প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে অধস্তন আদালতের বিচারকদের মাসিক কর্মসম্পাদন বিবরণী অনলাইনে পূরণের নির্দেশ
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট লোগো

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শব্দদূষণে বিচারকাজে বিঘ্ন : ব্যবস্থা নিতে ডিএমপিকে চিঠি

আদালত চলাকালীন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশে লাউড স্পিকারের ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এ বিষয়ে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সি মো. মশিয়ার রহমান গত ১০ জানুয়ারি এ চিঠি পাঠিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের অন্যতম বিচার বিভাগের অভিভাবক বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সুপ্রিম কোর্ট মূল ভবন, এ্যানেক্স ভবন, বিজয়-৭১ ভবন, পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা অতি গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট, অডিটোরিয়াম, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আদালত চলাকালীন সময়ে উক্ত সমাবেশ স্থল থেকে উচ্চস্বরে শব্দের কারণে আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনায় বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের সময়সূচি পর্যালোচনাকরণ ও সভা-সমাবেশ স্থলে লাউড স্পিকার ব্যবহার থেকে বিরত রাখার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

উচ্চশব্দে বিচারকাজে বিঘ্ন, আদালতের ক্ষোভ

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাজনৈতিক সমাবেশের কারণে সৃষ্ট শব্দদূষণে বিচারিক কাজে বিঘ্ন ঘটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। গত ২ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশে করে আদালত বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার অনুমতি (সমাবেশের) দিয়েছেন কি না খোঁজ নেবেন। এছাড়া তারা অনুমতি দিলেও শুক্র-শনিবার বা সরকারি ছুটির দিনে এই সমাবেশের অনুমতি দিতে পারতো।’

প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট বলেন, ‘দরজা-জানালা বন্ধ থাকার পরও হাইকোর্ট বিভাগের বিজয় ৭১ বভবনের ১০ম ফ্লোরে অবস্থিত আদালতের ভেতরে এত আওয়াজ, আইনজীবীরা কী কথা বলছেন, আমরা কী বলছি, তা ঠিকমতো না শুনলে আমরা বিচার করবো কীভাবে?’

এ সময় আদালতে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘আপনি বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী, কোর্ট চলাকালে পরিবেশ কেমন থাকা উচিত বলুন।’

তখন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন আদালতকে বলেন, ‘বিচারকাজ নিরবচ্ছিন্ন শব্দদূষণ মুক্ত পরিবেশে হওয়া প্রয়োজন।’

বিচারপতি বলেন, ‘এভাবে চললে আমরা বিচার কীভাবে করবো?’

আদালত বলেন, ‘যারা সভা-সমাবেশ করছেন, আমি বলবো তাদের কোনো দোষ নেই। তারা তো অনুমতি নিয়ে করছেন। যারা অনুমতি দিলেন তাদেরকে এ বিষয়টি ভাবা উচিত ছিল।’

আদালত আরও বলেন, ‘স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে যা ইচ্ছে তাই করা যায় না। আইনে এসব এলাকায় উচ্চশব্দের হর্ন দেওয়াও নিষেধ। অথচ এখানে কোর্ট চলার পর থেকে উচ্চশব্দ শুনছি।’

এসময় ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন আদালতকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানলাম। আপনি যা বলছেন তা সঠিক বলছেন। আমি নিজেও শুনানি করতে গিয়ে বিরক্তিবোধ করছি। এ বিষয়ে আমি উপর মহলকে অবহিত করবো, যেন বিষয়টি দ্রুত সমাধান হয়।’

জানা গেছে, সামবেশের মাইকের উচ্চশব্দে সেদিন হাইকোর্ট বিভাগের বিজয় ৭১ ভবনের ওই বেঞ্চের বিচারকাজ অনেকক্ষণ বন্ধও ছিল। সকালে কোর্ট শুরু হওয়ার একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে ডেকেছিলেন আদালত।