লিগ্যাল এসিসটেন্স টু হেল্পলেস প্রিজনার্স এন্ড পার্সনস (এলএএইচপি) এর আয়োজনে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর মিরপুরে ট ব্লকে ‘বাল্য বিবাহের অশুভ পরিণাম ও প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা’ অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পি। বায়তুল আমান জামে মসজিদের সভাপতি আব্দুর রহমান খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আব্দুর রহিম সরদার।
বাল্য বিবাহের অশুভ পরিণাম ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন, রেডটাইমসের প্রধান সম্পাদক ও জালালাবাদ সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সৌমিত্র দেব এবং মিরপুর থানা, মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও অংশীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, কথাসাহিত্যিক শ্যামলী খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পি বলেন, ‘বাল্য বিবাহ একটি দেশের জন্য অভিশাপ। বাংলাদেশের আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণ করা আছে ১৮ বছর এবং ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ বছর। এর কম বয়সী ছেলে মেয়েদের বিয়ে হলে সেটি হয় বাল্য বিয়ে, যা একটি দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু আইনের বিধি নিষেধ থাকলেও বাল্য বিয়ের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় নিয়মিতই। বাল্য বিয়ে দেশের উন্নয়নে একটি বড় বাধা। যদিও বাল্য বিয়ে রোধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের পদক্ষেপ। তা স্বত্ত্বেও বাল্য বিবাহের কুফল ও এর প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’
রেডটাইমসের প্রধান সম্পাদক ও জালালাবাদ সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সৌমিত্র দেব বলেন, ‘একশো বছর আগেও এ দেশে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে ঘরে ঘরে বাল্য বিবাহ প্রচলিত ছিল । কিন্তু এখন শিক্ষিত ও উন্নত সমাজে কেউ বাল্য বিবাহের কথা ভাবতেও পারেন না। বাল্য বিবাহের প্রধান শিকার এখন মেয়েরা। এই কুপ্রথা প্রতিরোধ করতে হলে আইনের প্রয়োগ যেমন দরকার তেমনি প্রয়োজন সচেতনতা।মিডিয়া এই সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করতে পারে। তবে সমাজে ধর্মীয় নেতাদের প্রভাব খুব বেশী। বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে মসজিদের ইমাম , মন্দিরের পুরোহিত ও গির্জার পাদ্রীকেও কাজে লাগাতে হবে।’
বিভিন্ন সূত্রের পরিসংখ্যান টেনে শ্যামলী খান বলেন, ‘ঢাকার বস্তিতে থাকা ৮০ ভাগ কন্যাশিশু বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। বালকদের মধ্যে এই হার কিছুটা কম। এই বাল্যবিবাহের মূলে রয়েছে সুপাত্র প্রাপ্তি, দরিদ্রতা এবং যৌন হয়রানির ভয়। বাল্য বিয়ে নারীর অনিরাপদ মাতৃত্ব ঝুঁকি বাড়ায়। বাল্য বিয়ের কারণে অকাল গর্ভপাত হওয়ার ফলে মা ও সন্তান অপুষ্টিতে ভুগে। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের সামাজিকভাবে সচেতন হতে হবে। মেয়েদের নিরাপদ পথচলা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষা পতিষ্ঠান, কর্মস্থল, রাস্তাঘাট গণপরিবহনে নারীবান্ধব ও যৌন হয়রানিমুক্ত সামাজিক নিরাপত্তার বিধান নিশ্চত করতে হবে। কোথাও বাল্য বিয়ে ও যৌতুক নারী নির্য়াতন হলে সরকারি আইনি সহায়তা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন- মিরপুর ট ব্লক সংলগ্ন বস্তির কিশো-কিশোরী ও অভিভাবকবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।