নিরপেক্ষ ও ন্যায় বিচার নিশ্চিতে যে শপথ বাক্য পড়েছি তা বিচারিক জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত সার্বক্ষণিক স্মরণ রেখে নিরপেক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে বাকি দিনগুলো অতীতের মত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নপূরণে বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলাম।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নতুন নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী আজ রোববার (১১ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে সংবর্ধনার জবাবে এসব কথা বলেন।
বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, সত্য কথা স্পষ্ট করে বলা আমার সহজাত প্রবৃত্তি, যা আমার জীবন চলার পথে প্রায়শই প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে। আত্মবিশ্বাসের শক্তিতে সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে উত্তীর্ণ হওয়া আমার জীবনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
তিনি বলেন, অনুরাগ ও বিরাগের উর্ধ্বে উঠে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণতান্ত্রিক ধারায় সততা ও নিষ্ঠার সাথে দেশের আর্থ সামাজিক ও মানব সম্পদের উন্নয়ন, রাষ্ট্রের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়ন, জাতিগতভাবে আমাদের জন্মের ইতিহাস, ‘জাতির পিতা ও বাংলাদেশ’ এ সকল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্থায়ীত্বকরণ অপরিহার্য্য।
আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত এই বিচারপতি বলেন, পরিবার থেকে রাষ্ট্রের ৩টি অংশেই সাহসী, বিচক্ষণ, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নির্লোভ, ত্যাগী, আদর্শিক, সৎ নেতৃত্ব আজ ভীষণ প্রয়োজন। একটি জনকল্যাণকর সুখী সমৃদ্ধশালী গণতান্ত্রিক উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক রূপকে স্থায়ী করতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই।
একজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষ এবং এ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের একজন বিচারক হিসেবে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন উল্লেখ করে সংবর্ধনা সভায় তিনি বলেন, সমগ্র জাতিকে জানাতে চাই নিরপেক্ষ ও ন্যায় বিচার নিশ্চিতে যে শপথ বাক্য পড়েছি তা বিচারিক জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত সার্বক্ষণিক স্মরণ রেখে নিরপেক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে বাকি দিনগুলো অতীতের মত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নপূরণে বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলাম।
এদিন সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সদ্য নিয়োগ পাওয়া তিন বিচারপতিকে সংবর্ধনা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়।
সুপ্রিম কোর্টের রীতি অনুযায়ী, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির নতুন বিচারপতিদের গৌরবময় কর্মজীবন পড়ে শোনান।
এরপর সংবর্ধনার জবাবে আপিল বিভাগে নতুন নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বক্তব্য রাখেন। এসময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতি ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তিনজনকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। তার নির্দেশক্রমে তাদের নিয়োগ দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে ছয়জন বিচারপতি ছিলেন। নতুন তিন বিচারপতি নিয়োগের মাধ্যমে আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়াল নয় জনে। তবে এরদের মধ্যে একজন ছুটিতে রয়েছেন। ফলে কার্যত বিচারপতি আছেন ৮ জন।