ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাসে হট্টগোল, বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের ‘গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের’ অভিযোগটি ‘বিচারাধীন ব্যাপার’ বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আদালত এর বিচার করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী। একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন আইনমন্ত্রী।
স্টেশনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষয়টি আমি জানি। এখন কথা হচ্ছে, বিচার বিভাগ স্বাধীন। মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা আদালতের বিজ্ঞ জেলা জজ এবং অন্যান্য বিজ্ঞ বিচারকগণ কমপ্লেইন (অভিযোগ) করেছেন এবং একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন। সেখানে (ভিডিও) দেখা গেছে যে একজন বিচারকের প্রতি তাঁদের (আইনজীবী) আচরণ খুব খারাপ ছিল। এটা আমি শুনেছি।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখন কথা হচ্ছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আমি দেখেছি আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করেছে। এটা বিচারাধীন ব্যাপার। আদালত বিচার করবেন।’
বিচার বিভাগে সরকার হস্তক্ষেপ করছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘আদালতে কোনো মামলা থাকলে বা আদালতে কোনো মামলা চলাকালীন বা আদালতে মামলা হওয়াতে কখনোই কোনো মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করে না। মামলা আদালতে চলছে। আদালত স্বাধীনভাবে তাঁদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা আইনজীবী সমিতি জেলা জজ শারমিন নিগার, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের-১–এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের অপসারণসহ নাজির মুমিনুল ইসলাম চৌধুরীর শাস্তির দাবিতে তিন কার্যদিনের কর্মবিরতি পালন শুরু করেছে। কর্মবিরতি চলবে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এর আগে বিচারকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিচারিক কাজে হস্তক্ষেপ ও কর্মচারীকে মারধরসহ মুঠোফান ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন গত বুধবার কর্মবিরতি পালন করে। যা তারা গত বৃহস্পতিবার সকালে প্রত্যাহার করে নেয়। তবে গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোনো আদালতেই বিচারিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়নি। এতে বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তি পড়েন।
গত ১ ডিসেম্বর শীতকালীন ছুটির আগে আদালতের শেষ কার্যদিবসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে কয়েকজন আইনজীবী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কয়েকটি মামলা দাখিল করেন। কিন্তু দাখিলে বিলম্ব হওয়ার কারণে বিচারক মামলাগুলো গ্রহণ করেননি।
অনুরোধ করলেও মামলা গ্রহণ না করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বার ও আইনজীবীদের নিয়ে বিচারক আপত্তিজনক মন্তব্য করেছেন, এমন অভিযোগ এনে ১ জানুয়ারি থেকে আইনজীবী সমিতি এই বিচারকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এরপর ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাসে ওই গালাগালি ও অশালীন আচরণের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ।
গালাগালি ও অশালীন আচরণের ঘটনায় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর একটি চিঠি পাঠান বিচারক মোহাম্মদ ফারুক। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদকসহ তিন আইনজীবীর প্রতি আদালত অবমাননার রুল দেন হাইকোর্ট। রুলে তিন আইনজীবীর বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তিন আইনজীবীকে ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো