সাবেক সংসদ সদস্য পোটনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান (পোটন)

সাবেক সংসদ সদস্য পোটনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ

সরকারিভাবে আমদানি করা ৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানসহ (পোটন) ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রোববার (২৬ নভেম্বর) এ মামলা করা হয়েছে।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রফিকুজ্জামান কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১–এ মামলাটি করেছেন।

মামলার অপর চার আসামি হলেন- কামরুল আশরাফ খানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পোটন ট্রেডার্সের মহাব্যবস্থাপক মো. শাহাদাত হোসেন ও মো. নাজমুল আলম, উত্তরবঙ্গ প্রতিনিধি মো. সোহরাব হোসেন এবং খুলনা প্রতিনিধি মো. আতাউর রহমান।

‘৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ’ শিরোনামে গত জানুয়ারি মাসে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তাতে জানা যায়, সরকারিভাবে আমদানি করা ৭২ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার বন্দর থেকে খালাসের পর গুদামে পৌঁছে না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে পরিবহনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি ৫৮২ কোটি টাকা।

সার আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের মালিক কামরুল আশরাফ খান সার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনেরও (বিএফএ) সভাপতি। এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, তিনিই মূলত দেশে সারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।

জানা যায়, বিদেশ থেকে জাহাজে করে ব্যাগড ইউরিয়া সার আনার পর বন্দর থেকে সরাসরি গুদামে নিয়ে যাওয়া হয়। আর আমদানি করা বাল্ক ইউরিয়া নেওয়া হয় বিভিন্ন সার কারখানায়। দুই ক্ষেত্রেই সার স্থানান্তরের দায়িত্ব পরিবহন ঠিকাদারের। স্থানীয় পরিবহন চুক্তির ৪(বি) ধারা অনুযায়ী ডেলিভারি চালান ইস্যুর পর ৫০ দিনের মধ্যে বাল্ক ইউরিয়া ও ৪০ দিনের মধ্যে ব্যাগড ইউরিয়া সার সংশ্লিষ্ট গুদাম বা কারখানায় সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

৭২ হাজার মেট্রিক টন সার কম পেয়েছে সরকার

সূত্র জানায়, দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে পোটন ট্রেডার্স বিসিআইসির বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত এবং আমদানি করা সার পরিবহনে ঠিকাদারির কাজ করে আসছে। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে এ বছর মে মাস পর্যন্ত মোট ৮টি চালানে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯০০ টন সার পরিবহনের দায়িত্ব পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিটি চালানেই জাহাজ থেকে নামানো পরিমাণের তুলনায় গুদামে পৌঁছেছে ২৯ শতাংশ কম সার। সব মিলিয়ে ৭২ হাজার ৬৮০ টন সার কম পেয়েছে সরকার, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫৮২ কোটি টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর জাহাজ থেকে ৩১ হাজার ৭৪১ টন সার খালাস করে ২৭ হাজার ৬৩৩ টন গুদামে সরবরাহ করে পোটন ট্রেডার্স। বাকি ৪ হাজার ১০৮ টন সারের হদিস নেই। একই বছরের ২৭ নভেম্বর ৩৩ হাজার টন খালাস করে ২২ হাজার ১৫২ টন সার সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। বাকি ১০ হাজার ৮৪৮ টনের হদিস মেলেনি।

চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ২৮ হাজার ৮৯১ টন খালাসের পর গুদামে সার দিয়েছে ১৯ হাজার ৯১ টন। বাকি ৯ হাজার ৮০০ টন সার দেওয়া হয়নি। ১২ জানুয়ারি খালাস করা সারের মধ্যে ২৮ টন সরবরাহ করা হয়নি। ২৬ জানুয়ারি ৩৩ হাজার টন সার জাহাজ থেকে খালাসের পর মাত্র ১৩ হাজার ৯৬৬ টন সরবরাহ করা হয়। বাকি ১৯ হাজার ৩৪ টন সরিয়ে নেওয়া হয়।

২৩ ফেব্রুয়ারি ২৯ হাজার ৮৬৭ টন সার খালাস হলেও পোটন ট্রেডার্স ৩ হাজার ৬৪৯ টন সার কম সরবরাহ করে। সর্বশেষ ১৫ মে ২৯ হাজার ৮২৮ টন সার খালাসের পর বিসিআইসির গুদামে সরবরাহ করে ১৭ হাজার ৬৮৯ টন। বাকি ১২ হাজার ১৩৯ টন সরবরাহ করেনি পোটন ট্রেডার্স।