পরকীয়া প্রতিরোধে কঠোর আইন ও প্রয়োগ প্রয়োজন
জিসান তাসফিক

পরকীয়া প্রতিরোধে কঠোর আইন ও প্রয়োগ প্রয়োজন

জিসান তাসফিক: বর্তমান সমাজের আধুনিকতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অথবা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে থাকে। তার মধ্যে একটি বিষয় হল পরকীয়া। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে পরকীয়ার সংক্রান্ত অনেক কিছু হচ্ছে।

যেমন: হত্যাকাণ্ড, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, আবার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালতের রায় ও হয়েছে। পরকীয়া সম্পর্কিত এমন ঘটনা নতুন নয় এবং অনেক ঘটনাই ঘটে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিছু ক্ষেত্রে হয় কেবলই বিবাহ-বিচ্ছেদ আবার কখনও কখনও হত্যাকাণ্ডের মত অপরাধ হয়ে যায়।

মানব সমাজব্যবস্থায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হল পরিবার। সেই প্রাচীনকাল থেকে পরিবার প্রথা চলে আসছে।
সাধারণত পরিবার বলতে বোঝানো হয় যে সমাজ, আইন অথবা ধর্ম কতৃক স্বীকৃত উপায়ে কোনো নারী ও পুরুষ পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে যা গঠন করে এবং পরবর্তীতে এই সম্পর্কে যুক্ত অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়েই পরিবার।
পরিবার গঠনের অন্যতম মূল উপাদান হল নারী ও পুরুষ এবং এদের মধ্যে পারস্পরিক দাম্পত্য অধিকার ও কর্তব্য যা পরস্পর পরস্পরের জন্য পালনে বাধ্য। এই সম্পর্কের মাঝে যখন পরকীয়া হানা দেয় তখন সম্পর্কে ফাটল ধরে।

পরকীয়ার নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে সমাজে প্রচলিত ঘটনা থেকে জানা যায় যে কোনো বিবাহিত নারী বা পুরুষ অন্য কোনো পুরুষ বা নারী সাথে বিবাহ বহির্ভূত প্রেমে সম্পর্কে অথবা শারীরিক সম্পর্ক করে থাকে।

বাংলাদেশে দন্ডবিধি আইন ১৮৬০ এর ৪৯৭ ধারা পরকীয়ার একটি অংশকে মাত্র অপরাধ স্বীকৃতি দেওয়া আছে যার নাম ব্যভিচার (adultry)। সেটি হল কোনো বিবাহিত নারীর সাথে তার স্বামী নয় এমন কোনো পুরুষ যদি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তবে সেটি অপরাধ হবে।

এইক্ষেত্রে যে পুরুষ সম্পর্ক স্থাপন করে সে অপরাধী কিন্তু বিবাহিত নারীকে অপরাধী এবং অপরাধের সহযোগী করা হয় নাই। যা সাংবিধানিক আইনের সমতা বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অন্য দিকে কোনো বিবাহিত পুরুষ যদি অন্য কোনো নারীর সাথে বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপণ করে তবে এটিকে অন্যায় কিংবা অপরাধ করা হয় নাই। যার ফলে বিবাহিত পুরুষেরা এখানে সেচ্ছাচার হতে পারে।

আইনে একদলকে একই অপরাধে অপরাধী করা এবং অন্যকে অপরাধীকে না করে অসামঞ্জস্য রাখা হয়েছে। অথচ উভয়ের কর্মেই একটি পরিবার ধংস হয়ে যেতে পারে এবং আরও ভয়াবহ হয়ে পারে। বিভিন্ন পরিসংখানে তালাকের কারণ দেখতে তার মধ্যে অন্যতম কারণ হয় স্বামী অথবা স্ত্রীর পরকীয়া।

পরকীয়ার ফলে আরেকটি প্রভাব পরে ঐ পরিবারের সন্তানের উপর। একটি শিশু জন্মের পর থেকে সমাজে উপযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। অথচ অনৈতিক সম্পর্কের ফলে এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত ধংস হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের দাম্পত্য অধিকার নষ্ট হচ্ছে। তাও উপযুক্ত প্রতিকার বিহীনভাবে। এই সম্পর্ক এতটাই বিষাক্ত হয় যে পুনরায় স্থাপন করা অসম্ভব হয়ে যায়।

এখানে আরেকটি ঘটনা ঘটে তা হল পরকীয়া মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘৃণ্য ক্ষতির সৃষ্টি হয়। যেমন স্বামী দীর্ঘদিন উপার্জন করা অর্থ অনেক সময় হরণ করা হয় কিন্তু এগুলো উদ্ধার করা যায় না। আবার স্ত্রীর যে দাম্পত্য অধিকার স্বামীর পরকীয়া ফলে নষ্ট হচ্ছে তার প্রতিকার নাই এমনকি এর ফলে তালাক হলে স্ত্রীর ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত হয়ে পারে কারণ এখানে অধিকাংশ স্ত্রীর উপার্জন ব্যবস্থার অভাব এবং স্বামীর উপর নির্ভরশীলতা।

আবার যদি উক্ত বৈবাহিক জীবনে কোনো সন্তান থাকে তবে তার লালন-পালন এবং পরিপূর্ণ দেখা শোনা সহ পিতামাতার পরিপূর্ণ স্নেহের অভাবে সে স্বাভাবিক জীবন থেকে বঞ্চিত হয়। স্বাভাবিক ভাবে বড় হওয়া এবং আনন্দময় জীবন থেকে বঞ্চিত হয়। খুবই অবাক করার বিষয় হল যে সমাজের মানুষজন এগুলো সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরেও অনেকেই তাদের হিতাহিত জ্ঞানের অভাবে এমন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে।

এখানেই প্রয়োজন রাষ্ট্রের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া এবং এর জন্য আইনকে কঠোর হতে কঠোরভাবে প্রয়োগ করে এই অপকর্ম প্রতিহত করা। পরকীয়া সংক্রান্ত সকল বিষয়কে অপরাধ ঘোষণা করে এর জন্য শাস্তি ব্যবস্থার করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করে বিধান করা প্রয়োজন। অন্যথায় ভবিষ্যতে এর ভয়াবহ অবস্থায় রাষ্ট্রকে সম্মুখীন হতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।