দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক গণপরিবহন মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে দেশের গণপরিবহন খাতে এক বিপ্লবের সূচনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠুভাবে রেল পরিচালনার জন্য সরকার মেট্রোরেল আইন-২০১৫ অনুমোদন করেছে।
এ আইনে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনের জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ১০ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে মেট্রোরেল যদি দুর্ঘটনায় পতিত হয় এবং এতে যদি কোনো নাগরিক বা তার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের বিধানও রাখা হয়েছে আইনে।
মেট্রোরেল আইন-২০১৫ ভঙ্গের জন্য কী ধরনের শাস্তি বা ক্ষতিপূরণের বিধান রয়েছে চলুন দেখে নেয়া যাক একনজরে:
ক্ষতিপূরণ
ধারা ২১: মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার কারণে মেট্রোরেল ও যাত্রী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা স্থাপনা ও সম্পদের ক্ষতি হলে এবং সম্পদের মালিক কর্তৃক ক্ষতিপূরণের দাবি উত্থাপিত হলে, লাইসেন্সধারী ওই ব্যক্তির স্থাপনা বা সম্পদের জন্য মালিককে দাবি উত্থাপনের ১০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আনার ব্যবস্থা করবেন।
লাইসেন্স ব্যতীত মেট্রোরেল নির্মাণ, উন্নয়ন বা পরিচালনা
ধারা ৩০: লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তি মেট্রোরেল নির্মাণ, উন্নয়ন, পরিচালনা বা মেট্রোরেল সেবা দিলে এবং কোনো যন্ত্রপাতি স্থাপন বা প্রতিস্থাপন করলে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
অনুমোদন ব্যতীত লাইসেন্স হস্তান্তর
ধারা ৩১: সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স হস্তান্তর করলে তাকে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
প্রবেশাধিকারে বাধা
ধারা ৩২: মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, প্রতিনিধি বা কর্মচারীকে মেট্রোরেল এলাকার পার্শ্ববর্তী ভূমি ও স্থাপনায় স্থাপনার যন্ত্রপাতি প্রবেশে কোনো ব্যক্তি যদি বেআইনিভাবে বাধা দেয়, তাহলে তাকে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
কর্মকাণ্ড সম্পাদনে প্রতিবন্ধকতা
ধারা ৩৩: আইনানুগ কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তি যদি মেট্রোরেল নির্মাণ, উন্নয়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্য কোনো কর্মকাণ্ড সম্পাদনে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা প্রদান করেন বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, তাহলে তিনি অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সংরক্ষিত স্থানে অননুমোদিত অনুপ্রবেশ
ধারা ৩৪: মেট্রোরেলের সংরক্ষিত স্থানে কোনো ব্যক্তি যদি অননুমোদিতভাবে অনুপ্রবেশ করেন বা ওই স্থানে প্রবেশের পর মেট্রোরেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা তার অধীনস্থ ব্যক্তির অনুরোধের পরও সেখানে অবস্থান করেন, তাহলে তাকে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
মেট্রোরেল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া
ধারা ৩৫: কোনো ব্যক্তির দ্বারা যদি মেট্রোরেলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় বা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এমন কাজ করেন, তাহলে তাকে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
অননুমোদিতভাবে মেট্রোরেলের টিকিট বা পাস বিক্রি বা জাল
ধারা ৩৬: কোনো ব্যক্তি যদি অননুমোদিতভাবে মেট্রোরেলের টিকিট বা পাস বিক্রি করেন, অথবা টিকিট বা পাস বিকৃত কিংবা জাল করেন, তাহলে তাকে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
কর্মচারীদের হাতে মেট্রোরেল বা এর যন্ত্রপাতির অপব্যবহার
ধারা ৩৭: কোনো কর্মচারী যদি মেট্রোরেল ও এর যন্ত্রপাতি এমনভাবে ব্যবহার করেন যাতে কোনো যাত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় বা হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং দায়িত্ব পালনকালে এমন কোনো কাজ করেন যার ক্ষমতা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাকে দেননি, তাহলে তার এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে।
পরিদর্শককে দায়িত্ব পালনে বাধাদান বা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান
ধারা ৩৮: পরিদর্শককে দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যক্তি বাধা দিলে, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে, মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলে, তাকে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
বিমা না করা
ধারা ৩৯: লাইসেন্সধারী যদি মেট্রোরেল ও এর যাত্রীর এবং তৃতীয় পক্ষের বিমা না করেন, তাহলে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
টিকিট বা বৈধ পাস ছাড়া ভ্রমণ
ধারা ৪০: কোনো ব্যক্তি যদি টিকিট বা বৈধ পাস ছাড়া বা অনুমোদিত দূরত্বের বেশি মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেন বা ভাড়া এড়ানোর উদ্দেশ্যে বিকল্প কৌশল অবলম্বন করেন, তাহলে তাকে যাতায়াতের ভাড়ার ১০ গুণ পর্যন্ত জরিমানা বা অর্থ অনাদায়ে অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে।
অপরাধ সংঘটনে সহায়তা, প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্র
ধারা ৪৩: কোনো ব্যক্তি যদি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছেন বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা দেন বা যড়যন্ত্র করেন এবং ওই বড় প্ররোচনার ফলে সংশ্লিষ্ট অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে বলে প্রমাণিত হলে সহায়তাকারী বা প্ররোচনাদানকারীর নির্ধারিত দণ্ড হবে।
অপরাধ পুনঃসংঘটনের দণ্ড
ধারা ৪৪: কোনো ব্যক্তি যদি এ আইনে উল্লিখিত কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে দণ্ড ভোগ করার পর আবার একই অপরাধ করেন, তাহলে ওই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ যে দণ্ড রয়েছে তাকে সেটির দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ
ধারা ৪৫: ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, কর্তৃপক্ষ বা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা পরিদর্শকের লিখিত প্রতিবেদন ছাড়া কোনো আদালত এই আইন বা বিধির অধীন কোনো মামলা বিচারের জন্য গ্রহণ করবেন না।
ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োগ
ধারা ৪৬: এই আইনের বিধানাবলির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ না হওয়া সাপেক্ষে, এই আইন বা বিধির অধীন অপরাধের তদন্ত, বিচার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি প্ৰযোজ্য হবে।
মোবাইল কোর্টের এখতিয়ার
ধারা ৪৭: এ আইনের অন্যান্য ধারায় ভিন্নরূপ যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের ধারা ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৭, ৩৮ ও ৪০-এর অধীন অপরাধসমূহ মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৫৯ নম্বর আইন) এর তফসিলভুক্ত করে বিচার করা যাবে।
ক্ষমতা অর্পণ
ধারা ৪৮: সরকার, এই আইনের অধীন যেকোনো ক্ষমতা বা দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট শর্তে, নির্বাহী পরিচালক বা কর্তৃপক্ষের যেকোনো কর্মকর্তাকে অর্পণ করতে পারবে।