মো. জহুরুল ইসলাম : ডিমে তা দেওয়া শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশে আইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অথচ মেডিক্যাল শিক্ষার মতই আইন শিক্ষার পঠন-পাঠন পরিচালিত হওয়া উচিত। মেডিক্যাল পেশায় একজন শিক্ষক, একইসাথে তিনি ডাক্তারও। নিজে রোগী দেখেন, তাঁর স্টুডেন্টদেরকে রোগীর কাছে নিয়ে যান এবং হাতে-কলমে নতুন ডাক্তার তৈরি করেন। কিন্তু আইন শিক্ষায় সেরকম হাতে-কলমে শেখার সুযোগ একেবারেই সীমিত, নাই বললেই চলে।
বাংলাদেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন বিভাগসমূহে অধিকাংশে Primary knowledge (Theoretical knowledge) দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তত্ত্বীয় শিক্ষার সাথে শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে আদালতকেন্দ্রিক লেখাপড়ার কোন বিকল্প দেখছিনা। এক্ষেত্রে আইন বিভাগকে আদালতের ‘বার’ এবং ‘বেঞ্চের’ সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত করতে হবে। অ্যাডভোকেট ও জাজগণ দ্বারা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে। অর্থাৎ আদালতে নিয়মিত প্রাকটিসরত একজন অ্যাডভোকেট/জাজ শিক্ষক হিসাবে আইন শিক্ষার্থীদেরকে আদালতে ও ক্যাম্পাসে আইন শিক্ষা প্রদান করবেন।
এতে শিক্ষা হয়ে উঠবে বাস্তবমুখী, জনকল্যাণকামী এবং এই সেক্টরের শিক্ষার্থীরা স্বনির্ভর, আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে গড়ে উঠবে। সেক্ষেত্রে আইনে অনার্স/মাস্টার্সধারী একজন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ পাওয়া সাপেক্ষে সরাসরি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবে।সিনিয়র আইনজীবীর পিছনে ঘুরতে ঘুরতে শিক্ষাজীবন পরবর্তী আরও চার-পাচঁটি বছর হতাশায় কাটাতে হবেনা।
The Bangladesh Legal practitioners and Bar Council Order, 1972 এরঅনুচ্ছেদ ১০ (ঝ) অনুযায়ী বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল- আইনগত শিক্ষার উন্নয়ন এবং আইন শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নের উদ্দেশে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সহিত আলোচনা করা এবং এ সংক্রান্ত বিধি প্রণয়ন করা। অর্থাৎ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, আদালতের ‘বার’- ‘বেঞ্চ’ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বিধি প্রণয়ন করে আইন পাঠ্যক্রমকে পূর্ণগঠন করার মাধ্যমে আইন পেশাকে সম্মানজনক, ঝুঁকিমুক্ত, স্বনির্ভর ও জনকল্যাণমুখী করা এখন রাষ্ট্রের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথপরিক্রমার প্রাথমিক ধাপ এবং অন্যতম পূর্বশর্ত।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়।