সিরাজ প্রামাণিক: বেশ কিছুদিন ধরে লিখছি না। অনেকে মোবাইল, ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখার তাগিদ দিচ্ছেন। এরই মধ্যে মহামান্য হাইকোর্ট আদালত অবমাননার মামলায় কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত) মো. সোহেল রানাকে এক মাসের জেল ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করায় হুলুস্থুল কান্ড ঘটে গেছে।
যদিও জেল-জরিমানার দণ্ডের তিন ঘণ্টা পর তাকে এক মাসের জামিন দেয়া হয়। পাশাপাশি একই দিন চেম্বার আদালত তাঁর দণ্ডের রায় স্থগিত করেছেন।
এদিকে বিচারক মো. সোহেল রানাকে সাজা দেয়ায় মর্মাহত হয়েছেন অধস্তন আদালতের বিচারকরা। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে এক বৈঠকে এই মর্মাহতের বিষয়টি জানান অধস্তন আদালতের বিচারকদের সংগঠন জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
জানা গেছে, একটি ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ৫৬১ (এ) ধারার ওই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন আদালত। পরবর্তী সময়ে এ আদেশের কপি কুমিল্লার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানার কাছে যায়। তিনি হাইকোর্টের ওই আদেশ অমান্য করে বিচার কাজ চালিয়ে যান। এ কারণে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়।
এই আদেশ অমান্যের কারণে তাকে সাজা দেয়া হয়। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করলে বাইন্ডিং এফেক্ট অফ দ্য ডিসিশন এন্ড অর্ডারস অফ দা সুপ্রিম কোর্ট এর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টি ভায়োলেট হয়।
৬৩ DLR (AD) (২০১১) ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত রাষ্ট্র বনাম মুক্তা খাতুন এবং অন্যান্য মামলায় বলেছেন-
Any decision passed by the Appellate Division is binding upon all courts in Bangladesh and no judge can ignore it. If he does, it may not only be contemptuous but also tantamount to violation of the constitution.
পাঠক! নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে পুলিশ প্রধান শাহাদুল হকের চাকুরিচ্যুতির গল্পের কথা। সেই ২০০৩ সালের ১৯ জুন। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এর মাননীয় বিচারপতি জনাব শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সরকারী গাড়িযোগে বনানী কামাল আর্তাতুক এলাকা অতিক্রম করছিলেন।
সে সময় পুলিশ সার্জেন্ট বিচারপতি মহোদয়ের গাড়ি থামিয়ে পুলিশের নীল রঙের একটা জীপগাড়ি আগে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন৷ একই সাথে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে স্যালুট প্রদান করেন। বিষয়টি লক্ষ্য করে বিচারপতি মহোদয় গাড়ি থেকে নেমে সার্জেন্ট এর কাছে জিজ্ঞেস করেন, সুপ্রিম কোর্টের লোগো সম্বলিত গাড়ি ও কালো পতাকা দেখে সালাম না করার কারন কি?
সার্জেন্ট বলে যে, আমরা সুপ্রিমকোর্ট এর পতাকা স্যালুট করতে বাধ্য নই। আমাদের অত ঠ্যাকা পড়ে নাই! বিষয়টি নিয়ে সার্জেন্ট সোয়েবুর রহমান বিচারপতি মহোদয়ের সাথে তর্কে জড়ান।
পরবর্তীতে আশেপাশে থাকা আরো কয়েকজন পুলিশ সার্জেন্টকে ডাকেন সোয়েবুর রহমান। ৫ জন পুলিশ অফিসার জুডিসিয়ারী নিয়ে নানাভাবে কটূক্তি করেন। মাননীয় বিচারপতি জনাব শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ৩০ জুন ২০০৩ ওই পাঁচ জন পুলিশ অফিসারকে স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন।
