছে এলাকার মনির হাওলাদার বিরুদ্ধে। মনির বলেন, তাঁর বাড়ির সামনে জমির মধ্যে খাল পড়েছে। বাড়িতে যাতায়াতের জন্য নিজেদের জমিতে বাঁধ দিয়েছেন।
খালে বাঁধ দেওয়া আরেকজন হলেন সেরাজ রাঢ়ী। তিনি বলেন, অনেকেই খালে বাঁধ দিয়েছেন, তাই তিনিও তাঁর বাড়িতে যাতায়াতের জন্য বাঁধ দিয়েছেন। জলকপাট থেকে খালের সব স্থানের বাঁধ অপসারণের জন্য বাঁধ কেটে দেওয়ার উদ্যোগ নিলে তিনি তাঁর বাড়ির সামনের বাঁধ অপসারণ করতে প্রস্তুত আছেন।
রাঙ্গাবালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেক মুহিদ বলেন, কোনোভাবেই সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। বাঁধ অপসারণসহ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।