পেশায় ঘটক কিন্তু পরিচয় দিয়ে বেড়ান অ্যাডভোকেট হিসেবে। অথচ বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত হননি। নামের শেষে অ্যাডভোকেট লিখে ঘটকালি ও রাজশাহী আইনজীবী সমিতির সদস্যকে গালিগালাজ, জীবননাশের হুমকি এবং মানহানি করার ঘটনায় মামলার আবেদন করা হয়েছে।
রাজশাহী জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. আতিকুজ্জামান নাসিম বাদী হয়ে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) রাজশাহী জেলার বোয়ালিয়া থানার সিএমএম আমলী আদালতে ঘটক মো. আসলামের (৫২) বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন।
মামলার আবেদনে বলা হয়, বাদী অ্যাডভোকেট মো. আতিকুজ্জামান নাছিম (৫৭) গত ১৭ নভেম্বর সকাল পৌনে ১০টায় রাজশাহী জেলার বোয়ারিয়া থানার অন্তর্গত রাজশাহী পলিটেকনিক কলেজের সামনে ‘মডার্ণ বাঁধন ঘটক অফিসে’ তার এক আত্মীয়ের কাজের জন্য প্রবেশ করেন। এসময় তিনি সাইন বোর্ডে পরিচালক মো. আসলাম (এম. এ. অ্যাডভোকেট) লেখা দেখেন। বাদীর আত্মীয় ওই ঘটকের সঙ্গে কথা বলার সময় বাদী আইনজীবীর পরিপূর্ণ পোশাকে পাশে বসে ছিলেন।
হঠাৎ ঘটক আসলাম বাদী নাছিমকে ভিজিটিং কার্ড দেখাতে বলেন। তখন তিনি ঘটক আইনজীবী কি না সন্দেহ হওয়ায় বলেন ভিজিটিং কার্ড কি করবেন? তখন ওই ঘটক উচ্চস্বরে বাদীকে বলে আপনার এতো অহংকার কিসের? মেয়ে কি এত সস্তা? ডিসির সঙ্গে আমার উঠাবসা আছে। আপনারা উকিলরা তো বাটপারি করে খান।
পরে বাদী স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে জানতে পারেন, ঘটক কোনো অ্যাডভোকেট নয় বরং অ্যাডভোকেট পরিচয়ে বিভিন্ন মানুষকে প্রতারণা করে অর্থ আদায় করেন। এ ঘটনায় অ্যাডভোকেট মো. আতিকুজ্জামান নাছিম গত ২০ নভেম্বর রাজশাহী বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বরাবর দরখাস্ত দিয়ে প্রতিকার চান। পরে ২১ নভেম্বর বার সমিতির পক্ষ থেকে বাদীকে আদালতে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর তিনি মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে গত ২২ নভেম্বর ঘটক মো. আসলামের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আবেদনে জানানো হয়, সাংবাদিক ঘটকের কাছে অ্যাডভোকেট পদবী ব্যবহারের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ঘটক জানান, আমি আমার ঘটক সমিতির অ্যাডভোকেট, সবরকম আইনি পরামর্শ দিয়ে থাকি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাস করেছি। কিন্তু কোন বিভাগ থেকে পাস করেছেন তা এড়িয়ে গেছেন তিনি।
এলএলবি বা এলএলএম কোর্স কোন প্রতিষ্ঠান থেকে করেছেন জিজ্ঞাসা করাতে ঘটক বলেন, লোকনাথ স্কুল থেকে এল.এল.বি করেছি, বারেও পরীক্ষা দিয়েছি, কিন্তু উত্তীর্ণ হতে পারিনি। তবে লোকনাথ স্কুলে এলএলবি পড়ানো হয় কিনা, এমন প্রশ্ন করলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
আসামি ঘটক অ্যাডভোকেট না হয়েও তার সাইনবোর্ডে নামের পার্শ্বে এম,এ অ্যাডভোকেট লিখে জনসাধারণের সামনে নিজেকে অ্যাডভোকেট হিসেবে পরিচয়, বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি, জীবননাশের হুমকি এবং অ্যাডভোকেটরা বাটপার বলে আইনজীবী সমাজের মানহানিকর উক্তি করায় মামলা আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ জানানো হয়।