একইসাথে আইজিপি এবং পুলিশ ট্রেনিং কলেজের প্রিন্সিপালকে ১২ জুলাই ২০০৩ তারিখের মধ্যে চারটি প্রশ্নের উত্তর দিতে নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনা দেওয়ার কিছুদিন পরে অস্থায়ী বিচারপতি জনাব শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এর চাকুরী স্থায়ী না হওয়ায় তিনি আর বিচারপতি হিসেবে চাকুরীতে ছিলেন না।
তবে পুলিশ প্রধান চারটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে, ডিউটিরত অবস্থায় পুলিশ সার্জেন্ট বিচারপতিকে সালাম দিতে বাধ্য ছিলেন না। যে বিচারপতি ওই আদেশ দিয়েছিলেন সে এখন আর চাকুরীতে নেই। ওই বিচারপতিকেই বরং দেশের প্রচলিত আইনে সরকারি কাজে বাঁধা দেওয়ার ও পুলিশ অফিসারকে হুমকি দেওয়ার জন্য বিচার করা উচিত।
একইসাথে আইজি বিচার বিভাগ ও সুপ্রিমকোর্ট নিয়ে বিভিন্ন আকার ইঙ্গিতে কটূক্তি করেন। জবাবের কপি আমলে নিয়ে বিচারপতি জনাব মোঃ আব্দুল মতিন এবং বিচারপতি জনাব সৈয়দ রিফাত আহম্মেদ স্বপ্রণোদিতভাবে আইজিপির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করেন।
একইসাথে আইজিপিকে স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন। আইজিপি স্বশরীরে উপস্থিত হয়েছিলেন। হাইকোর্ট ডিভিশন আইজিপি শাহাদুল হক সহ চার জন পুলিশ অফিসার এর জবাবে সন্তুষ্টি না হওয়ায় তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা প্রদান করেন।
হাইকোর্ট ডিভিশন এর আদেশের পরে দেশের বিশিষ্ট আইনজ্ঞরা অভিমত দেন যে, দি পাবলিক সার্ভেন্ট অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৫ অনুযায়ী পুলিশ প্রধান শাহাদুল হকের চাকুরীতে থাকার সুযোগ নেই। রায় প্রদানের সময় আইজিপি ফ্রান্সে ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে ছিলেন একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে।
সে যখন দেশে আসেন সে সময় তাকে বিমানবন্দরে পুলিশ প্রধান হিসাবে প্রোটোকল দেওয়া হয়নি। তাকে সাময়িক পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ডিএমপির কমিশনারকে চার্জে রাখা হয়। পরবর্তীতে সাসপেন্ড করা হয়। হাইকোর্ট ডিভিশন এই রায়ে জুডিসিয়ারির মর্যাদা ও অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অবজারভেশন প্রদান করেন।
মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন সুস্পষ্ট বলেন যে, সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পুলিশসহ নির্বাহী বিভাগ আদালতকে সহায়তা করতে বাধ্য। তাছাড়া আদালত বলতে কেবল গম্বুজাকৃতির বিল্ডিংকেই বুঝাবে না, বরং ফৌজদারি কার্যবিধি এর ২৫ ধারা অনুয়ায়ী সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতির এখতিয়ার সমগ্র বাংলাদেশ। সমগ্র বাংলাদেশেই এখতিয়ার প্রয়োগের ক্ষমতা রয়েছে।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় পুলিশ প্রধান সহ বিবাদীপক্ষ। আপিল বিভাগ হাইকোর্ট এর রায়ে হস্তক্ষেপে কোন যুক্তি না থাকায় আপিল খারিজ করে দেন।
ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ২৫ ধারায় বিধান অনুযায়ী, পদাধিকারবলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ সারা বাংলাদেশের জন্য, দায়রা বিচার, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে জাস্টিস অব পিস হিসেবে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
২০০৭ সালে মহামান্য হাইকোর্ট একটি মামলায় রায় প্রদানকালে লিখেছেন-
প্রতিটি চিকিৎসক মানুষের অপারেশন করার সময় তাঁর সম্পূর্ণ মনোযোগ শুধু অপারেশনে নিয়োজিত করে থাকেন। কেননা তিনি জানেন তাঁর মনোযোগের সামান্যতম বিঘ্ন ঘটলে রোগীর প্রাণহানি ঘটতে পারে। ঠিক তেমনি বিজ্ঞ বিচারকরা যদি বিচার বিভাগ স্বাধীনতার নামে উদাসীন হয়ে পড়েন, তাহলে বিচারকার্য অবিচারে পর্যবসিত হতে পারে। ফলাফল হিসেবে বিচারক সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সুদূর প্রসারিভাবে রাষ্ট্রের আপামর জনসাধারণ অপরিসীম ক্ষতির স্বীকার হতে পারেন।
