আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও টেকসই অর্থনীতির দেশ গঠনের মৌলিক ভিত্তি হলো শান্তি, স্থিতিশীলতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন, যেগুলোর প্রতিটির সঙ্গে ‘ন্যায়বিচার’ শব্দটি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ন্যায়বিচার পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার।
ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সদ্য পদায়নকৃত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য আয়োজিত ১৫১তম রিফ্রেসার কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রবিবার (১৮ জুন) প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ন্যায়বিচারের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর মতে ন্যায়বিচার চারটি নাগরিক গুণাবলির একটি; অন্যগুলো হলো প্রজ্ঞা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সাহস। প্রত্যেক বিচারকের এসব গুণাবলি থাকা দরকার। কারণ তাদের কলম দিয়ে নিত্যদিন ন্যায়বিচারের হাজারও বাণী ঝড়ে।
দক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, এর আগে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারকদের প্রথম পদায়ন করার পর ম্যাজিস্ট্রেসি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষ কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। এবারই প্রথম বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট সদ্য পদায়নকৃত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্টোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য এ ধরণের প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করেছে, যা চলমান থাকবে। ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বাড়ানোর ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।
এসময় আইনমন্ত্রী এই প্রশিক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং কোর্সটি আয়োজন করার জন্য ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালককে ধন্যবাদ জানান।
২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৭২৫ জন বিচারককে ভারতের ভূপালে অবস্থিত ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমিতে সশরীরে প্রশিক্ষণ প্রদান করার তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশেও একটি আন্তর্জাতিক মানের জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ একাডেমিতে বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, ডাক্তারসহ বিচারসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট নানাবিধ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একাডেমি স্থাপনের জন্য প্রকল্প এলাকায় ৩৭ দশমিক ৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। চিহ্নিত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আইন ও বিচার বিভাগের বাজেটে ১৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি বিচারক নিয়োগে জোর দেওয়ার বিষয়ে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অধস্তন আদালতে মোট ১৩২৯ জন সহকারী জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৫তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে ১০৩ জন এবং ১৬তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে ১০০ জন বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) শেখ আশফাকুর রহমান বক্তৃতা করেন।