নিজের নামও লিখতে পারেন না আবু বকর সিদ্দিক নামে এক ব্যক্তি। পড়তেও পারেন না। অথচ নিজেকে পরিচয় দেন বিচারক হিসেবে। জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনে ফোন দিয়ে বিচারক পরিচয়ে সংগ্রহ করেন পুলিশের মোবাইল ফোন নম্বর। পরে তাদের ফোন দিয়ে ওই একই পরিচয় দিয়ে নানারকম তদবির করেন। অবশ্য সম্প্রতি রাজধানী থেকে কথিত সেই বিচারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, মহাসড়কের চলমান কোন গাড়ি বা বাসের নম্বর সংগ্রহ করা তার প্রথম কাজ। এরপরে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে নিজেকে জজ পরিচয় দিয়ে সেই থানা এলাকার ওসি বা ট্রাফিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন জহরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। হাইকোর্টের ৩ নং বেঞ্চের বিচারক পরিচয়ে মুঠোফোনে বলতেন, এই নম্বরের গাড়িটি আমার গাড়িকে এক্সিডেন্ট করে পালিয়েছে।
তখন কর্মকর্তারা সেই গাড়িটি আটক করলে ফোনে জজ পরচিয়দানকারী সেই গাড়ির চালক বা মালিকের সাথে কথা বলতেন। তার গাড়ি মেরামত বাবদ টাকা দিলে তবেই ছাড়া হবে। না হলে গাড়ি জব্দ থাকবে ও জেলও খাটতে হবে চালককে। তখন বাধ্য হয়ে কথিত জজকে বিকাশে টাকা দিয়ে তবে মুক্তি পেত ভুক্তভোগীরা। পুরো প্রক্রিয়াটার লেনদেন ও কথাবার্তা হতো মুঠোফোনে।
পুলিশ জানায়, ২০ বছর বয়সী আবু বকর সিদ্দিকের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশায়। বাস করেন ঢাকা জেলার আশুলিয়ায়। পুলিশের হাতে গ্রেফতারের একদিন আগেও তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন একজন বিচারক হিসেবে। গত কয়েক মাসে এ পরিচয়ে তিনি ফোন দিতেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ কর্মকর্তাদের।
তার প্রতারণার কৌশল ছিল ভিন্ন। রাস্তায় নিদিষ্ট কোনো গাড়ি টার্গেট করে তিনি ফোন দিতেন দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে। বলতেন গাড়িটিকে আটকানোর জন্য। পরে মালিকের কাছ থেকে কৌশলে আদায় করতেন টাকা। অসংখ্য অভিযোগের পর ঢাকা জেলার গোয়েন্দা পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন আবু বকর সিদ্দিক।
এ বিষয়ে সাভার জোনের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (এডমিন) আব্দুস সালাম বলেন, জজ পরিচয় দিলে তাৎক্ষণিক পরিচয় যাচাই করা সম্ভব ছিলো না। একি ঘটনা বার বার ঘটার পর বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। মূলত হাইকোর্টের ৩ নং বেঞ্চে জহরুল ইসলাম নামে একজন আসল বিচারপতি রয়েছেন। ফলে বিষয়টি খুবই স্পর্শকতার। তবে নানা তদন্ত শেষে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই প্রতারক সেই নাম ব্যবহার করতো।
ঢাকা উত্তর ডিবির পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি গত দুই মাস ধরে আবু বক্কর নিজেকে জজ পরিচয়ে ৯৯৯ এর অপব্যবহার করে অপকর্মের করে আসছিলো। ইতিমধ্যে আবু বকর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন জেলায় এই ধরণের অপকর্ম করেছে।
ঢাকা জেলার গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোবাশশিরা হাবিব খান বলেন, প্রথমে সে জজ পরিচয় দেয়। এরপর ট্রিপল নাইনে ফোন দিয়ে এলাকাভিত্তিক পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে। তদন্তে সবকিছু বের হয়ে এসেছে।
তিনি জানান, সে আসলে অত লেখাপড়াও জানে না, নামটাও ঠিক মতো লিখতে পারে না। কোথাও না কোথাও থেকে সে এ ধরনের প্রতারণা শিখেছে। কী কারণে সিদ্দিক নিজেকে বিচারক পরিচয় দিতেন, তার কারণ অনুসন্ধান করছে পুলিশ।