ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মিয়া আরেফি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেগুলো অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান সারওয়ার্দী তাকে শিখিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এ কথা বলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, মিয়া আরেফিকে এনে বিএনপির কার্যালয়ে ঢুকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হাসান সারওয়ার্দী উনাকে শিখিয়ে দিয়ে যা করেছেন— তিনি দেশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে, আনসারের বিরুদ্ধে, র্যাবের বিরুদ্ধে, সকলের মনোবল ভেঙ্গে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছেন। এর কারণে যে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং উনার বক্তব্যে যে একটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ হয়েছে— সে প্রেক্ষিতে পল্টন থানায় মামলা রুজু হয়েছে। ওই মামলায় আমরা তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছি। আমরা মনে করি, ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজন হলে আমরা তাকে রিমান্ডে আনবো, এনে কী ষড়যন্ত্র করেছেন সেটা জানবো।
ডিবিপ্রধান বলেন, ২৮ তারিখ বিএনপি একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার জন্য অনুমতি নিয়েছিল। আমরা লক্ষ্য করেছি দুপুর ১২টার পর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের পুলিশের ওপর ককটেল চার্জ করে। পুলিশ সদস্যদের মারধর শুরু করে এবং প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করে। এমন কী রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতালে যেখানে পুলিশ সদস্যরা চিকিৎসা নেয় সেখানকার গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। সবচেয়ে হৃদয়বিদারক কাহিনী যেটা আমাদের একজন পুলিশ সদস্যকে তারা নির্বিচারে পিটিয়ে হত্যা করে। প্রায় ১০০-এর মতো পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছে।
পরবর্তীতে তারা সমাবেশ শেষ করে চলে যায়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম— সন্ধ্যার পরই ১০ থেকে ১৫ জন সাংবাদিকের সামনে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি বক্তব্য প্রদান করছেন। তার পাশে এই মামলার দুই নম্বর আসামি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হাসান সারওয়ার্দী। সেখানে উনিও বসে ছিলেন, মাথা দোলাচ্ছিলেন। আর জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়দানকারী বলছিলেন যে র্যাবের উপর স্যাংশন দিতে তিনি সহায়তা করেছেন। এমনি কী উনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, পুলিশ, আনসারের নামেও স্যাংশন করাবেন। উনার সাথে জো বাইডেনের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ বার কথা হয়। উনি বিষয়টা দেখছেন বলে জানিয়েছেন।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, এই বক্তব্য প্রদানের ফলে সাথে সাথে দুই নম্বর আসামি সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান সারওয়ার্দী সেটাকে স্বীকার করেছেন এবং উনি যে বক্তব্যটা দিলেন বক্তব্যটাকে সাপোর্ট করেন। উনারা যে কাজটা করলেন এতে দেখা গেলো বিএনপির নেতাকর্মীরা উৎসাহিত হলেন। পরবর্তীতে রাতের বেলা তারা আরও বাসে আগুন লাগালেন। দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করলো।
তিনি বলেন, পরবর্তী পর্যায়ে যখন আমরা জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়দানকারী ব্যক্তিকে ডেকে আনলাম। উনি যে কথাটা বললেন, বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার অঙ্গরাজ্য হয়ে যাবে, হিন্দুস্তান হয়ে যাবে, বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। এগুলো উনি বলতে চান নাই। উনাকে বাসা থেকে নিয়ে আসার সময় আমাদের যে দুই নম্বর আসামি যিনি সাবেক সেনা কর্মকর্তা— এগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন। উনার শিখিয়ে দেওয়ার ফলে তিনি একথাগুলো সেখানে বলেছেন। সাথে সহায়তা করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনও।