বাধাকে জীবনের অংশ মেনে নিয়ে সততার সাথে জীবন পরিচালিত করে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জীবন্ত ও প্রত্যক্ষ উদাহরণ, নিজের জীবনের চড়াই-উৎরাইয়ের নানা গল্প অকপটে স্বীকার করতে দ্বিধান্বিত বা অস্বস্তিবোধ না করা দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর জন্মদিন আজ।
সকল উত্থান-পতনে ধৈর্য ধরে নিমগ্ন সাধনারত হয়ে করতে হবে অপেক্ষা, হতে হবে সৎ ও পরোপকারী, এমন সব মৌলিক নৈতিকতা জীবনের অংশ বানিয়ে নেওয়া এই বিচারকের জীবনেও অপমানজনক ভাবে কালো অধ্যায় তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে বিচারক জীবনে পুনর্বহাল হয়েছেন সসম্মানে।
কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন কিছু মানুষ মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে কিন্তু মনোবল হারালে চলবে না। তাঁর এই অগাধ বিশ্বাস আর কর্মময় জীবনের নৈয়মিক অনুশীলন তাঁকে বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদে সমাসীন করেছে।
আবদুল গোফুর মোল্লা ও নূরজাহান বেগম দম্পতির সন্তান হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ সালে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ।
তিনি খোকসা জানিপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৪ সালে সরকারি পি.সি. কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাস করেন। পরে তিনি ধানমন্ডি ল’ কলেজ থেকে আইনে স্নাতক পাস করেন।
১৯৮১ সালে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। একই বছরের ২১ আগস্ট জেলা আদালতে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তিনি আইনজীবী হিসেবে হাইকোর্ট এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে আপিল বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হন।
তিনি খুলনা সিটি কর্পোরেশন, কুষ্টিয়া পৌরসভা, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন সংস্থা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রধান আইন উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি তার দায়িত্ব পালনে অসুবিধার কথা উল্লেখ করে ৪ জুন ২০০৮ সালে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
২০০১ সালে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তবে হাইকোর্টের নিয়মিত বিচারপতি থাকা সত্ত্বেও ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারক হন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, তিনি প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিচারপতি হিসেবে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। এছাড়াও তিনি সৌদি আরব সফর করেছেন।
এছাড়াও তিনি ৩০ এপ্রিল ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথমবার মেয়াদ শেষ হলে তাকে ৪ মে ২০২০ সালে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে পুনরায় নিযুক্ত করা হয়।
২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন।
তাঁর বড় ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি থেকে অবসরে গিয়েছেন। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ও বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দেশের ইতিহাসে প্রথম দুই ভাই যারা সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে আসীনের নজির স্থাপন করেছেন।