অসদাচরণের জন্য বিচারকদের জবাবদিহির মুখোমুখি করতে বিশ্বে স্বাধীন জুডিসিয়াল কাউন্সিল রয়েছে। নাগরিক হিসেবে বিচারকেরও আপিল ও রিভিউ করার অধিকার আছে।
বিচার বিভাগ সংবিধান ও আইন দিয়ে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। সংবিধানের বিধান অনুসারে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বিষয় তদারক করেন হাইকোর্ট। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক্করণ-সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার রায়েও এটি আছে। অথচ তদারকির ক্ষেত্রে বড় কিছু বাঁধা আছে। সংবিধান বলেছে, একজন বিচারকের ‘গুরুতর অসদাচরণ’ পাওয়া গেলে তাঁকে অপসারণ করা যাবে।
জুডিসিয়াল সার্ভিস-শৃঙ্খলা বিধিমালা ২০১৭ এর বিধি ১৭ একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, শারীরিক এবং মানসিক অদক্ষতা ব্যতিত অন্য কোন অদক্ষতা প্রমাণিত হলে, অসাদাচরণ প্রমাণিত হলে, দুর্নীতিমূলক কার্যে লিপ্ত হওয়া বা জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর এমন কোন কাজ করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে, সার্ভিস ত্যাগ করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে, শারীরিক এবং মানসিক অদক্ষতার অভিযোগ প্রমাণিত হলে, ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট বিচারককে বিভিন্নভাবে দন্ড আরোপ করা যায়।
উচ্চ আদালতের অবমাননার অভিযোগে অধস্তন আদালতের বিচারককে প্রাথমিকভাবে শাস্তি দেয়া সম্ভবত স্বাধীন বাংলাদেশে এটিই প্রথম। মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হয়েছে এবং কোন মামলার আপিল মূল মামলার মতই একটা চলমান প্রক্রিয়া।
একটি ছোট্ট কেস স্টাডি। ১৯৪৮-৪৯ সালের ঘটনা। আপনারা নিশ্চয়ই তৎকালীন বিশিষ্ট রাজনীতিক মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ এর নাম শুনে থাকবেন। একজন আদর্শ রাজনীতিক হিসেবে এ উপমহাদেশে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।
একদা স্থানীয় এমএলএ মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ তার এলাকা পাবনায় গেলে সরকারী প্রকৌশলীর বাসভবনে স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে বসেন। ধর্মপ্রাণ মাওলানা সাহেব মাগরিবের নামাজ শেষে সবার সাথে চা পানের ফাঁকে ওই বৈঠকে হাজির সাব ডিভিশনাল মুন্সেফ (বর্তমানে সহকারী জজ) কে একটা চলমান দেওয়ানী মামলা খারিজ করে দেয়ার জন্য বলেন।
স্থানীয় এমএলএর এহেন কাজ বিচারকাজে মারাত্মক হস্তক্ষেপ উল্লেখে মুন্সেফ সাহেব মাননীয় জেলা জজের মাধ্যমে ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করলেন। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ সাহেবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করল।
অভিযুক্ত তার আইনজীবী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ আদালতে এসে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজেকে আদালতের দয়ার উপর ছেড়ে দেন। শেরে এ বাংলা উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ এর মহান অবদান আর ধর্মনিষ্ঠ রাজনীতিকের আইনের প্রতি অবিচল শ্রদ্ধার কথা জানিয়ে অভিযুক্তকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য নিবেদন করেন।
