দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন সাবেক বিচারক সাহাবুদ্দিন চুপ্পু
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন

মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত

রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচনী কর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ ঘোষণা দেন।

আজ সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফরম বাছাই শেষে সিইসি এ ঘোষণা দেন। মো. সাহাবুদ্দিন দেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে একজনই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। মাত্র একজনের মনোনয়নপত্র বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী, মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।

দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি থাকবেন মো. সাহাবুদ্দিন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আগামী ২৩ এপ্রিল অবসরে যাবেন। পরদিন ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করতে পারেন মো. সাহাবুদ্দিন।

রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ থেকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শুরু করেছিলেন মো. আবদুল হামিদ। একই বছরের ২২ এপ্রিল তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এরপর ওই বছরের ২৪ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন।

সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটার। বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থী না থাকায় সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এর ফলে সংসদে ভোটের প্রয়োজন হয়নি।

নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শরফুদ্দিন আনছারী এবং মাতার নাম খায়রুন্নেসা।

পড়াশোনা

তিনি পাবনা শহরের পূর্বতন গান্ধি বালক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করে রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করার পর পাবনার ঐতিহ্যবাহী সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২সালে) বিএসসি পাস করেন।

পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহিদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি ও কর্মজীবন

তিনি ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৭০ সালে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭২ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন সাহাবুদ্দিন।

মো. সাহাবুদ্দিন মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হয়ে সাহাবুদ্দিন আইন পেশায় যোগ দেন এবং ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন মো. সাহাবুদ্দিন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন তিনি।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে সেসব ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন করে, যার প্রধান ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন।

২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুই বার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন সাহাবুদ্দিন। পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে সাংবাদিকতাও করেছেন সাহাবুদ্দিন। তিনি পাবনা প্রেসক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য।