দেশের কারা হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগ বিষয়ে আদালতের আদেশ প্রতিপালন না করায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
এ সংক্রান্ত শুনানিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী শফিকুল ইসলাম আদালতকে জানান, কারা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের শূন্যপদ ছিল ১৪১টি। মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত ৪২ জন চিকিৎসক যোগ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত যোগ দিয়েছেন ১৩৬ জন চিকিৎসক। বাকি পাঁচজন দ্রুত সময়ের মধ্যে যোগ দেবেন।
এসময় স্বাস্থ্যের ডিজি খুরশীদ আলম আদালতে বলেন, যথাসময়ে আদেশ বাস্তবায়ন করতে না পারার জন্য আমরা দুঃখিত, ক্ষমা প্রার্থী। ভবিষ্যতে আর এরকম হবে না। ভুল যেটা করেছি সেটা অনিচ্ছাকৃত।
এরপর পরে তাকে (ডিজিকে) ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহিত দিয়ে এ বিষয়ে আরও শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ২ মে পরবর্তী দিন ঠিক করেন।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে এদিন রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন। ডিজির পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে কারাগারগুলোতে শূন্যপদে চিকিৎসক নিয়োগের নির্দেশনা নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন না করায় হাইকোর্টে উপস্থিত হন ডিজি। কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগের আদেশ বাস্তবায়ন না করার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে গত ১৭ জানুয়ারির তলবে হাইকোর্টে হাজির হন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। এরপর তার উপস্থিতিতে শুনানি হয়।
শুনানিতে আদালত বলেন, আমাদের কনসার্ন হচ্ছে, আমরা মানুষকে জেলে রাখি। সেখানে যে কেউ থাকতে পারে। আইনজীবীও থাকতে পারে। যেই হোক তার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। আপনারা সরকারের সঙ্গে যুক্ত। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় মাধ্যমে বারবার আদালতের আদেশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগে আপনাদের কোনো সুপারিশ যায়নি। আপনি তো স্বাস্থ্যখাতের শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীল। অবস্থান এবং অন্যদিক থেকে চিন্তা করলে আপনাদের ডাকতে আমাদের লজ্জা লাগে। এটা শোভনীয় না। বাধ্য হয়েই আমাদের ডাকতে হয়।
তখন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন করোনা মহামারি পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন।
আদালত বলেন, আমরা অনেক বিষয়ে বারবার নির্দেশনা দেই। কিন্তু তারা সেটা গ্রাহ্য করে না। এটা দুঃখজনক। আমরা একেবারে অপারগ হয়ে কাউকে ডাকি। যখন দেখি যে আর কাজ হচেছ না, তখন। এই মামলাটা ২০১৯ সালের। আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ ছিল। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বারবার বলা হয়েছে, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বারবার তাদের নক দিয়েছেন। কিন্তু তারা বাস্তবায়ন করেননি।
উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে আদালত বলেন, উপজেলা তো উনাদের (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) অংশ। কোন উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে, দেখান। সরকার টাকা দিতে তো কম দেয় না। সরকার কোন খাতে টাকা বরাদ্দ দেয় না? সব খাতে টাকা দেয়।
এসময় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পর্দা কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ টেনে আদালত বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাছের মেডিকেল কলেজে। আমার জাজমেন্ট আছে। তারা (ফরিদপুর মেডিকেলে) যে কেনাকাটা করেছে, চারশগুণ বেশি দাম দিয়ে কিনেছে। এটা মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট। দুর্নীতি তো একটা সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। দুর্নীতি যদি সহনীয় পর্যায়ে না আসে দেশ টিকবে না তো। মানুষ যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পায় না।
এরপর আদালত স্বাস্থ্যের ডিজির উদ্দেশে বলেন, আমাদের কথা হচ্ছে, মানুষকে স্বাস্থ্যসেবাটা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এখন বিদেশিরা দেশ চালায় না। আমরা দেশ চালাচ্ছি। মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন কিন্তু ডাক্তারের কাছে যায়। ব্যক্তিগত জীবনে আপনিও ডাক্তার। এটা একটা মহান পেশা। কোনো ডাক্তারের ব্যক্তিগত জীবন আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, তারা যে পরিমাণ সার্ভিস দেয়! সকাল থেকে চাকরি করার পর রাতে আবার চেম্বার করে।
এ পর্যায়ে আদালত কারাগারগুলোতে শূন্যপদে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ ছিল ১৪১টি। মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত ৪২ জন এবং সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত যোগ দিয়েছেন ১৩৬ জন চিকিৎসক।
২০১৯ সালে এ রিটটি করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন। তখন আদালত কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নিয়ে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসক নিয়োগসহ কারাগারের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।