বিচারপতি ইলিস রীতিরকম মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ এর এরকম দুঃখ প্রকাশকে গ্রহণ না করে যাতে ভবিষ্যতে কেউ আদালতের কাজে হস্তক্ষেপ না করে সে বিবেচনায় মাওলানাকে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচশ রুপি জরিমানা অনাদায়ে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। (১ ডিএলআর ১৭৮ পৃষ্ঠা)।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে বিচার বিভাগ নিয়ে আমি এত কথা লিখতে পারি কি-না। আদালতের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হলে তাঁকে তা মেনে নিতে হবে। (৪৪ ডিএলআর, এডি, ১৯৯২, ৩০]। কিন্তু সমালোচনাটি শোভন ভাষায় নিরপেক্ষ, অনুভূতিপূর্ণ, সঠিক ও যথাযথ হতে হবে।
কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, আমাদের পুরো আইনব্যবস্থায় রয়েছে বৃটিশদের শঠতার ছোঁয়া। কারণ বৃটিশ তাদের দুষ্কর্ম ঢাকতে আইন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। তৎকালীন ভারতবর্ষের গভর্ণর জেনারেল ১৭৭২ সালে আইন ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করে তিনিই সর্বপ্রথম আইন ভঙ্গ করেন। তার অধস্থন কর্মচারী জার্মান চিত্রশিল্পীর পরমা সুন্দরী স্ত্রীকে দাঁড়িপাল্লায় বসিয়ে স্বর্ণের দামে খরিদ করেছিলেন।
আজকের আদালতে ব্যবহৃত ন্যায় বিচারের প্রতীক দাঁড়িপাল্লাকে তিনিই প্রথম অনৈতিক কাজে ব্যবহার করেন। মূলত বৃটিশ আইন তৈরী করেছিল শাসন, শোষনের জন্য, দরিদ্র কৃষকের জমির খাজনা আদায়ের জন্য কিংবা প্রজাকে কাচারীতে ধরে নিয়ে মারধর, হাত-পা বেঁধে আঁধার কুঠুরিতে ফেলে রাখা, প্রজার স্ত্রী-কন্যাকে বন্ধক হিসেবে আটক রাখা, বিষয় সম্পত্তি ক্রোক করা এবং ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা। বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা এখনও তার উত্তরাধিকার বহন করছে মাত্র।
বিচারকদের জন্য ৪০ টি অনুসৃত নীতি রয়েছে। যেমন-
১। ‘একজন বিচারকের আচরণ এমন উচ্চ মানের হতে হবে, যাতে বিচার বিভাগের সততা ও স্বাধীনতা সমুন্নত থাকে।
২। ‘একজন বিচারক আইন ও সংবিধানকে সম্মান করবেন ও মেনে চলবেন এবং এমনভাবে কাজ করবেন যাতে বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনগণের আস্থার উন্নতি ঘটে।’
৩। ‘বিচারিক কাজে বা রায়ে প্রভাব ফেলতে পারে, এমন কোনো পারিবারিক, সামাজিক বা অন্য সম্পর্ক রাখা একজন বিচারকের উচিত নয়। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য একজন বিচারক যেমন তার পদ ব্যবহার করতে পারে না, তেমনি অন্য কোনো ব্যক্তি তার বিশেষ অবস্থান দিয়ে একজন বিচারককে প্রভাবিত করবে সেটাও ওই বিচারক করতে দিতে পারেন না।’
৪। ‘আদালতে বিচারাধীন মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে বিচারক জনসম্মুখে মন্তব্য করতে পারবেন না।’
৫।‘একজন বিচারপতিকে দলীয় স্বার্থ ও জনবিক্ষোভ বা সমালোচনার ভয়ের উর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে।’
৬। ‘একজন বিচারক এমন কোনো পাবলিক ডিবেট বা রাজনৈতিক বিষয়ে জড়িত হবেন না বা মতামত দিবেন না, যে বিষয়গুলো পরে বিচারিক সিদ্ধান্তের জন্য তার সামনে আসতে পারে।’
৭। ‘বিচারক গণমাধ্যমে কোনো সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন না। তিনি তার বক্তব্য রায়ের মাধ্যমে দেবেন।’
অথচ বিচারকরা জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন নামে সংগঠন তৈরী করে রীতিরকম গণমাধ্যমে বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। এদের দেখাদেখি অধস্তন আদালতের পিয়ন, পেশকার, আর্দালিরাও গড়ে তুলেছে বিচারবিভাগীয় কর্মচারী এ্যাসোসিয়েশন। অনেকে আবার কোর্ট প্রাঙ্গনে বিচারকদের কাছ থেকে জমি বরাদ্দ নিয়ে আলীশান অফিস গড়ে রাজনীতি করে চলেছেন।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা, আইনের শিক্ষক ও আইন গবেষক। ই-মেইল: seraj.pramanik@gmail.com