গরুর মাংস সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে জীবন্ত গরু ও মাংস আমদানির দাবীতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। রিটে মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি) এর চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২০ জুন) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান। রিট মামলাটি শিগগিরই হাইকোর্টে শুনানি হবে।
রিটে বলা হয়েছে, গরুর মাংস বাংলাদেশর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অন্যতম প্রধান খাদ্য। কিন্তু বাজারে গরুর মাংসের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরুর মাংস ইতিমধ্যে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
আরও পড়ুন : গরুর মাংসের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে আইনি নোটিশ
গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ ব্যাখা করতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ নেব্রাস্কা এর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিভাগ দ্বারা প্রকাশিত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে, গরুর মাংসে ৫০ টিরও বেশি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আছে যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্য কোন খাদ্য এরূপ পুষ্টি সরবরাহ করে না। গরুর মাংস প্রোটিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি-১২, ফসফরাস এবং জিঙ্কের উচ্চ উৎস। গরুর মাংস নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন, আয়রন এবং ভিটামিন বি-৬ এর ভালো উৎস। জিংক শারীরিক বৃদ্ধি এবং বিকাশ, ইমিউন সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণ, ক্ষত নিরাময়, এবং স্বাদ তীক্ষ্ণতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
জ্ঞানীয় বিকাশ, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মক্ষমতা, একটি সুস্থ গর্ভাবস্থা এবং ইমিউন প্রতিরক্ষার জন্য আয়রন গুরুত্বপূর্ণ। মাংসে যে আয়রন পাওয়া যায় তা হেম আয়রন আকারে থাকে যা উদ্ভিদের খাবারে পাওয়া ননহেম আয়রনের চেয়ে ভালোভাবে শোষিত হয়। প্রাণীর প্রোটিনে নয়টি অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিডের সবকটিই রয়েছে যা পেশী, অঙ্গ এবং হাড়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিন আউন্স মাংস দৈনিক প্রোটিনের ৫১% প্রদান করে। ভিটামিন-বি শরীরকে শক্তি ব্যবহার করতে সাহায্য করে এবং বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অনেক রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
সেলেনিয়াম একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে এবং হৃদরোগের থেকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া ফসফরাস হাড় ও দাঁত গঠন এবং কোষের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির একটি উচ্চ বা ভাল উৎস হিসাবে গরুর মাংস খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
রিটে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অন্যতম প্রধান খাদ্য হলো গরুর মাংস। গরুর মাংসের যোগান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যার্থতার মাধ্যমে সরকার জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষায় ব্যার্থ হয়েছে যা বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫ এর লংঘন।
অপরদিকে গরুর মাংসের যোগান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যার্থতার মাধ্যমে সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পুষ্টি চাহিদা পুরণে ব্যার্থ হয়েছে যার দরুন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যথাযথ পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যা আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকার ৩১/৩২ এর সরাসরি লংঘন।
রিটে বলা হয়েছে, আমদানি নীতি ২০২১-২৪, অনুযায়ী গরুর মাংস একটি আমদানি যোগ্য পণ্য। অপরদিকে দিকে “দি ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ অর্ডার” ১৯৭২ এর ধারা ১২ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির মাধ্যমে বাজারে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে বাজার মূল্য সহনীয় রাখা টিসিবির আইনি কর্তব্য।
কিন্তু টিসিবি বিদেশ থেকে জীবন্ত গরু এবং গরুর মাংস আমদানি না করে তার আইনি কর্তব্য পালনে ব্যার্থ হয়েছে। অপরদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত এসব মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ব্যার্থতার জন্য বাজারে গরুর মাংস নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এর ফলে বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫ ও মৌলিক অধিকার ৩১/৩২ লংঘন হচ্ছে।
বর্তমানে গরুর মাংসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগণও গরুর মাংস কিনতে পারছে না। এমতাবস্থায় গরুর মাংস কে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে অবিলম্বে জীবন্ত গরু ও মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে।