মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : এক যুবককে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুই ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। একইসাথে প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরো ২ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো: মোশারফ হোসেন রোববার (৬ আগস্ট) এ রায় ঘোষণা করেন।
একই মামলায় অপর ২ জন আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে।
যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত আসামীরা হলেন : কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী গ্রামের আবুল কাসেমের পুত্র জাহাঙ্গীর আলম ও শামসুল আলম। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামী জাহাঙ্গীর আলম আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং অপর দন্ডিত আসামী শামসুল আলম পলাতক রয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট শওকত বেলাল মামলাটি পরিচালনা করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী প্রণব কান্তি শর্মা ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
১৯৯৯ সালের ২৬ এপ্রিল কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী গ্রামে কাবাডি খেলাকে কেন্দ্র করে এক সংঘর্ষে সুলতান আহমদ এর পুত্র শামসুল আলম শামসু নিহত হন।
এ ঘটনায় নিহত যুবক শামসুল আলম শামসু’র পিতা সুলতান আহমদ বাদী হয়ে ১৮৬০ সালের ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ এনে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ২০/১৯৯৯ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৬৪/১৯৯৯ ইংরেজি (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর : ৫৪/২০০৫ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
মামলাটি তদন্ত করে ৪ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ এনে ১৯৯৯ সালের ৫ আগস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে চার্জশীট প্রদান করেন। চার্জশীটে অভিযুক্তরা হলো : কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী গ্রামের আবুল কাসেমের ৩ পুত্র যথাক্রমে জাহাঙ্গীর আলম, শামসুল আলম, কামাল উদ্দিন এবং আবুল কাসেমের মেয়ের জামাতা সোনা মিয়া।
মামলাটি ২০০৫ সালের ১১ মে আদালতে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। মামলায় ৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, সাক্ষীদের আসামী পক্ষে জেরা, সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট যাচাই, আলামত পর্যালোচনা, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক মো: মোশারফ হোসেন মামলাটি রায়ের জন্য রোববার দিন ধার্য করেন।
রায় ঘোষণার দিনে আসামী ২ ভাই জাহাঙ্গীর আলম ও শামসুল আলম এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে ১৮৬০ সালের ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়।
একইসাথে প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো ২ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
মামলার অপর আসামী কামাল উদ্দিন এবং সোনা মিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আদালতে প্রমাণ করতে না পারায় বিচারক মো: মোশারফ হোসেন তাদের বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
ঘটনার দীর্ঘ ২৪ বছর পর বিচারিক কার্যক্রম শেষে রোববার মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়।