জনগণের পুলিশ হিসেবে সেবা দিতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জনগণের মনে পুলিশের প্রতি যে আস্থা তৈরি হয়েছে, তা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে।
আজ মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে ‘পুলিশ সপ্তাহ’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের বিভিন্ন দুর্যোগ ও সংকটকালীনে মানুষের পাশে থেকে আস্থা অর্জন করেছে পুলিশ বাহিনী।
সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি, জামায়াত-শিবিররা যেভাবে প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যা করেছে, এভাবে পুলিশের গায়ে কখনও কেউ হাত দেয়! তা কখনও দেখা যায়নি, যদিও তা বাংলাদেশে ঘটেছে। বাংলাদেশে এ ধরনের অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা যেন আর না ঘটে।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরদের তাণ্ডব-অগ্নিসন্ত্রাসের ফলে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল। ৫০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করে অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে, যেখানে ২৯ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন।
তিনি আরও বলেন, অনেক পুলিশ সদস্য আগুনে দগ্ধ হয়ে বেঁচে আছেন, কিন্তু কারও চেহারা এত বিকৃত হয়েছে যে, তারা মানুষের সামনে যেতে পারেন না। এ অনুষ্ঠানে তাদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সবসময় মানুষের পাশে আছে। যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় পুলিশ পাশে থাকে। পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগেও পুলিশ ভূমিকা রাখে। মানুষের জানমাল বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনকেও উৎসর্গ করে। যে কোনো ঝুঁকি নিতে পিছপা হয় না। এটাই হচ্ছে পুলিশের বড় কাজ যা পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে করে যাচ্ছে।
বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা এ সময় আরও উল্লেখ করেন ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তাদের তাণ্ডব-অগ্নিসন্ত্রাসে সাড়ে ৩ হাজার বাস-ট্রাক, ১৯টি ট্রেন, ১১টি লঞ্চ পুড়িয়ে ধ্বংস করে। ৭০টি সরকারি ও ৬ ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়। সে সময় পুলিশের সদস্যরা জীবনবাজি রেখে এই রকম ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে রুখে দিয়ে জনগণের নিরাপত্তা দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর পুলিশকে আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলেন বঙ্গবন্ধু। আর তাই বর্তমান সরকারও এ বাহিনীর আধুনিকায়নে কাজ করে চলেছে।
সরকারের দায়িত্ব পালনে তিন মেয়াদে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পুলিশের আধুনিকায়নেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশকে আরও গতিশীল করতে একে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদের হাত থেকে আমরা দেশকে রক্ষা করেছি। জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদক প্রতিরোধেও পুলিশ ভূমিকা রাখছে। জনগণের পুলিশ হিসেবেই জনগণের সেবা দিচ্ছে পুলিশ। পুলিশের ওপর জনগণের যে আস্থা তৈরি হয়েছে, সেটা ধরে রাখতে হবে। এ সময় হোলি আর্টিজানে হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেক চক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ কখনও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে না। কোনো প্রতিবন্ধকতা যেন অগ্রযাত্রায় বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, মন্দার ধাক্কা যেন না আসে, সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ ও তার প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট পরিস্থিতি তৈরি না হলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। ১৯৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এ সময় পুলিশকেও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্মত স্মার্ট পুলিশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি আরও বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন আনাবাদী না থাকে; তাহলেই কেবল আশা করি, আমরা এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব।’
করোনার কারণে দুই বছরের ব্যবধানে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে উপস্থিত হয়ে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন তিনি।
এবারের পুলিশ সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য- ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে, পুলিশ আছে জনতার পাশে’। আজ থেকে শুরু হওয়া পুলিশ সপ্তাহের নানা কর্মসূচি চলবে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা জিপে চড়ে বাংলাদেশ পুলিশের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। পুলিশের বিভিন্ন দল বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে।
পরে তিনি ১১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) সাহসিকতা, রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) সাহসিকতা, বিপিএম সেবা এবং পিপিএম সেবা প্রদান করেন।
তাদের মধ্যে ১৫ জন বিপিএম সাহসিকতা এবং ২৫ জন পিপিএম সাহসিকতা, ২৫ জন বিপিএম সেবা এবং ৫০ জন পিপিএম সেবা লাভ করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন তাকে স্বাগত জানান।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।