দেশের সকল হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁয় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ও উপকূলীয় অঞ্চলে পলিথিন-প্লাস্টিকের ব্যাগ বহন, বিক্রি, ব্যবহার, বিপণন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তিন বছর আগে দেওয়া সেই নির্দেশ প্রতিপালনে ব্যর্থতায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না এ নোটিশ প্রেরণ করেছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্রস্তুত ও আমদানি সমিতির চেয়ারম্যানকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, দেশের সকল হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁয় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ও উপকূলীয় অঞ্চলে পলিথিন/প্লাস্টিকের ব্যাগ বহন, বিক্রি, ব্যবহার, বিপণন বন্ধে আদালত কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ বাস্তবায়ন না করার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আদালত অবমাননার নোটিশ প্রেরণ করা হলো।
প্রেরিত এ নোটিশের মাধ্যমে বেলা প্লাস্টিক দূষণ রোধে আদালতের আদেশ যথাযথভাবে প্রতিপালন করে দেশের সকল হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁয় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ও উপকূলীয় অঞ্চলে পলিথিন/প্লাস্টিকের ব্যাগ বহন, বিক্রি, ব্যবহার, বিপণন বন্ধ করতে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানায়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ১০টি সমমনা বেসরকারি সংস্থা দেশে ক্ষতিকর প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যাগের উপর বিদ্যমান আইনি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধের দাবিতে হাইকোর্ট বিভাগে একটি জনস্বার্থমূলক মামলা (নং ১৪৯৪১/২০১৯) দায়ের করে।
মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যাগের উপর বিদ্যমান আইনি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ধারা ৬ ক বিধান অনুযায়ী একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও আইনি কার্যকারিতাবিহীন ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
জারিকৃত রুলে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে এবং এসবের নিরাপদ বিকল্প চালু করার জন্য কেন একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চেয়েছিলেন আদালত।
একইসঙ্গে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আদালত দেশব্যাপী নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ, কারখানা বন্ধ এবং যন্ত্রপাতি জব্দকরণের মাধ্যমে পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যাগের উপর বিদ্যমান আইনি নিষেধাজ্ঞার পূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বিবাদীদের নির্দেশ প্রদান করেন।
সেই সঙ্গে এক বছরের মধ্যে দেশের সকল হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁয় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ ও সকল উপকূলীয় অঞ্চলে পলিথিন/প্লাস্টিকের ব্যাগ বহন, বিক্রয়, ব্যবহার, বিপণন নিষিদ্ধ করতে বিবাদীদের হাইকোর্ট নির্দেশ প্রদান করেন।
আদালতের বেঁধে দেওয়া সময় অতিক্রান্ত হলেও অদ্যাবধি নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। বন্ধ হয়নি উপকূলীয় অঞ্চলে পলিথিন/প্লাস্টিকের ব্যাগ বহন, বিক্রয়, বিপণন ও ব্যবহার। তাই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ পাঠায় বেলা।