দুর্ঘটনা, অবহেলাজনিত ক্ষতিসহ মৃত্যু রোধ ও ভিকটিমদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায়ে ‘টর্ট আইন ও বিধি’ প্রণয়ন করার দাবিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আজ সোমবার (২২ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জে আর খান রবিন এ নোটিশ পাঠান।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে টর্ট আইন প্রণয়নের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হবে।
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (আইন ও বিচার বিভাগ), আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ), আইন কমিশনের চেয়ারম্যান, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
নেটিশে বলা হয়, ‘আমি বাংলাদেশের নাগরিক ও সুপ্রিম কোর্টের একজন নিয়মিত আইনজীবী এবং দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে অবগত রয়েছি। তাই সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অনুবলে ক্ষতিপূরণ ও অন্যান বিষয়ে টর্ট আইন প্রয়োগের জন্য বিধি চেয়ে জনস্বার্থে নোটিশ পাঠিয়েছি।’
এতে বলা হয়, ব্রিটিশ আইন টর্টের আওতায় এ বিষয়ে মামলা হলেও ক্ষতি নির্ধারণে কোন নীতিমালা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার উল্লেখযোগ্য হারে উপকৃত হন না। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণ নানাবিধ জটিলতার কারণে এসব বিষয়ে আইনগত প্রতিকার গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছেন। অথচ আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে এমন গুরুত্বপূর্ণ আইনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
সুতরাং অবহেলাজনিত ক্ষতিসহ মৃত্যু রোধ কল্পে ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে এ আইন প্রণয়ন একান্ত আবশ্যক। অতএব, নোটিশ পাওয়ার পর যৌক্তিক সময়ের মধ্যে আমাদের দেশের সমস্যার সঙ্গে সমন্বয় করে টর্ট আইন ও বিধি প্রণয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিশেষ ভাবে বলা হয়েছে।
অন্যায় কাজ বা নিবৃত্তি, মানসিক, আইনগত ক্ষতি, প্রত্যক্ষ ফল, বৈধ সমাধানসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট টর্ট রয়েছে যা নিম্নরূপ:
শরীরে অনধিকার হস্তক্ষেপ (আক্রমণ,আঘাত ও কৃত্রিম বন্দি), বিদ্বেষ প্রসূত মামলা (মিথ্যা মামলা), ভূমিতে অনধিকার প্রবেশ, দ্রব্যাদি সংক্রান্ত টর্ট, মানহানি, অবহেলা, উৎপাত, বিপজ্জনক ভূমি ও ঘরবাড়ির জন্য দায়দায়িত্ব, বিপজ্জনক বস্তুর জন্য দায়দায়িত্ব, ইকোনমিক টর্ট, ষড়যন্ত্র, চুক্তিতে হস্তক্ষেপ, অবৈধ ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা, প্রতারণা, গোপন তথ্য ফাঁস, ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি।
নোটিশে বলা হয়েছে, বর্তমানে আমাদের দেশে টর্টের আওতায় মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়াসহ অবহেলাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এরকম অবহেলাজনিত ক্ষতি বা মৃত্যু সাধারণত গাড়ি চাপায়, বিদ্যুৎস্পষ্টে, ডাক্তারের অবহেলায়, ম্যানহোলে পড়ে, নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট পড়ে, আগুন লেগে, বিল্ডিং ভেঙে সংগঠিত হয়।
কিন্তু দেশে টর্টের জন্য কোন নিদিষ্ট আইন বা নীতিমালা না থাকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ক্রমেই বেড়েই চলছে এবং মানুষের অবহেলাজনিত ক্ষতিসহ মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
উদাহরণ হিসেবে, গাড়ি চাপায় সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মন্টুর মৃত্যু, চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের মৃত্যু, কক্সবাজারের চকরিয়ায় ৬ ভাইয়ের মৃত্যু, অগ্নিকাণ্ডে ইউনাইটেড হাসপাতালসহ নারায়ণগঞ্জ ও চকবাজারের জনগণের মৃত্যু, নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালাম বিনা অপরাধে জেলখাটা, ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে নিহত ও আহত হওয়া, ভুল চিকিৎসায় শিশু আয়ানের মৃত্যু, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যু, বরিশালে বিদ্যুৎ লাইনে জড়িয়ে শিশু জুবায়েরের হাত হারানো, সিলেটে ড্রেনে পড়ে আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের মৃত্যু, মাথায় ইট পড়ে ব্যাংক কর্মকর্তা দিপু সানার মৃত্যু উল্লেখযোগ্য।