মাদক মামলার আসামিকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের লক্ষ্যে প্রবেশনে মুক্তি দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু মুক্তি পেয়ে প্রবেশন সুযোগের অপব্যবহার করেন আসামি এবং সংশোধন হওয়ার বদলে পরিবার ও প্রতিবেশীদের অতীষ্ঠ করে তোলেন। নিরুপায় মা আদালতে এসে নিজের গর্ভজাত সন্তানের প্রবেশন সুবিধা বাতিল করে তাকে কারাগারে প্রেরণের আবেদন করেন। অবশেষে আসামিকে শুনানির সুযোগ দিয়ে তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালত-এর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ আল্লাম এই আদেশ প্রদান করেছেন।
ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. নজরুল ইসলাম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম এক মামলায় (জিআর ৩০৫/১৯ পুঠিয়া) ১০ পিস ইয়াবা হেফাজতে রাখার দায়ে আটক হন। বিচার শুরু হলে গত ২১ জুলাই তিনি স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে সংশোধনের সুযোগ প্রার্থনা করেন।
আদালত তাকে এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করলেও তাৎক্ষণিকভাবে কারাগারে প্রেরণ না করে বেশ কিছু শর্ত দিয়ে পরিবার ও সমাজের সঙ্গে অবস্থান করে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দেন। শর্তে বলা হয়, আসামি মাদকসহ কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে কিংবা আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবেন না।
কিন্তু গত ১ সেপ্টেম্বর আসামি মো. শফিকুল ইসলাম-এর মা আদালতে হাজির হয়ে বলেন, প্রবেশনে মুক্তি পেয়ে তার ছেলে (আসামি) বাবা-মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে এবং পুকুরের মাছ চুরি, গাছ কাটা ও মাদক সেবনের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়েছে। ছেলের প্রবেশন সুবিধা বাতিল করে তাকে কারাগারে নেওয়ার প্রার্থনা করেন ওই মা।
মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে আসামি মো. শফিকুল ইসলাম-এর প্রবেশন সুবিধা বাতিল করে কেন তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হবে না, সে ব্যাপারে কারণ দর্শানোর জন্য আসামিকে আদেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে আসামি সম্পর্কে তার মা যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, সেগুলোর সত্যতা আছে কি না এবং প্রবেশনের শর্তগুলো আসামি সত্যিই মেনে চলছেন কি না, সে বিষয়ে প্রবেশন কর্মকর্তার কাছ থেকেও লিখিত প্রতিবেদন তলব করেন আদালত।
আসামির প্রবেশন বাতিল বিষয়ে শুনানির জন্য আজকের দিনটি ধার্য ছিল। নোটিশ পেয়েও আসামি মো. শফিকুল ইসলাম এদিন আদালতে হাজির হননি। অন্যদিকে প্রবেশন কর্মকর্তা লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতকে জানান, আসামি মো. শফিকুল ইসলামের মধ্যে প্রবেশনের শর্ত প্রতিপালনে কোনো প্রচেষ্টাই নেই। বর্তমানে তার মধ্যে মাদকসেবনের প্রবণতা হ্রাস পাওয়ার পরিবর্তে বরং অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মাদক সেবনের টাকা জোগাড় করার জন্য সে পুকুরের মাছ চুরি করছে, পিতা-মাতার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে এবং তাদেরকে শারীরিক লাঞ্ছনা ও ভয়ভীতি প্রদান করছে। আসামি প্রতিবেশী শিশুদেরও ভীতিকর পরিস্থিতিতে রেখেছে। এসব কারণে আসামির পরিবার, প্রতিবেশী ও স্থানীয় লোকজন প্রবেশনারের আচরণে চরম ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত মর্মেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
শুনানি শেষে আদালত আসামি মো. শফিকুল ইসলামের প্রবেশন সুবিধা বাতিল করেন। আদালত তার আদেশে বলেন, প্রবেশনের শর্তে মাদক গ্রহণ ও শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল। আসামির নিজ মা আসামির প্রবেশন সুবিধা বাতিলের আবেদন করেছেন এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েও আসামি আদালতে হাজির হননি। প্রবেশন কর্মকর্তার প্রতিবেদন থেকেও স্পষ্ট যে, আসামি প্রবেশনের শর্ত ভঙ্গ করেছেন। এসব কারণে আদালত আসামিকে ২০১৮ সনের মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) ধারার ১০(ক) সারণির প্রমাণিত অপরাধের দায়ে আসামিকে ০১ (এক) বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২,০০০ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করার আদেশ দিয়ে আসামির প্রতি গ্রেপ্তারি পরওয়ানা ইস্যু করেন।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আদালতে নিযুক্ত সরকারি কৌঁসুলি মো. জিয়াউর রহমান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে বলেন, প্রবেশনে প্রেরণের মধ্য দিয়ে আদালত আসামিকে সংশোধনের একটা সুযোগ দেন। এই সুবিধার অপব্যবহার করলে প্রবেশন সুবিধা যে বাতিল হতে পারে এবং আসামিকে কারাগারে যেতে হতে পারে, এটা অনেক ক্ষেত্রে প্রবেশনে মুক্ত আসামিরা ভুলে যেতে পারেন। এই আদেশের মধ্য দিয়ে আদালত একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেন।