একই আদেশের বিরুদ্ধে দুই আবেদন, আইনজীবীকে তলব
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

হাইকোর্টে বিরল ঘটনা: মেয়ের রায়ে উঠে এল বাবার রায়ের রেফারেন্স

সাবেক প্রধান বিচারপতি প্রয়াত বদরুল হায়দার চৌধুরী, তিনি দেশের ৫ম প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তার মেয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্তমান বিচারপতি। সরকারি কর্মকর্তাদের অবসরের তিন বছর পার না হওয়া পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রশ্নে রুল খারিজ করে রোববার (৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি নাইমা হায়দারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দেন।

বিচারপতি নাইমা হায়দার রায়টি ঘোষণা করেন। রায়ে তিনি তার বাবা বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীর দেওয়া ‘শেখ আব্দুস সবুর বনাম রিক্রুটিং অফিসার ও অন্যান্য’ শীর্ষক একটি মামলার রায় উদ্ধৃত করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং সংসদ নির্বাচন যে এক নয় তার রেফারেন্স হিসেবে রায়টি ‘উদ্ধৃত’ করা হয়।

এ রায়ের মধ্য দিয়ে আদালতে এক বিরল ঘটনার অবতারণা হয়। একজন বিচারপতি মেয়ে তার বিচারপতি বাবার দেওয়া রায়কে রেফারেন্স হিসেবে উদ্ধৃত করলেন। এটি সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা।

১৯৮৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিচারপতি নাইমা হায়দারের বাবা প্রয়াত বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ একটি রায়টি দিয়েছিলেন। ওই রায়ে বলা হয়, ‘স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি, তবে তাদের সংসদের মতো স্বায়ত্তশাসন নেই। প্রকৃতপক্ষে তাদের ক্ষমতা সংসদের উপর নির্ভরশীল। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন থেকে প্রাপ্ত হয় এবং সেগুলো আল্ট্রা ভাইরাস নীতির সাথে সংগতি রেখে প্রয়োগ করা হয়। এটা সত্য যে সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় কাউন্সিলের সদস্য উভয়ই একই ভোটার দ্বারা নির্বাচিত হয়; কিন্তু তাদের কার্যক্রমের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।’

এই রায়ের রেফারেন্স এখানে উল্লেখ করার কারণ সম্পর্কে আইনজীবীরা বলছেন, রিটকারীরা বারবার বলছিলেন সবার ক্ষেত্রে যেন সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়, সবাই যেন সমভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে… ইত্যাদি। কিন্তু জাতীয় সংসদ আর অন্য প্রতিষ্ঠান যে এক নয় এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর অন্য নির্বাচনগুলো যে এক নয় তা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের রেফারেন্স দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কয়েকটি মামলার রেফারেন্স টেনে পরে আদালত চলমান রিট মামলার রুল খারিজ করে রায় দেন।

এই রায়ের ফলে সামরিক-বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তারা অবসরের পর তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন না।

আদালত রায়ে বলেন, রিটকারীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না পাওয়ায় সমঅধিকার ও মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ও অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত শুনানি করেন।

গত ২৯ নভেম্বর এ বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেয় হয়। শুনানি শেষে বিষয়টি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল।

এর আগে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি রিটটি দায়ের করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল। এ ছাড়া একই ইস্যুতে অবসরে যাওয়া আরো অনেক সরকারি কর্মকর্তা হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আদালত রুল জারি করেন। এবার একত্রে সবগুলো রুলের চূড়ান্ত শুনানি করা হয়।

নির্বাচনে সরকারি চাকরিজীবীদের অযোগ্যতার বিষয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)- ১৯৭২ এর ১২ (১) (চ) ধারায় বলা হয়েছে— প্রজাতন্ত্রের বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের বা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগের কোনো চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন বা অবসরে গমন করেছেন এবং যদি উক্ত পদত্যাগ বা অবসর গমনের পর তিন বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে তাহলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন না।